click on images to know more about the Images
(বাড়ির বারান্দায় তিতি-বিরক্ত হয়ে পায়চারি করছে মানদা )
মানদাঃ- একি গেরো রে বাবা! গুয়োর বেটা পুলিশ, ঠাকুর দেবতা চেনে না! মড়ি-মুড়কি সব এক মনে করে! কত লোকে তো নেশা করে। পুলিশ কি সবাইকে ধরে! পকেটে দু পয়সা গুঁজে দিলেই সাত খুন মাফ। আর আমার জামাইয়ের পয়সা নেই বলে এতো হেনস্থা!
(বিরক্ত হয়ে গৌরী আসে )
গৌরীঃ- (অস্থির হয়ে ) মা। আমি এক্ষুনি চলে যাবো।
মানদাঃ- সে কি মা, তা কখনো হয়!
গৌরীঃ- হয় কি না হয়- তা আমি জানিনা। আমার পক্ষে থাকা আর সম্ভব নয়।
মানদাঃ- অতো উতলা হলে চলে না রে মা। একটু ধৈর্য ধরতে হয়।
গৌরীঃ- তুমি কি বলছো মা? তোমার মেয়ের মরা মুখ দেখতে চাও নাকি?
মানদাঃ- বালাই ষাট। এমন কথা বলতে নেই।
গৌরীঃ- যা পরিস্থিতি চলছে, এ ছাড়া আর কি বলবো? আমার ছেলেমেয়েদের ডেকে দাও ।
মানদাঃ- ওরা এখন ঘুমাচ্ছে, ঘুমাতে দে।
গৌরীঃ- ওরা বাবার অপমান দেখতে পাইনি। এবার মায়ের মরণ ঘুম দেখবে। (চলে যায়)
মানদাঃ- খবরদার মা, ওই কাজটি করবি না। (চলে যায় )
(শঙ্করকে ধরে নিয়ে মহিষ আসে )
মহিষঃ- দাদা, আমার উপর ভরসা রাখো। কেউ না থাকলেও আমি তোমার পিছনে থাকবো। আমরা প্রাগার্য । তোমার অপমান মানে আমার অপমান।
শঙ্করঃ- মহিষ। আজ তুই না থাকলে আমার কি যে হতো- কে জানে! এমন পরিস্থিতি হবে বুঝতে পারিনি ভাই। যতোই বলছি- আমি দেবাদিদেব, ততোই ওরা আমাকে অবিশ্বাস করে জ্বালাতন করছে।
(গোবরা আসে )
গোবরাঃ- জামাইবাবু! আপনি কেমন মানুষ? যখন বুঝলেন নিজেকে সামলাতে পারছেন না, তখন নন্দী ভৃঙ্গিকে তলব করলেন না কেনো? যমদূতের মতো দুটো ডানহাত বাঁহাত থাকতে কেনো অকারণ হেনস্তায় ভুগলেন?
মহিষঃ-গোবরাদা তো ঠিকই বলেছে। ওদের স্মরণ করা দরকার ছিলো।
গোবরাঃ- না-না, আপনি বলুন- বিপদের দিনে কেউ এমন ভুলটা করে ?
শঙ্করঃ- কি বলবো ভায়া, বিপদ এলে কেমন যেন মতিভ্রম হয়ে যায়। অনেক সময় নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যাই। এখন সেটাই হয়েছে।
(মানদা আসে )
মানদাঃ- এই যে বাবাজি, তুমি এসে গেছো? কী একটা কাণ্ড করে ফেললে বলো তো!
শঙ্করঃ-আমি তো আমাদের কৈলাসে সব সময় নেশা করে পাহাড়-পর্বতের যেখানে সেখানে পড়ে থাকি। কোন সমস্যা হয়নি। এখানে এত কাণ্ড হয়ে যাবে- বুঝতে পারিনি।
গোবরাঃ- এর নাম কলকাতা। এখানে দিন-রাত লোকজন গিজ-গিজ করছে। একটু আড়ালে আবডালে না বসে একেবারে রাস্তার মাঝখানে-
শঙ্করঃ- মাঝখানে নয়, ফুটপাতে বসে ছিলাম। নেশার মাত্রাটা একটি বেশি হওয়ায়, রাস্তা পার হতে গিয়ে পড়ে গেছি ।
মানদাঃ- সর্বনাশ! যদি বাস লরি এসে চাপা দিতো, তখন কি কাণ্ডটা হতো বলতো? আর এতে যদি আমার গৌরী একটু আধটু রাগ করেই থাকে, সেটা কি দোষের হয়! কোন মেয়ে স্বামীর এতো বড় অপমান সহ্য করতে পারে?
শঙ্করঃ- মা। আমি তো গৌরিকে একবারও কোন দোষ দিইনি।
(গৌরী আসে )
গৌরীঃ- তুমি কী দোষ দেবে? মুখ ফুটে তোমার বলার কি আছে? সারা জীবন হাড়-মাস জ্বালিয়ে খেলে। মায়ের বাড়িতে এসেছি- দুদিন নিশ্চিন্তে থাকবো বলে। অমনি চোরের মত গুটি গুটি করে-
শঙ্করঃ- আহা! আমি তোমার-
গৌরীঃ- (রেগে) চুপ! আমি না তোমাকে বলেছিলাম- শুধু শিবচতুর্দশী ছাড়া এখানে আসবে না। তবু কেন এসেছো? কে তোমাকে এনেছে?
