click on images to know more about the Images

কৈলাস থেকে কলকাতা (চতুর্থ পর্ব)

Author: নলিনী রঞ্জন মন্ডল

(ক্লাবের পিছনে ঘোতনা আর কেলো। সামনে মদের বোতল ও গ্লাস )

 

ঘোতনাঃ- ছিপি খুলেছি, বেশ করেছি। কোন শালা আমাদের কী করবে রে? 

 

কেলোঃ- কেষ্টদাকে খারাপ ভাবিস না। ও তো বলেছে- পুজো করে যা বাঁচবে, তাতে সবার নামে একটা করে এমআইএস খুলে দেবে। তারপর সারা বছর সুদ তোলো আর মাল খাও। 

 

ঘোতনাঃ- সে নয় হল কিন্তু মুখের ছিপি এঁটে কতক্ষণ থাকবো? (বোতল নিয়ে গলায় ঢালে) 

 

(এমন সময় মহিষ আসে )

 

মহিষঃ- ভাই। খুব মুস্কিলে পড়ে তোমাদের কাছে এসেছি, একটু সাহায্য করবে? 

 

ঘোতনাঃ- এই যমের দুয়ারে এসে সাহায্য চাইছো বাওয়া? তা ভালো। এসেছে যখন, তখন তো সাহায্য করতেই হবে। (উঠে মহিষের কোমর জড়িয়ে ধরে) এসো। বসো। 

 

মহিষঃ- না, বসবো না। হাতে সময় ভীষণ কম। তোমাদের সাহায্য পেলে...

 

ঘোতনাঃ- নিশ্চয়ই। কেলো, মাল দে। (মহিষকে গ্লাস বোতল দেখিয়ে) একটু চলবে টলবে? 

 

মহিষঃ- না-না, ওসব খাই না। 

 

কেলোঃ- সে কি কথা! যম দুয়ার থেকে শুকনো মুখে চলে যাবে- তা কখনো হয়? দেখে তো মনে হচ্ছে- বিদেশী। আর বিদেশী মানে অতিথি। সেই অতিথি সেবা না করিয়ে...

 

মহিষঃ- ও-হো! তোমরা বুঝতে পারছ না! দেরি হয়ে গেলে...

 

ঘোতনাঃ- শোনো। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর শিষ্য জগাই মাধাই এর নাম শুনেছো তো? 

 

কেলোঃ- ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের শিষ্য গিরিশ ঘোষের নাম নিশ্চয়ই মনে আছে? 

 

ঘোতনাঃ- এই সব বিশেষ লোকদের ভীত কিন্তু এই মাল দিয়ে তৈরি। আর তুমি কোন হরিদাস হে? 

 

মহিষঃ- না ভাই, দয়া করে আমাকে ভুল বুঝো না। আসলে এসব তো আমি কখনো...

 

ঘোতনাঃ- ফ্যাক! কেলো, ধর। (কেলো মহিষকে ধরতেই মুখে মদ ঢালতে থাকে) 

 

মহিষঃ- আহা-হা! একি করছো? ঠিকানা হারিয়ে তোমাদের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি, আর তোমরা...

 

ঘোতনাঃ- আরে ঠিকানা খোঁজা তো এইটুকু ব্যাপার। এর জন্য খুপরি গরম করার কি আছে? তোমার আমার সব শালার ঠিকানায় পশ্চিমবঙ্গ। হা-হা-হা! 

 

(কেষ্ট আসে)

 

কেষ্টঃ- ঘোতনা। 

 

ঘোতনাঃ- (চমকে উঠে) কে! কেষ্টদা! (মুখ শুকিয়ে যায়। কেলো বোতল গ্লাস লুকাবার চেষ্টা করে) 

 

কেষ্টঃ- কোন সাহসে ছিপি খুলেছিস? 

 

কেলোঃ- আমি নয় কেষ্টদা, ওই ঘোতনা...

 

কেষ্টঃ- (ঘোতনার চোখে চোখ রেখে কেলোকে এক লাথি মারে) কি বাবা ঘোতনা চাঁদ? ব্যাপার কি?

 

ঘোতনাঃ- (ভয়ে আমতা আমতা করে) কেষ্টদা আমি ঠিক...

 

কেষ্টঃ- (ঘোতনার কলার ধরে এলোপাতাড়ি ঘুসি) শালা শুয়োর, আমার অর্ডার অমান্য করলি? 

 

ঘোতনাঃ- ভুল হয়ে গেছে কেষ্টদা। আর কোনোদিন...

