click on images to know more about the Images
(মানদার বাড়ি। ফেরিওয়ালার বেশে শঙ্কর আসে। কাঁধে কাপড়ের গাঁটরি )
মানদাঃ- (বাইরে থেকে) এই! কে তুমি? হন হন করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লে যে?
শঙ্করঃ- মা আমি ফেরিওয়ালা। কাপড় বিক্রি করি। শাড়ি দেখবেন নাকি?
(মানদা আসে)
মানদাঃ- না। মেয়েটা এখন ঘরে নেই। ও থাকলে না হয় দেখতাম।
শংকরঃ- আপনার মেয়ে কোথায় গেছে? একটু ডাকুন না!
মানদাঃ- কি করে ডাকবো! ও এখন প্যান্ডেলে পূজো নিচ্ছে।
শংকরঃ- (খুশি হয়ে) তাই ? তাহলে তো ভালোই হয়েছে।
মানদাঃ- ( অবাক হয়ে) ভালোই হয়েছে- মানে?
শংকরঃ- মা আমাকে চিনতে পারছে না? আমি আপনার জামাই শংকর।
মানদাঃ- (লজ্জায় মাথায় কাপড় দিয়ে) ও মা! শংকর! আগে বলবে তো!
শংকরঃ- কি করে বলি! লুকিয়ে চুরিয়ে আসা।
মানদাঃ- গোবরার মুখে সব শুনেছি বাবা। শ্বশুর বাড়িতে জামাই আসবে চোরের মতো! এ ভীষণ খারাপ লাগে। আচ্ছা তুমি কাপড়ের গাঁটরি কোথায় পেলে?
শংকরঃ- (হেসে) বড়বাজার থেকে জোগাড় করেছি মা।
মানদাঃ- (অবাক হয়ে) বড়বাজার! টাকা পেলে কোথায়?
শংকরঃ- ভাবলাম সারা বছর পূজারীরা তো আমাকে ভাঙিয়ে খায়। আজ ওদের ঘাড় ভাঙবো। তাই প্রথমে যাই কেদার-বদরিতে। তারপর বিশ্বনাথ মন্দির, বিশ্বনাথ ধাম হয়ে সোজা চলে আসি তারকেশ্বরে। যেখানে যা পেলাম হাতে নিয়ে...
মানদাঃ- ঠিক আছে- ঠিক আছে, পরে শুনবো। আগে ঘরে চলো বাবা।
শংকরঃ- ঘরে যাবো! গৌরি যদি এসে পড়ে?
মানদাঃ- তা মন্দ বলোনি। আমার মেয়েটা ভীষণ বদরাগি। তুমি যদি একটু মানিয়ে নিয়ে চলো...
শংকরঃ- আমি তো কখনো ওর সঙ্গে ঝগড়া করিনি মা।
মানদাঃ- সে জানি। তবে তোমার কতগুলো বদ অভ্যাসের জন্য মেয়েটা ক্ষেপে ওঠে।
শংকরঃ- কি বদ অভ্যাস?
মানদাঃ- ঐ ছাই-ভস্ম গুলো না মাখলে চলে না? যদি একান্ত কিছু মারতেই হয়, তাহলে কলকাতা থেকে যাওয়ার সময় পাউডার কিনে নিয়ে যাও।
তারপর ওই ধুতরা ফুল! ওগুলোয় কুকুর বিড়াল কতো পেচ্ছাপ করে, আর তুমি সেই...
শংকরঃ-মাগো, ধুতরোকে অবজ্ঞা করছেন? ঐসব ঔষধি গাছগুলো যতো পৃথিবী থেকে লোপ পাচ্ছে, ততো মানুষ রোগ-ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।
মানদাঃ- কিন্তু ঐ সাপ! (শিউরে ওঠে) বাবাগো! ভয় করে! এতো ছাগল কুকুর বিড়াল থাকতে শেষে...
শংকরঃ- সাপকে এতো ভয় কেন মা? জানেন তো- ওর বিষ থেকে জীবন দায়ী ওষুধ তৈরি হয় !
