click on images to know more about the Images
একটা গৃহস্থ ঘর। ঘরে এক রকম মোটা ভাত কাপড়ের অভাব নাই বলাই যায় । গৃহস্থের ছেলে বলতে একটায় সাত রাজার ধন এক মানিক । সময় মতো ছেলের বিয়েও দিয়েছে। কিন্তু গৃহস্থের গৃহিনীর মনের মতুন পুত্রবধূ হয়নি । মনে মনে গৃহকর্ত্রী মানে শাশড়ি, শুধু প্রায় প্রকাশ্যেই বলতে শুনা যেত বউটা আমার মনের মতুন হলনা । হ্যাঁ আর এই কথাটা মনে মনে ধীয়ান করতো আর মনে মনে বধূর উপর বিষাতেই থাকত প্রায় সব সময়েই। পুত্রবধূরও শাশড়ির চলন রীত এবং ব্যবহার দেখে পোষাতনা । শাশড়ি পুত্রবধূর মধ্যে এই নিয়ে একটা বিষ বিষ ভাব চরমে থাকত। পড়শী গৃহস্থ ঘরে দু এক বছর কম বেশি সমবয়সের দুটো বউ ছিল। বড় বউটা হল শ্যামবরণ আর ছোটো বউটা রংএ ফর্সায় কোনো ত্রুটি নেই বললে কোনো অতুক্তি হয় না। বড় বউ কাজে কর্মে খুব পটু কোনো আলসামো বলে কোনো জিনিস ছিলনা । কাজ ছাড়া কিচ্ছুই আর বুঝতনা। সৎ কাজ কর্ম সৎ ভাবনা সৎ মন আর কাজের সময় কাজ । এ ছাড়া পাড়ার কোনো মেয়ের সঙ্গে কোনো ভালো মন্দ কথা বা আলোচনা সমালচনা করতে অভ্যাস্ত ছিলনা। ছোটো বউ সম্পূর্ণ উল্টোটা ছিল । মনের মধ্যে সব সমই গরল। মুখটা সব সময় বিষ বিষিয়ে থাকত । হাটলে বাড়ি ঘর যেন দুম দুম করে কাপত। কাজ করার কোনো বালাই ছিলনা। যেনো রূপের ছটকে অহঙ্কারে মাটিতে পায়েই পড়ত না । যেন আপন গৌরবেই পাগল । সব সময় সাজ গোজ করে বসে থাকত এক্কেবারে ফিটফাট । যেনো পটের বিবি। কথা বার্তায় কিন্তু খুব মুখ মিষ্টি কিন্তু উল্টো কথা আর কূটনীতিতে ভরা । তবে ওর মুখ মিষ্টিতে কেউ ধরতে পারতনা । ও একটা কূটনীতিতে একশেষ মেয়ে বললে বিশেষ ভুল বলা হয় না । মুখে খুব মিষ্টি রস বলাই যায় । পড়শীর সেই শাশড়ি পুত্রবধূর অমিল চলতেই ছিল । পড়শীর গৃহস্থের বউটার ঐ পটের বিবি কাছে যাওয়া আসায় ছেদ পড়তনা হরদিন। এসেই শাশড়ীর সম্পর্কে অনেক রকম জ্বালা যন্ত্রনার কথা পটের বিবিকে বলত প্রায়েই । পড়শী বউটা চলেগেলে ঐ বউএর শাশড়ি সমন্ধে কথা গুলি ইনিয়ে বিনিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মনে মনে এঁকে রাখত । পড়শী বউ চলে গেলে ফাঁক বুঝে পড়শী শাশড়ী পটের বিবির নিকট আসত । পটের বিবিরতো কোনো কাজ কর্ম নেই। ওর নিকট যে আসত তার সঙ্গেই কাউরো না কাউরো দুর্নাম বদনাম গেয়ে গেয়ে আপঠি ঠুকত। পড়শী শাশড়ীও ফুপিয়ে থাকত যেমনি পুত্রবধূ পটের বিবির নিকট থেকে বেরিয়ে এলেই ফাঁক বুঝিে পটের বিবির কাছে গিয়ে পুত্রবধূ, শাশুড়ি সমন্ধে কি কি দুর্নাম করেছে শুনবে বলে । পড়শী শাশড়ি এসেই বলে যে, পুত্রবধূ তার সম্পর্কে কি কি দুর্নাম করে গেল সেইগুলা বলতে বলে। ফাঁক বুঝে এসেই বলে যে " আমার সম্পর্কে