click on images to know more about the Images

কৈলাস থেকে কলকাতা

Author: নলিনী রঞ্জন মন্ডল

(কৌতুক মঞ্চ নাটকের একাংশ)

(শঙ্করের বাড়ির সামনে মহিষ মুগুর ভেঁজে শরীর চর্চা করছে। এমন সময় গণা আসে ) 

 

গণাঃ- এবার বুঝেছি মহিষদা, কেন তোমার শরীর পাথরের মত এত শক্ত। 

 

মহিষঃ- (থেমে) শোনো। দাদা নয়, তোমরা আমাকে কাকা বলে ডাকবে। 

 

গণাঃ- কেন? 

 

মহিষঃ- কেন মানে? তোমার বাবা আমার দেশওয়ালী দাদা, তাই। এবার বল- কি বলছিলে? 

 

গণাঃ- বলছিলাম- তোমার মুগুর ভাঁজা নিয়ে। 

 

মহিষঃ- শরীরচর্চা তো করতেই হবে। তা না হলে তোমার মত জলচৌকিতে বসে থালা থালা মণ্ডামিঠাই খেলে হজম হবে? 

 

গণাঃ- আমি শুধু একা খাই? তুমিও তো মোষের মত খাও। 

 

মহিষঃ- খেলেও আমি মুগুরের সঙ্গে কুস্তি করি, তোমার মত ভুঁড়িওয়ালা হতে চাই না। 

 

গণাঃ- (চিন্তা) তা ঠিক। আমাদের প্রায় সময় মর্তে যেতে হয়। ওখানকার মানুষদের যেভাবে প্রেশার, সুগার হচ্ছে তার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়। 

 

মহিষঃ- তোমাদের আবার চিন্তা কিসের? তোমরা তো জরা, মৃত্যুহীন কৈলাসে থাকো। 

 

গণাঃ- থাকলেও বা! আমাদের সারা বছরের খাবার তো সেই কলকাতা থেকে আসে। ওই কলকাতার ভেজাল খাবার খেয়ে যদি -

 

(শ্বেতা আসে) 

 

শ্বেতাঃ- তোর যদি এত ভয় তাহলে থালা থালা খাস কেন? 

 

গণাঃ- কি করব! ব্যবসাদাররা কিছুতেই ছাড়ে না যে! 

 

শ্বেতাঃ- আহা! কি আদুরে কথা! ছাড়ে না বললেই হলো? 

 

গণাঃ- বা রে! ভক্তরা যদি ভালবেসে দেয় তো কি করবো?

 

শ্বেতাঃ- ভালবাসে না ছাই। ওরা তোর-আমার মাথায় কাঁঠাল রেখে কোয়া বের করে খাওয়া মানুষ। 

 

গণাঃ- কেন ওদের অনর্থক বদনাম দিচ্ছিস? 

 

শ্বেতাঃ- চালে ডালে ভেজাল মিশিয়ে হরদম কালো টাকার পাহাড় তৈরি করছে। আর তোর মত ভুঁড়ি বানিয়ে গদিতে বসে আছে। এগুলো অনর্থক? 

 

মহিষঃ- সত্যি কথা বলতে কি- তোমরা হলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মত। ওই ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষদের রক্ত চুষতে তোমাদের মণ্ডামিঠাই খাওয়াচ্ছে আর তোমরাও সেই ঘুষ খেয়ে নির্লিপ্তের মত চোখ বন্ধ করে আছো। 

 

শ্বেতাঃ- মহিষকাকা ঠিকই বলেছে। ঘুষ না খেয়ে তুই যদি ওদের কড়া হাতে দমন করতিস-

 

গণাঃ- ব্যবসায়ীরা না হয় আমার অধীনে কিন্তু সরকারি চাকুরে, মাস্টার, ডাক্তার, উকিল এরা কার শিক্ষা শিক্ষিত? নিজ কর্তব্যের তোয়াক্কা না করে দু'নম্বরী ব্যবসায় মেতে থাকে। এর জন্য দায়ী কে? 

 

শ্বেতাঃ- (অবাক হয়ে) আশ্চর্য! এর জন্য তুই আমাকে-

 

গণাঃ- তোকে ছাড়া কাকে বলবো? তুই তো ছোট থেকে ওদের চুরি বিদ্যায় হাতে খড়ি দিয়ে পারদর্শী করে আমার কাছে পাঠাচ্ছিস। ওরা মুখে "বিদ্যা দে মা বিদ্যা দে মা" বলে কাতর হয়ে ডাকে আর অন্তরে অবাধে পরীক্ষার খাতায় টুকলি করে। আর তাতেই তুই সন্তুষ্ট। কাউকে কোনদিন শাসন করিস না। তাহলে চুরির মদত কে দিচ্ছে?  

 

(গৌরী আসে) 

 

গৌরীঃ- তোদের কি হয়েছে বলতো? সেই তখন থেকে গজগজ করছিস! 

 

শ্বেতাঃ- মা, তুমি বলো- আমি বছরে ক'বার বাংলায় যাই? তোমার সঙ্গে, আর সেই শ্রীপঞ্চমীতে, এতে কত ঘুষ খেতে পারি? আর গনা-রমা ওরা তো সারা বছর ধরে ভারতবর্ষ চুষে খাচ্ছে। 

 

(রমা আসে) 

 

রমাঃ- এই! তুই আমার নামে কি বলছিস রে? 