 

কেষ্টঃ- বলেছিলাম- প্রথম পুজোর শেষে সিপি খুলে প্রত্যেকের হাতে একটা করে ধরিয়ে দেবো। তবু...

 

ঘোতনাঃ- কেষ্টদা, তোমার আদেশ মানতে অনেক চেষ্টা করছিলাম, শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে... 

 

কেষ্টঃ- চোপ! ভেবেছিলাম- অভিনব মঞ্চ বানিয়ে প্রথম পুরস্কার ক্লাবে আনবো। তাই মাসের পর মাস এতো পরিশ্রম- সব জলে গেল! শেষে শুধু আঙুল চোষা! (মহিষকে দেখে) এ মালটা কে? 

 

কেলোঃ- জানি না। ও হঠাৎ এখানে চলে এসেছে। 

 

কেষ্টঃ- (মহিষকে) এই। তোর বাড়ি কোথায়? 

 

মহিষঃ- কৈলাসে। 

 

কেষ্টঃ- আরে, এ বেটা বলে কী! মাল খেয়ে সব ভুলে গেছে নাকি? 

 

(হন্তদন্ত হয়ে গোবরা আসে)

 

গোবরাঃ- কেষ্ট।  

 

কেষ্টঃ- কখন এলে গোবরাকাকা? সবাই এসে গেছে তো? পাঠিয়ে দাও, অন্তত পুজোটা শুরু হোক। 

 

গোবরাঃ- আরে বাবা, দিদি ত্রিশূলটা মারবে কার বুকে? মহিষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

 

মহিষাঃ- গোবরাদা, আমি এখানে। 

 

গোবরাঃ- (আচমকা পিছন ঘুরে) মহিষ! তুই এখানে আর আমরা তোকে খুঁজে খুঁজে অন্য হয়ে যাচ্ছি! 

 

মহিষঃ- পথ হারিয়ে ফেলেছি। 

 

গোবরাঃ- পথ হারিয়েছিস মানে? তুই কি কলকাতার পথ-ঘাট চিনিস না নাকি? 

 

মহিষঃ- আগে যা চিনতাম এখন সব অচেনা। যেখানে একতলা বাড়ি ছিল, এখন সেখানে তিন তলা, চারতলা। আগে যেখানে মাটিতে রাস্তা ছিল, এখন সেখানে পাতালে মাথার উপরে রাস্তা। আগে কলকাতা ছিল টালা থেকে টালিগঞ্জ। এখন সেখানে বারুইপুর থেকে বারাকপুর। আর চেনা যায়? 

 

গোবরাঃ- ঠিক আছে, এটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু এখানে কেন? 

 

মহিষঃ- তোমাদের পিছনে পিছনে আসতে আমাদের রিক্সার টায়ার ফেটে গেল। পরে রিক্সাওয়ালা সারালো বটে কিন্তু ও তো ঠিকানা জানে না। তাই শেষে এখানে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। 

 

গোবরাঃ- দেখো কান্ড! তারপর ? 

 

মহিষঃ- এদের জিজ্ঞাসা করি, এরা বললো- সবার ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গ। তারপর জোর করে মদ খাইয়ে...

 

গোবরাঃ- কিরে কেষ্ট, জেনে-শুনে তোরা...

 

কেষ্টঃ- চিনতে পেরেছি নাকি? আমরা প্যান্ডেলে ওকে দেখি- খালি গায়ে। হাতের মাশুল ইয়া মোটা, ঢাল তলোয়ার বর্ম পরা। আর এখন দেখছি- সিভিল ড্রেসে।   

 

গোবরাঃ- উঃ! মদের বিশ্রী গন্ধ! (মহিষকে) তোর গায়ে কি জোর ছিল না? দু'বেলা মুগুর ভাজিস কি করতে? দু চারটেকে চিৎপটাং করে দিতে পারলি না? কেষ্ট। এরপর দেরি হলে কিন্তু দোষ দিতে পারবি না। (মহিষকে) এই চল। গঙ্গা থেকে চান করিয়ে তবে তোকে বাড়ি ঢোকাবো। (মহিষকে নিয়ে চলে যায়)

 

কেষ্টঃ- তোরাও চল।  

 

ঘোতনাঃ- আমরা? কোথায় যাবো কেষ্টদা? 

 

কেষ্টঃ- পায়খানার চেম্বারে। ওখান থেকে ডুবি এনে তবে তোদের ক্লাবে তুলবো। চল। 

 

(আলো নিভে যায়)