শঙ্করঃ- (গোবরার দিকে তাকাতেই গোবরা ভয় পেয়ে ইশারায় গোবরার নাম নিতে বারণ করে) আমাকে আবার কে আনবে! আমি নিজেই এসেছি।
গৌরীঃ- মিথ্যা কথা।
মানদাঃ- (চাপার চেষ্টা করে) ছাড় না মা, জামাই বলছে যখন-
গৌরীঃ- তুমি চুপ করো মা। গোবরা কোথায় গেলো? (গোবরা এদিক ওদিক লুকাবার চেষ্টা করে ) এই গোবরা! পালাচ্ছিস কোথায়? (গোবরার কান ধরে টেনে আনে)
গোবরাঃ- দিদি লাগে রে! কানটা ছেড়ে দে ।
গৌরীঃ- কৈলাসে গিয়ে জামাই বাবুর সঙ্গে দিন-রাত ফুসুর ফুসুর করা আজ বের করে দেবো। একটা সত্যি কথা বলবি?
গোবরাঃ- বলবো রে বলবো। কানটা ছেড়ে দে।
গৌরীঃ- (গোবরার কান ছেড়ে) আমি তোকে পই পই করে বলেছিলাম- তোর জামাইবাবুকে কিছুতেই নিয়ে যাবি না। শুনে ছিলিস আমার কথা?
গোবরাঃ- তা আমি এনেছি নাকি? আমি তো তোর সঙ্গে এলাম।
গৌরীঃ- তোর ইন্ধন ছাড়া ও লোকটা কিছুতেই আসতে পারে না। কান খুলে শুনে রাখ গোবরা- আমি কিন্তু কিছুতেই সতী হতে পারবো না।
মানদাঃ- এ রাম ছি ছি! এসব অসভ্য কথা কেনো বলছিস মা?
গোবরাঃ- সেকি! তাহলে আমার আরো একটা জামাইবাবু আছে নাকি?
গৌরীঃ- বাঁদর! জামাইবাবু খোঁজার আগে জামাইবাবুর কটা বউ- সেটা আগে খুঁজে দেখ! হারামজাদা !
গোবরাঃ- তার মানে?
গৌরীঃ- আমার সতীন দক্ষ রাজকন্যা সতীর কথা মনে নেই? এই গুণধর স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আগেই পটল তুলেছে। তবু যাই হোক, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় মন্দির আছে। আমি মরলে আমার কি হবে?
শঙ্করঃ- ভেবো না গৌরী। নিশ্চয়ই তোমারও ব্যবস্থা হবে।
গৌরীঃ- চুপ! ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই! চলো কৈলাসে। আজ তোমার হবে। মহিষ। বাক্স-প্যাঁটরা গোছা। চল, এক্ষুনি ফিরে যাবো ।
মানদাঃ- শোন মা।
গৌরীঃ- কিচ্ছু শোনার নেই। (মহিষকে) চল। (মহিষকে নিয়ে চলে যায়)
মানদাঃ- ও গৌরি। যাস না মা। কথা শোন। অন্তত আর একটা দিন থেকে যা। (চলে যায়)
গোবরাঃ- যা! দিদি চলে যাচ্ছে! তাহলে জামাইবাবু, আপনি এখন কি করবেন?
শঙ্করঃ- কি আর করবো ভায়া! আমাকেও যেতে হবে। তোমার দিদি যা রেগে আছে। যাই, দেরি হলে অবস্থা লাগাম ছাড়া হয়ে যাবে।
গোবরাঃ- তাহলে আমার কি হবে?
শঙ্করঃ- তোমার কি হবে- মানে?
গোবরাঃ- হায় কপাল! এতো তাড়াতাড়ি শালার আবদারটা ভুলে গেলেন?
শঙ্করঃ- তোমার কিসের আবদার- বলো না ছাই! জানো তো- আমার ভুলো মন, তবু কেনো-
গোবরাঃ- এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাবন- এ আশাটা করিনি। আপনাকে বলেছিলাম একটু ইন্দ্রের নাচমহলে উর্বশীদের-
শঙ্করঃ- ধ্যাততেরিকা! তোমার সেই একই বায়না! দেখছো তো- কি পরিস্থিতি হয়ে গেলো, তবু... এখনো ঐসব কথা ভুলে যাও তো শালাবাবু !
গোবরাঃ- বিপদ, সংকট- এসব পরিস্থিতি আসবে আবার কেটেও যাবে। তা বলে এই অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ল্যাং মারবেন না জামাইবাবু।
শঙ্করঃ- (হেসে) আহারে! অভিমানী শালাবাবু, দুষ্টু শালাবাবু, (গোবরার থুতনি ধরে) মিষ্টি শালাবাবু। রাগ করেনা। কয়েক মাস পরে তো আবার আসতে হবে, দেখি তখন তোমার জন্য কি ব্যবস্থা করতে পারি। এবারের মত বিদায় দাও ভাই।
গোবরাঃ- (খুশি হয়ে) দুর্গা-দুর্গা। (হঠাৎ জিভ কেটে) সরি! ভুল হয়ে গেছে জামাইবাবু। (জোরে হাসতে থাকে)
শঙ্করঃ- (গোবরার হাসির সঙ্গে হাসি মিলিয়ে) হা হা হা !
(ধীরে ধীরে পর্দা নেমে আসে )
------ নাটক এখানেই শেষ ------
এই নাটক সম্বন্ধে পাঠক প্রতিক্রিয়া কি হচ্ছে আমি তো জানতে পারছি না। আপনি নিশ্চয়ই জানতে পারছেন। দয়া করে একটু বললে ভুল ভ্রান্তি গুলো বুঝতে পারি।