click on images to know more about the Images

এলোকেশীর ভরচাপা

Author: কুমকুম নাইয়া

জৈষ্ঠ্যের দুপুর। মাঝ আকাশ থেকে আগুন ঝরছে যেন। অনাবৃষ্টিতে কাহিল সমস্ত প্রকৃতিই প্রচন্ড রোদের কাছে আত্মসমর্পণ করে কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আছে।

 

 সামনে জ্বলে পুড়ে ফুটিফাটা বাদার মাঝখান দিয়ে তিলপি যাবার রাস্তা ।সে পথ দিয়ে একা হেঁটে চলেছেন পঞ্চানন । 

 

  মাঝ বয়সী পঞ্চানন হালদার তিলপি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। ঐ গ্রামেই তাঁর বাড়ি। আজ ছুটির দিন খুব সকাল সকাল ধোষা হাট গিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় কিছু কাজে। এবং কাজ সারতে বেলাও হয়ে গেল অনেক। গ্রামে ফেরার একমাত্র যানবাহন মোটর ভ্যান তিনি পেলেন না। হাটে দু'একটা মোটর ভ্যান ছিল না তা নয়, কিন্তু কেউই একজনমাত্র যাত্রী নিয়ে তিলপি যেতে রাজি ছিল না। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে রওনা দিলেন পঞ্চানন। 

 

গ্রামের রাস্তা ,ভীষণ খারাপ অবস্থা। কবে কোন যুগে একবারমাত্র পিচ ঢালাই হয়েছিল, সে চিহ্নমাত্র নেই। কেবল ভাঙ্গা ইটের টুকরো গুলো দাঁত খিঁচিয়ে পড়ে রয়েছে সারা রাস্তা জুড়ে। কোনরকম অসাবধানে পা পড়লেই হোঁচট খেয়ে পড়তে হবে মুখ থুবড়ে । তাতে রক্তারক্তি কান্ড বেঁধে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। 

 

পঞ্চাননের মুখ রোদে পুড়ে একেবারে কালি হয়ে উঠলো। কোনরকমে প্রাণটুকু হাতে নিয়েএক ঘন্টার পথ অতিক্রম করে বাড়ি ফিরলেন মাস্টারমশাই। 

 

কিন্তু কোথায় এক গেলাস জল? আর কোথায় ঠান্ডা বাতাস? 

 

বাড়ির উঠোনে একেবারে লোকে লোকারণ্য! 

 

উদ্বিগ্ন মুখে ভিড় ঠেলে এগোতেই দেখলেন তাঁর স্ত্রী এলোকেশীর ভর হচ্ছে !শুনলেন স্বয়ং মা কালী ঠাকুর নাকি এসে ভর করেছে তার স্ত্রীর শরীরে !আর সেকারণে তাঁর বাড়ির উঠোনে এত ভিড়!পড়শীরা এসেছে তাদের নিজেদের ভূত, ভবিষ্যৎ জানতে। সমাধান করতে চায় জীবনের নানান সমস্যার।

 

পঞ্চানন দেখলেন পড়শীদের কারোর হাতে শঙ্খ, কারোর হাতে কাঁশি , কিংবা ঘন্টা! 

 

হয়েত এগুলো বেজে উঠেছিল এলোকেশী ভরের শুরু তে ।তখন তিনি এসে পৌঁছান নি! 

 

পঞ্চাননের মুখখানি এবার লাল হয়ে উঠলো। 

 

বেড়ার রান্নাঘরের ফাঁক দিয়ে দেখে বুঝলেন তখনও রান্না হয়নি। 

 

উঠোনের কোণে পড়েছিল মুড়ো ঝাঁটা। শক্ত মুঠোতে ধরে স্ত্রীর পিঠে বসিয়ে দিলেন পঞ্চানন। চিৎকার করে বললেন, -"ঘর করবি ,নাকি ভর করবি বল? "

 

মূহুর্তে উঠোন ফাঁকা হয়ে গেলো। এলোকেশী ছুটলেন রান্না ঘরে ভাত রাঁধতে। 

 

           সমাপ্ত

 

১৫/ ১১/২০২৩