কি কি দুর্নাম আর কি কি কথা লাগিয়ে গেলগো ছোটকি, ঐ ছায়পুড়ির বেটিটা ?" শাশড়ি এলেই মোকা পেয়ে পড়শী শাশড়ীকে ওর পুত্রবধূ যা যা বলেছে সেগুলাও বলে আর যেগুলা যে কথা বলেনি সেই গুলোও উল্টো করে বলথে থাকে । শাশড়ি, পুত্রবধূর উপর আরও রেগে যায়। এভাবেই পটের বিবি পড়শী শাশড়ী এলেই পুত্রবধূর কথা ইনিয়ে বিনিময়ে বলতো আর পুত্রবধূ এলে শাশড়ির কথা ইনিয়ে বিনিয়ে মিথ্যা করে বলতে থাকল । দুজনকেই সাবধান করে দিত। পুত্রবধূকে বলত যে "দেখো তুমি আমার বোনের মতো তাই তোমাকে তোমার শাশড়ীর সম্পর্কে সত্যি কথা গুলো বলছি। সেই কথা গুলা তুই আবার পেট ফেকনির মতুন তোর শাশড়িকে আমার বলা সত্যি সত্যি কথা গুলো ভজাভজি করিসনা। তাহলে আর তোর শাশড়ী অমাকে কোনো কথাই আর বলবে না ।" আবার সেই ভাবেই শাশড়িকে বলতো যে, " দেখেন আপনি আমার মায়ের মতো তাই আপনার পুত্রবধূর বলা সত্যি সত্যি কথা গুলো বলেদি। কথা গুলো আবার আপনার পুত্রবধূর সঙ্গে ভজাভজি করবেননা । " এই ভাবেই পড়শী শাশড়ী আর পুত্রবধূকে মাতিয়ে তুলতো আর নিত্য দিনরাত শাশড়ী পুত্রবধূর মধ্যে পাহা পাটি ঝগড়া লেগে থাকতো । এই ঝগড়া দেখে মজা করানী পটের বিবি মনে মনে খুব মুচকি মুচকি হাসত আর মজা দেখত ।
কালো বউ বড়কি কাজ কর্মের তালে তালে জা পটের বিবির আর শাশড়ি পুত্রবধূর সব কথা শুনে শুনে খুব পস্তাত আর কষ্ট পেত যে এই কুড়ের কূটনীতিতে যত্ত সব অশান্তি পড়শী ঘরে । বড় বউ সব সময় কাজে মেতে থাকে ওর কাউরো সঙ্গে গল্প গুজব করার ফুসরত ছিল না । তাছাড়া কালো বউ এমনিতে কালো আর নগদা নগদি কথা তার উপর আবার কাজে কর্মের মধ্যে ছিরিবিরি হয়ে উসকো খুসকো হয়ে থাকত । বড় বউ এর সঙ্গে কে করবে গল্প, আর কে বা মারবে আড্ডা। যেনো ঘরের কাজ কর্ম করার কলের ঝি মাত্র । ছোটো বউ এর চেহারা ভালো তাই যত্ত আদর ভক্তি ছোটো বউ এর উপর । তার পরে আবার বড় কথা হল ছোটো বউএর বর হল চাকুরিয়া । তেলা মাথাতে সকলেই তেল মাখায় এটাই অবক্ষয় সংসারের রীতি ।
একদিন পটের বিবি গেল বাপের বাড়ি । এই সংবাদ পড়শী শাশড়ী ও পড়শী বউকে বলে যেতে ভুলে যায় । পরেরদিন পড়শী শাশড়ি এসে পটের বিবিকে দেখা পাওয়ার জন্য টুকলি ঝুকলি মেরে মনে মনে খুজে বেড়াই । বড় বউ তাকে দেখেই বুঝতে বাকি থাকেনা যে পটের বিবিকে খুজছে । তখনি বড় বউ ভাবল যে এদের শাশড়ী বউ এর ঝামেলা মন কষাকষি দূর করার আজকে একটা বড় সুযোগ। তাদের শাশড়ী বউএর অশান্তির ঘরের শাশড়ী বউ এর ঝামেলা মিটিয়ে তাদের ঘরে শান্তি আনতে না হয় দুটো মিথ্যা কথা বলবই বা । পড়শী শাশুড়ীকে টুকলি ঝুকলি দিতে দেখেই বড় বউ বলল যে, " বসেন মা ছোটকি বাবার বাড়ি গিয়েছে ।" শাশড়ী আমতা অামতা করে বলল যে , " তাহলে