মানদাঃ- আর একটা কথা, সারা বছর পূজোয় এতো কাপড় গামছা পাও, তবু বাঘছাল না পড়লে নয়? এবার থেকে প্রতিবছর আমি তোমার জন্য প্যান্ট শার্ট কিনে পাঠাবো।
শংকরঃ- দেখুন মা, সবার লক্ষ্য ভালো ভালো জিনিসের দিকে। অসুন্দর জিনিস কেউ পছন্দ করে না। তাই আমি সেই গুলোই ভালোবাসি।
(গোবরা আসে)
গোবরাঃ- মা। (হঠাৎ শংকরকে দেখে) একি! পুজোর সময় এইসব ফেরিওয়ালাদের বাড়ির মধ্যে ঢোকাও কেন? কখন কি হয়ে যাবে- কে বলতে পারে?
মানদাঃ- কাকে কি বলছিস? এ তো আমাদের জামাই বাবাজীবন।
শঙ্কর।
গোবরাঃ- (বিস্ময়ে) য়্যাঁ!
শংকরঃ- শালাবাবু। তুমিও আমাকে চিনতে পারলে না?
গোবরাঃ- (হেসে) জামাইবাবু! কি ভুল করে ফেলেছি দেখুন! আসলে এই কাপড়ের গাঁটরি দেখে...
শংকরঃ- তোমার মাথা গরম হয়ে গেছে। তা আমি আর কি করবো বলো? তোমার দিদির ভয়ে বাধ্য হয়ে ছদ্মবেশ ধরে চলতে হচ্ছে ।
গোবরাঃ- হা হা হা! তবে যে দিদি বলে আমার জামাইবাবুর নাকি বুদ্ধি নাই?
শংকরঃ- বলুক না শালাবাবু। ও যা বোঝে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে দাও না।
গোবরাঃ- কিন্তু এবার যে বুঝে যাবে। ওর আসার সময় হয়ে গেছে।
শংকরঃ- ওরে বাপরে! তাহলে আমি এখন চলি।
মানদাঃ- সে কি বাবা! জামাই মানুষ, খাওয়া-দাওয়া না করে...
শংকরঃ- ওসব পরে হবে মা। এখন চলি। (যেতে থাকে)
গোবরাঃ- শুনুন-শুনুন। আপনি যাচ্ছেন- যান। তবে রাতে দিদি যখন প্যান্ডেলে যাবে, তখন কিন্তু চলে আসবেন। খেয়ে-দেয়ে আবার চলে যাবেন।
শংকরঃ- আচ্ছা। (গাঁটরি নিয়ে চলে যায়)
মানদাঃ- ভালো লাগে না! বাড়ির জামাই এভাবে...। ঐ তোর দিদি আসছে। পুজো হয়ে গেল মা?
(গৌরি আসে)
গৌরীঃ- (বিরক্ত হয়ে) আর পুজো! এখানে আসা এবার উঠিয়ে দিতে হবে।
মানদাঃ- কেন রে মা?
গৌরীঃ- আর কেন! যা আঁশটে গন্ধ!
মানদাঃ- আঁশটে গন্ধ! কোথায়, কিসের আঁশটে গন্ধ?
গৌরীঃ- তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করো। ও ভালোই জানে।
গোবরাঃ- (মানদা গোবরার দিকে তাকাতেই) মাছের গন্ধ হবে।
মানদাঃ- মাছের গন্ধ! মাছের গন্ধ কোথায় পেলি?
গোবরাঃ- এবছর কুড়কুড়ে ক্লাবের রজতজয়ন্তী বর্ষ তো। তাই অভিনব কিছু করার জন্য মাছের আঁশ দিয়ে প্যান্ডেল বানিয়েছে।
মানদাঃ- (নাক সিটকে) ম্যাগো! হতচ্ছাড়ারা অন্য কিছু পেলো না?
গোবরাঃ- তোমরা সেকেলে মানুষ। এসবের কিছু বুঝবে না। যেমন কম্পিটিশন চলছে, তাতে শুধু মাছের আঁশ কেন, দরকার হলে গরু ছাগল হাঁস মুরগির হাড় দিয়েও প্যান্ডেল বানাবে।
মানদাঃ- এ রাম! ছি-ছি!
গৌরীঃ- একে আমি দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারি না, তবু তোমার ছেলে জেনে শুনে এ বছর এই ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কি কষ্ট করে চার-পাঁচ ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম...
