click on images to know more about the Images

শিক্ষাঙ্গনে ব্রাহ্মণ্যবাদ, নির্যাতিত মূলনিবাসী শিক্ষাকর্মী মানিক হেমব্রম

Author: News desk

কম্যুনিস্টরা বলতো পশ্চিমবঙ্গে কোন জাতপাত নেই। কোলকাতার সংস্কৃতিবান বাবুরা বলতো এখানে নাকি 'রবীন্দ্র-নজরুল' চলছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মানিক হেমব্রমের সাথে জাতি বৈষম্যের ঘটনা আবার প্রমান করলো যে, পশ্চিমবঙ্গে জাতপাত আছে, এবং, সবথেকে সাঙ্ঘাতিক ভাবে আছে।

"শিক্ষাঙ্গনে ব্রাহ্মণ্যবাদ, নির্যাতিত মূলনিবাসী শিক্ষাকর্মী মানিক হেমব্রম "

 

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রনাথের ব্রাহ্মণ্যবাদী উদারতার ধারাকে অব্যাহত রেখেছে বাঙালি উচ্চবর্ণ সমাজ, অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু, শিক্ষক সুদীপ টুডু-র পর ব্রাহ্মণ্যবাদী নির্যাতনের স্বীকার হলেন মানিক হেমব্রম। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষাকর্মী মানিক হেমব্রমের উপর তার জাত তুলে শারীরিক ও মৌখিক হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তারই সহ শিক্ষাকর্মী ছয় জন। মানিক হেমব্রম গত ৯.১১.২২ তারিখে প্রতিদিনের মতোই তার কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষন পর সহ-কর্মী সঞ্জীব মন্ডল কাজের বাহানা করে তাকে ডেকে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের প্রান্তে, ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর সঞ্জীব মন্ডল সহ আরও পাঁচজন মিলে তার উপর কটুক্তি, জাতি তুলে গালাগাল এবং শারীরিক আঘাত হানার চেষ্টা করে, ধাক্কা ধাক্কও হয় তাদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী মানিক হেমব্রমের "সাঁওতাল-আদিবাসী" পরিচয়ের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য সমেত তাকে 'মাওবাদী' তমকা দেওয়া হয়, তার সেল (মোবাইল) ফোন জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে তার গায়ে হাতও তুলেন ওই ব্রাহ্মণ্যবাদী ছয় শিক্ষাকর্মী। তিনি বলেন, এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪-৫ জন স্থায়ী শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে এইরূপ আচরণ করেছিলেন সেই সমস্ত মস্তিষ্ক।

 

ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারলেই শিক্ষাকর্মী মানিক হেমব্রমের স্ত্রী, শকুন্তলা হেমব্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে আসেন স্বামীর আত্মমার্যাদা রক্ষার্থে। তার অভিযোগ এইরূপ উক্ত ঘটনার আগেও সাক্ষী হয়েছেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার জন্য রাখা পানীয় জলের ভান্ডার থেকে তাকে জল খেতে বারণ করেছিল রাজকুমার ঝাঁ ( মুল অভিযুক্ত), কলের জল খাওয়াই সেই কলের জলে থুতু ফেলেছিল এবং তাকে ছোটলোক বলে গালাগাল দিয়েছিল এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

 

ঘটনার পর শিক্ষাকর্মী মানিক হেমব্রম ও তার স্ত্রী শকুন্তলা হেমব্রম যৌথভাবে সিঁথি পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন। প্রিভেনশন অফ এট্রোসিটিস অ্যাক্ট, ১৯৮৯ এর সেকশন ৩(i),(r),(s) সহ অন্যন্য ফৌজদারি মামলায় এফ. আই. আর করা হয়েছে বলে তারা জানান।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সিপল সব্যসাচী রায়চৌধুরী ঘটনাটির তীব্র নিন্দা করেন এবং অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করেছেন বলে জানিয়েছেন, প্রিন্সিপালের এই পদক্ষেপকে সম্মান জানিয়েছেন মানিক হেমব্রম এবং শকুন্তলা হেমব্রম, তবে তারা অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তি ছাড়া পিছু হাঁটবেন না বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।

 

একদিকে যেখানে দ্রৌপদী মুর্মু দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক মর্যাদার অধিকারী ভিন্নদিকে মানিক হেমব্রমের মতো আদিবাসী পরিচয়ধীন মানুষেরা নুন্যতম আত্মমর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতির জন্য লাঞ্ছিত হচ্ছে অনবরত।

 

একদিকে যেমন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান ও পুরাতন সরকার পশ্চিমবঙ্গে জাতির অস্তিত্ব ও উপস্থিতিকে অস্বীকার করেন, ভিন্নদিকে চুন্নি কোটালের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সম্প্রদায়ভুক্ত জীবনের প্রানের হত্যাও করেছে এখানকার ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রশাসন, সমাজ ও শিক্ষাপ্রাঙ্গণ।