ছোটো বউ নাই যখন বাড়ির দিকে যায় । ছাই পুড়ির বিটিটা আবার অগ্নি মূর্তি ধরবে যে, একটু ফাঁক যেই পেয়েছে আর পাড়া টহলে বেরিয়ে গেছে "। কালো বউ বলল যে ," যাবেন কেনো মা , আমি কি আপনার মেয়ের মতো হতে পারিনা শুধু কি ছোটকিই হতে পারে। সব কথা বলেন না কেনো দুই কান হবে না বলতে পারি।" শাশুড়ির কথা বলার ইচ্ছা না থাকলেও অগত্য পুত্রবধূর কথা না শুনে গেলে পেটের ভাত আর হজম হবেনা। শাশুড়ী পুত্রবধূর বলা নিজের সমন্ধে দুর্নাম না শুনা পর্যন্ত । কালো বউ আজ ফাঁক পেয়ে শাশুড়িকে ধরে বলল যে, "শুনেন মা আপনাদের ঘরে শাশড়ী বউ এর বিবাদের মূলে আছে আমাদের ছোটকি। আপনার বউমা এসে কালকে বলে গেল যে, "আমি যদি শাশুড়ীর নিজের মেয়ের মতো হতাম তাহলে শাশড়ী কি আমার দোষ বা ঘাট ধরে, এই রকম গালাগালি করতে পারত!" এ সব বলে আর চোখ ভরা জল ফেলতে ফেলতে কান্নাকাটি করতে করতে বাড়ি গেল "। পড়শী শাশড়ী বলল যে,"তাই নাকিগো চোমতির মা আমিতো তাহালে ছোটো বউ এর তালবাজিতে খুব ভুল বুঝেছি । "
পড়শী শাশড়ির যেতে দেরিতো পড়শী বউ এর আসতে দেরি হল না । এসেই ছোটো বউ এর সঙ্গে দেখা করার জন্য এদিক ওদিক টুকলি ঝুকলি মারছে । মতলব বুঝতে কালো বউ এর দেরি হলনা । কালো বউ সরাসরি বলল যে, " ছোটো বউএর খোজ করে লাভ নেই । ও বাবার বাড়ি গিয়েছে ।" অমনি পড়শী বউ আমতা আমতা করে বনক করে ঘুরে বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য উদ্যত হল। ভাব বুঝে কালো বউ বলল যে," ছোটকি নাইতো কি হয়েছে আমিতো আছি । আমি কি তোর দিদির মতো হতে পারি না ? বস নাগে ফুলকি। এখনিই তোর শাশুড়ী গল্প সল্প করে গেল আমার সঙ্গে । " অমনি পড়শী বউ আকলি বিকলি করে ধরে বলল যে , "আমার সম্পর্কে শাশড়ি কি কি দুর্নাম করে গেলো । " " তাই নাকিগো দিদি কি কি বলেছে, বলতো শুনি কি কি দুর্নাম করে গেল ঐ নাগনী ঢুড্ডি বুড়িটা (যদিও বুড়ি হয়নি) । " বড় বউ বলল যে , " শাশড়ীকে অত খারাপ ভাবিস কেন ? যা যা বলেছে শুন তবে।" তোমার শাশড়ী বলে গেল যে, "আমাদের বউটা খুব সহনশীল আছে । আমার একটু বয়স হয়েছে মাথা ঠিক ঠাক রাখতে পারিনা। কি বলতে কি বলি। আমি যদি ওর নিজের মায়েই হতাম তাহালে কি সহ্য করতে হত না। আমি মাথা খারাপ মানুষ আমার সব কথা ধরা কি ঠিক হয় । আমি না হয় ওর মায়ের মতই হলাম। " পড়শী বউ বলল যে, " এটা আপনার মিথ্যা কথা হচ্ছে , এ রকম কথা বলেইনি ।" কালো বউ বলল তবে শুনেন, আপনার বৌমা কোনোদিনিই আপনার সম্পর্কে দুর্নাম করেইনি । ঐ ছোটকি আপনাদের মধ্যে কথাগুলো , কোনোটা বলা কথা,কোনোটা না বলা কথা আপদের মধ্যে উলট পালট করে লাগায় । আপনাদের দুই জনের বলা কথা গুলো উলট পালট করে গড়ন পিঠন করে