click on images to know more about the Images

কৈলাস থেকে কলকাতা (কৌতুক নাটক) প্রথম পর্ব

Author: নলিনী রঞ্জন মন্ডল

চরিত্র ঃ-

শংকর- কৈলাস পতি। 

গণা ও কাতু- শংকর পুত্রদ্বয়।  

মহিষ- কৈলাসাশ্রিত। 

গোবরাঃ- কলকাতাবাসি। 

কেষ্ট- ক্লাব সেক্রেটার। 

নেড়া, ঘোতনা ও কেলো- ক্লাব সদস্য। 

সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান। 

 

গৌরী- শংকরের স্ত্রী। 

শ্বেতা ও রমা- গৌরী কন্যাদ্বয়। 

মানোদা- গৌরীর মা। 

 

- এক -

 

(কৈলাস। গৌরী ও শংকর কথা বলতে বলতে মঞ্চে আসে )

 

শংকরঃ- (বিরক্ত হয়ে ) নারে মুশকিল ! আমার কথাটা একবার শুনবে তো ! 

 

গৌরীঃ- শোনাশুনির কিচ্ছু নেই। তোমাকে নিয়ে যাব না। ব্যাস। 

 

শংকরঃ- এই তোমার শেষ কথা ? 

 

গৌরীঃ- হ্যাঁ। 

 

শংকরঃ- ঠিক আছে। আমি নন্দী ভৃঙ্গিকে দিয়ে কলকাতার সব পূজা প্যান্ডেল ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছি। 

 

(গোবরা দৌড়ে আসে )

 

গোবরাঃ- জামাইবাবু-জামাইবাবু ! খবরদার ওই কাজটা করবেন না। বাচ্চারা নতুন জামা জুতো কিনে কত আশা করে বসে আছে, যুবক-যুবতীরা গোপন আশায় টগবগে ঘোড়ার মতো ফুটছে, প্রবাসীরা বিমান ধরতে পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে বন্দরে অপেক্ষা করছে, আর এখন যদি আপনি রেগে উঠে সব ভণ্ডুল করে দেন তো কি হবে ? 

 

শংকরঃ- বাবা ! সামান্য পুজোর জন্য এমন 

অবস্থা ? 

 

গোবরাঃ- শুধু ওতেই শেষ নয় ! কলকাতার গলি-ঘুঁজিতে ওরা দিনরাত চুরি-কাঁচিতে শান দিচ্ছে। 

 

শংকরঃ- ছুরি-কাঁচিতে শান দিচ্ছে ! কারা ? 

 

গোবরাঃ- চোর, ছিনতাইবাজ, গাঁটকাটারা । 

 

শংকরঃ- কেন ? 

 

গৌরীঃ- পুজোয় কলকাতায় গেলে আগে তোমার ওই মেজলার মতো ভুড়িটা ফাঁসিয়ে দেবে বলে। 

 

শংকরঃ- (আতঙ্কিত হয়ে) এই গৌরী, তুমি একি বলছো ? 

 

গৌরীঃ- ঠিকই বলছি। খুপরিতে কিচ্ছু নেই ! শুধু শুকনো ঘুঁটে। গোবরা, একটু দেশলাই ঠুকে দে। দেখবি- দপ করে জ্বলে উঠবে। 

 

গোবরাঃ- (হেসে) না-না জামাইবাবু। আপনার কোন ভয় নেই। ওদের টার্গেট শুধু ওই পয়সাওয়ালাদের উপর। আপনি ভিখারি মানুষ। আপনার আবার ভয় কী ? 

 

গৌরীঃ- গোবরা। তুই যতই সান্ত্বনা দিস, আমি কিন্তু এই প্রাগার্য দেবতাকে নিয়ে যাবো না। 

 

শংকরঃ- দেখলে ভায়া, তোমার দিদি কেমন জাত তুলে কথা বলে ? এবার যদি আমি রেগে যাই-

 

গোবরাঃ- (বাধা দেয়) এই না-না ! (গৌরীকে) দিদি, তুই মিছিমিছি জামাইবাবুর সঙ্গে- 

 

গৌরীঃ- মিছিমিছি ? কান খুলে শুনে রাখ, তোর গাঁজাখোর জামাইবাবুকে নিয়ে গিয়ে আমি অসম্মানিত হতে পারবো না। (দম্ভ ভরে চলে যায়)

 

গোবরাঃ- (চাপা স্বরে) আপনি চুপচাপ থাকুন। আমি সব ব্যবস্থা করছি। আপনি না গেলে মা তো স্বস্তি পাবে না। জামাই বলে কথা ! 

 

শংকরঃ- (খুশি হয়ে গোবরার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে) শালাবাবু ! আমার আদরের শালাবাবু ! 