গোবরাঃ- আমি কি করে জানবো? যে যার ক্লাবের সিক্রেট ব্যাপার। আগে থেকে কেউ জানায় না।
গৌরীঃ- এখানে আমাকে ছেড়ে তোর জামাইবাবুকে এনে দাঁড় করিয়ে দিলে খুব মজা পেতো।
গোবরাঃ- ভালো মানুষ জামাই বাবুকে সব সময় তুই...
গৌরীঃ- তুই থাম! ভালো মানুষ! তুই ওকে কতটুকু চিনিস রে? উপর উপর সবাই ভালো। আমি যা বলছি শোন, এই পূজার মধ্যে কোনো একদিন সাংবাদিক সম্মেলন ডাক ।
গোবরাঃ- সাংবাদিক সম্মেলন! কেন?
গৌরীঃ- যা বলছি তাই কর। কৈলাসে ফেরার আগে কলকাতার মানুষদের পিন্ডি চটকে দিয়ে যাবো।
মানদাঃ- অতো রাগ করিস না মা।
গোবরাঃ- দিদি। মাথা ঠান্ডা কর। একটু বুঝে দেখ, তোদের সারা বছরের খোরাক কিন্তু এখান থেকে যায়। সামান্য ব্যাপারে রাগ করলে...
গৌরীঃ- (একটু নরম হয়ে) সে চিন্তাও হয়। তাই রাগ করেও মাঝে মাঝে পিছিয়ে যাই।
(কাতু আসে)
কাতুঃ- (হেসে) জানো দিদিমা, আমার মা না, কভি খুশি কভি গম।
গৌরীঃ- চোপ! হারামজাদা ছেলে! (রাগ ভোরে চলে যায় )
কাতুঃ- হা হা হা!
মানদাঃ- মাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে নেই ভাই। জানিস তো, তোর মা একটু ঐ রকম।
কাতুঃ- দিদিমা । সবে একটু ফিল্মি জগতে পা রাখার চেষ্টা করছি, এই সময় মা যদি রাগের বশে দুম করে কিছু একটা করে বসে, তাহলে আমার সব আশার আলো নিভে যাবে।
গোবরাঃ- শোন কাতু। একটুও ঘাবড়াবি না। আমার দিদি হতে পারে তোর মা কিন্তু আমি তোর ডবল মা। মানে- মা মা।
কাতুঃ- হ্যাঁ মামা। তোমার উপর আমার ভরসা আছে।
গোবরাঃ- তোর মা যখন বললো, তখন কাল একটা সাংবাদিক বৈঠক ডাকি। ঐ বৈঠকে তোর একটা হিল্লে করবোই করবো। (চলে যায়)
কাতুঃ- (আনন্দ উৎফুল্ল হয়ে) ওঃ মামা! তুমি কত ভালো। (মানদাকে) দিদিমা, আমি একটা সিদ্ধান্ত ঠিক করে ফেলেছি।
মানদাঃ- কী সিদ্ধান্ত ঠিক করেছো দাদুভাই?
কাতুঃ- একবার যদি ফিল্মে চান্স পাই তো, আর কোনোদিন কৈলাসে ফিরে যাবো না।
মানদাঃ- (অবাক হয়ে) সে কি কথা দাদুভাই! কৈলাস হল স্বর্গ! সেই স্বর্গ ছেড়ে এই পোড়ার মুখো পৃথিবীতে কেউ কখনো থাকে!
কাতুঃ- তা হোক। ঐ খটখটে পাহাড়ে কি আছে! শুধু বরফ আর বরফ। (আনন্দে চোখ উজ্জ্বল করে) এই শস্য-শ্যামলা মাটির বুকে কি নেই!
মানদাঃ- ওরে পাগল, এখানে রোগ-ব্যাধি সাপ-ব্যাঙ মশা-মাছি আরশোলা-টিকটিকি! উঃ কী যম যন্ত্রণা! বাপ রে!
কাতুঃ- দিদিমা। (সুরে হাসতে হাসতে) ওরা যতই জ্বালায় জালাক আমার, ভালো লেগেছে। ল(কৌতুক গানে মানোদা হাসে)
(মঞ্চের আলো নিভে যায়)