আপনাদের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে দূর থেকে মুচকি মুচকি হাসে । এই গড়ন পিঠনের কথা বিশ্বাস করো আর করেন নাই করেন ,আমি নিজের কানে শুনেছি ছোটকিকে আপনাদের বলা কথা গুলো উলট পালট করে বলতে। এই যে আমার ছেলের মাথায় হাত দিয়ে কিরে কেটে বলছি ।" শাশড়ী বউ খুব ধন্দে পড়ে গেল! কালো বউ শাশড়ী আর পড়শী বউ পরস্পরকে এই ভাবেই কথা গুলো বুঝিয়ে বলল। পড়শী বউ ভাবল তাহলেতো ছোটকির এই তালবাজির কথা বিশ্বাস করে শাশড়ীকে কতই ন্য খারাপ খারাপ কথা বলেছি । কতই না গালমন্দ করেছি । বড় বউ বলল যে , আগে ছোটো বউএর তালে পড়ে শাশড়ীর সঙ্গে যা যা করেছিস, তা তা এখন থেকে ঠিকঠাক করে চল। আর ঐসব কথা মনে করে শুধুই ব্যাথা পাবি। পড়শী বউ মনে মনে বলল যে, " তাইতো তাইতো ।"
পড়শী বউ তৎক্ষণাৎ বাড়ি গিয়েই দেখল যে শাশড়ী পালাঙ্গায় ঝাড়ু দিচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে শাশড়ীর হাত থেকে ঝাটাটা কেড়ে নিল। শাশড়িকে বলল যে, " মা আপনি বসেন আমি ঝাড়ু দিচ্ছি । " শাশড়ী বলল যে, " আরতো বেশি ঝাড় দিতে নেই । বাদবাকি আমিই দিয়ে দিচ্ছি। শাশড়ি মনে মনে ভাবল যে, আজ কোন দিকে সূর্য উঠেছে ? পুত্র বধূর এত সুমতি এল কি করে ? পুত্রবধূ কি সত্য সত্য বলেছে ! । শাশড়ী কি করবে আর কি করবে না আনন্দে, ঠিক করতে পারছে না। ভেবেচিন্তে চা করে এনে পুত্রবধূর সামনে গিয়ে বলল যে, " বৌ মা একটু চা খেয়ে নাও কতক্ষন থেকে ঝাড়ু দিচ্ছ ।" বউ ভাবল শাশড়ীর পেটে কালো বউএর নিকটের সত্য সত্য কথাগুলো নিশ্চয় অন্তরে লেগেছে । পুত্রবধূও শাশড়ী মাথার চুল বিলি দিতে এক রকম জোর করে বসালো । শাশড়ীও স্নান করার বেলা পার হয়েগেল বলে পুত্রবধূকে বকাবকি করে এবং ধরা ধরি করে স্নান করিয়ে দিত । শাশুড়ির পরিধানের কাপড় গুলি সময় মতো কেচে দিত। শাশড়ীও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মত আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগল । শাশড়ী ও পুত্রবধুর ভালোবাসা একেবারে আঠা হয়ে জমে ক্ষীর হয়েগেল । ঘরের কাজ কর্ম গুলি কি ভাবে সুষ্ঠ ভাবে উঠে যেত কেহুই বুঝতে পারত না । এই ভাবে সংসারে এক রকম খুশী আর অানন্দ বয়ে যেতে লাগল । শাশুড়ী বউ একেবারে একপ্রাণে গাঁথা হয়েগেল। গৃস্থের ঘরের লক্ষ্ণী যেনো চিরতরে শাশুড়ি বউ এর দাঁত মুখ গাল ঝাপাটি থেকে চিরতরে মুক্তি পেল।
পটের বিবি বাবার বাড়ি থেকে কয়েক দিন পরে ফিরে এল কিন্তু পড়শী শাশড়ী ও পুত্রবধূর পাত্তা নেই একেবারে। পড়শী শাশড়ী পুত্রবধূর সঙ্গে একা একা কথা বলার সুযোগই পেল না আর।
বিঃদ্রঃ:- স্ক্রিন সট,কপি,কপিরাইট, নকল ও কোনো রূপ বিকৃত করা নিষিদ্ধ। এসব করলে আইনানুগ ব্যবস্থা লওয়া হবে।