 

শ্বেতাঃ- (বিরক্ত হয়ে) তোর মুন্ডু আর আমার মাথা! হুঃ! (মুখ বেঁকিয়ে চলে যায়) 

 

রমাঃ- কি হলো মা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না। 

 

গৌরীঃ- ফালতু ঝামেলা বুঝে লাভ নেই। যা, সব গোছগাছ করে ফেল। কাল ভোরে বেরোতে হবে। 

 

রমাঃ- মা। আমরা কিভাবে যাবো? 

 

মহিষঃ- তোমার মামাকে বলো না- এ বছর প্লেনে নিয়ে যাক। 

 

রমাঃ- হ্যাঁ। মহিষকাকা ঠিক বলেছে। 

 

গৌরীঃ- অত নাচানাচি করিস না তো! পুজোতে ওদের কত খরচ! খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়-স্বজন, জামা-কাপড়। তার উপর এ চাপটা না দিলে হয় না? 

 

রমাঃ- (অভিমানে) তুমি শুধু তোমার ভাইদের কথা ভাবো! ওরা তো প্লেনে, ট্রেনে, জাহাজে কত ঘোরাঘুরি করে! আর তোমার বেলায় সেই হাতি, নৌকা, দোলা। অন্তত একবার তো প্লেনে চড়াতে পারে! 

 

গৌরীঃ- তুই থামবি? আলতু ফালতু বায়নায় জ্বালিয়ে মারে! 

 

মহিষঃ- দাঁড়াও। রাগারাগি করো না। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে। 

 

রমা ও গণাঃ- (উৎফুল্ল হয়ে ) প্লান? কি প্লান এসেছে- বলো! 

 

মহিষঃ- বিজ্ঞানীরা তো অহরহ মহাকাশে যাতায়াত করছে। ওদের বললে হয়- পুজোর সময় আমাদের একটু প্লেনে তুলে কলকাতায় নামিয়ে দিতে।

 

রমাঃ- (উৎফুল্ল হয়ে ) জানো মা, এই কথাটা একবার সুনিতা উইলিয়ামকে বলেছিলাম। 

 

মহিষঃ- তাই? তা সুনিতা কি বললো?  

 

রমাঃ- কি আর বলবে? মেয়ে মানুষ তো! বললো- বাজে কাজে নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। 

 

গৌরীঃ- পুজোর জন্য যাবো, সেটাকে বাজে ভাবলো? 

 

মহিষঃ- ভাববে তো! ও এখন ভারতীয় নয়, সাহেব দেশের মানুষ। ওরা এগুলোকে কুসংস্কার ভাবে। 

 

রমাঃ- কুসংস্কার! এ যদি কুসংস্কার হবে তাহলে ভারতীয়রা মানে কেন? 

 

গৌরীঃ- ওরা না মানলে তোদের পেট চলবে কী করে? 

 

মহিষঃ- সবই দু'নম্বরি ব্যাপার। এ দেশটা ভুল আর অন্যায়ের ভীতে দাঁড়িয়ে। 

 

গৌরীঃ- মহিষ! তুই থাম না! কেন পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে মনের কলুষতা বাড়াস? যে ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে তাকে কেন খোঁচাচ্ছিস? এতে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবি না। 

 

রমাঃ- কি চাপা পড়ে গেছে মা? 

 

গৌরীঃ- এসব তোদের শোনার দরকার নেই। 

 

রমাঃ- আমার শুনতে ইচ্ছা করছে, তুমি বলো মা, শুনবো। 

 

গৌরীঃ-(বিরক্ত হয়ে ) ওরে বাবা সবকিছু শুনতে হবে? যখন আর্য প্রাগার্যদের যুদ্ধ হয়, তখন আমি আর্যদের সহযোগিতা করেছিলাম। তাতে প্রাগার্য মানে এই মহিষদের পরাজয় হয়। তাই মহিষ মাঝে মাঝে ক্ষোভ উগরে দেয়। 

 

মহিষঃ- মানসিক ক্ষতের জ্বালায় যদি মাঝে মাঝে ক্ষোভ উগরে ওঠে তো অন্যায় কি ? 

 

গৌরীঃ- আহা! বলছি তো- অন্যায় তোর নয়, আমার। তাই তার মাশুল দিতে তোকে আমার সঙ্গে রেখেছি, যাতে আমার মত তুইও ভারতবাসীর পুজো পাস। 

 

মহিষঃ- পুজো না ছাই! বরং আর্যদের নির্দেশে প্রায় সব ভারতবাসী আমার বংশধরদের ঘৃণা করে। যদি ওরা আমাকে সত্যিকারের পুজো করতো তাহলে আমার নামে মন্দির কই? তোমাদের মত কেন আমাকে আলাদা করে পূজা করে না? 

 

রমাঃ- মহিষ কাকা তো ঠিকই বলেছে মা! এটা কিন্তু অন্যায়। 

 

গৌরীঃ- (মহিষের পিঠে হাত দিয়ে ) দুঃখ করিস না মহিষ। পুরনো কথা ভুলে যা। আমি যতদিন আছি, ততদিন আমার সঙ্গে তোকে রাখবো। যা। কাল ভোরে বেরোতে হবে। তোর সাজ পোশাক গুছিয়ে নে। (ঠেলে মহিষকে পাঠিয়ে দেয়। তারপর শ্বেতাকে বলে ) শোন, সব সময় মহিষের কথায় সায় দিবি না ! 

 

(মঞ্চের আলো নিভে যায় )

 

-- -- -- শেষ -- -- -- 

 

নলিনী রঞ্জন মণ্ডল 

১৮-১১-২০২৩