 

গোবরাঃ- (আহ্লাদিত হয়ে) এবার কিন্তু আমার একটা আব্দার রাখতে হবে। 

 

শংকরঃ- আরে তুমি তো আমার শালাবাবু ! তোমার আব্দার রাখবো না ! বলো- কি তোমার আব্দার ? 

 

গোবরাঃ- আগে অনেকবার বলতে চেয়েও সাহস হয়নি। আজ আর না বলে পারছি না। 

 

শংকরঃ- আরে বলোনা ছাই- কি বলবে ? অত ধামাই-পানাই করছো কেন ? 

 

গোবরাঃ- (তটস্থ হয়ে) আচ্ছা-আচ্ছা, বলছি- এই স্বর্গরাজ্যটা আমাকে একবার ঘুরিয়ে দেখাবেন ? 

 

শংকরঃ- আবার স্বর্গরাজ্যের দিকে নজর কেন ? কৈলাস পর্যন্ত এসেছে- এই যথেষ্ট। এর বেশি-

 

গোবরাঃ- না-না, আমি কোনো কথা শুনবো না। আমাকে দেখাতেই হবে। স্বর্গ কেমন- পৃথিবীর মানুষ জানে না। আমার যখন সুযোগ আছে, তখন কেন দেখবো না ? 

 

শংকরঃ- না ভাই, ওই আব্দারটা করো না। তবে তুমি যদি রাজি হও তো আমার ভক্তদের বলে তোমাকে একটা বড় কন্টাক্ট পাইয়ে দিতে পারি, প্রচুর পয়সা আয় করতে পারবে। 

 

গোবরাঃ- (মুখ শুকিয়ে) কন্ট্রাক্ট ! কিসের কন্ট্রাক ? 

 

শংকরঃ- স্বর্গের সিঁড়ি বানাতে হবে। এ কাজটা রাবণ রাজা করবো-করবো করে আর করে উঠতে পারে নি। 

গোবরাঃ- (আদুরে স্বরে) না জামাইবাবু, ওসব কাজে ফাঁসিয়ে দেবেন না। কন্ট্রাক্টরিতে অনেক হ্যাপা। 

 

শংকরঃ- হোক না হ্যাপা ! একটু সহ্য করে যদি কলকাতা থেকে সিঁড়িটা তুলতে পারো তাহলে পৃথিবীতে তোমাদের সম্মান ছড়িয়ে পড়বে, কলকাতার সুনামও বাড়বে। 

 

গোবরাঃ- চারদিকে যেভাবে ব্রিজ ভেঙে পড়ছে, এটাও যদি ঐ ব্রিজের মত ভেঙে পড়ে ? 

 

শংকরঃ- আহা ভাঙ্গবে কেন ? বেশি টাকা মারার ধান্ধা না করে ভালো মাল-মসলা দিয়ে বানালে-

 

গোবরাঃ- ভালো মাল-মসলা দেব কি করে ! থানা- পুলিশ, অফিসার-মস্তান, সবাইকে যদি কমিশন দিতে হয়- । না-না জামাইবাবু, সব ছাড়ুন । আমার একান্ত ইচ্ছা- দেবরাজ ইন্দ্রের নাচমহলটা দেখবো। শুনেছি ওখানকার ঊর্বশীরা নাকি খুব সুন্দরী। একবার চোখ ভরে দেখতে চাই। 

 

শংকরঃ- অ। তা তুমি তো বিয়ে করো নি। উর্বশীদের কি দেখবে ? তাছাড়া ওরা সব বুড়ি হয়ে গেছে। 

 

গোবরাঃ- মিথ্যা কথা বলবেন না তো ! চির বসন্তের দেশে কেউ কখনো বুড়ি হয় ? 

 

শংকরঃ- (বিরক্ত হয়ে) তুমি ভীষণ নাছোড়বান্দা ! ঠিক আছে। দেখছি কি করতে পারি। (চিন্তা করে) যদিও বা নিয়ে যাই, তাহলে তোমার মুখে কিন্তু চুনকালি মারতে হবে। 

 

গোবরাঃ- (নাক সিটকে) এ রাম ! মেয়েদের সামনে চুলকালি মেখে যাবো ! 

 

শংকরঃ- উপায় নেই। সবাইকে বুঝিয়ে তো বলতে পারব যে এ আমার ভুল বাহিনীর সদস্য। 

 

গৌরীঃ- (বাইরে থেকে) এই গোবরা, তোদের কথা শেষ হলো ? সময় নষ্ট করছিস কেন ? চলে আয়। 

 

গোবরাঃ- হ্যাঁ যাই। চলুন, দিদি ডাকছে

। পরে কথা হবে। (দুজনে চলে যেতে থাকে। মঞ্চের আলো নিভে আসে )

 

(ক্রমশঃ প্রকাশ্য)