click on images to know more about the Images

শুক্কুলি

Author: কুমকুম নাইয়া

"শুক্কুলির মতো বিয়োন ভাঙতে, ধান রুইতে কেউ পারে না! "-. একথা আড়িভাঙি গ্রামে লোকের মুখে মুখে যত ঘোরে তত ঈর্ষায় জ্বলে ওঠে সুকুমার! সে মনে করে ,আশেপাশে পদুয়া ,বাবলুর চকের মত পাঁচ দশটা গ্রামের মধ্যে সেই একজন সেরা মোয়েল। মইছাড়া প্রতিযোগিতায় সে অনেক পুরস্কার যেমন পেয়েছে, তেমনি ননী,ফনি, গুপি, সুবলদের চাইতেও ভালো চাষের কাজকর্ম করতে পারে। গ্রামে তার মত জোয়ান মদ্দলোক থাকতে চাষের কাজে একজন মেয়েলোক শুক্কুলির সুনাম হবে !এটাই শুক্কুলির উপর সুকুমারের এত বিরক্তির কারন। 

 

শুক্কুলি এই গ্রামেরই মেয়ে, ভালো নাম শুক্লা। তবে গ্রামের ব্যাপার , কে আর যত্ন করে সে নাম ধরে ডাকবে ! তাড়াহুড়ো করে যা হোক বোঝালেই হল! এই যেমন, পঙ্কজ হয়ে যায় পঙ্কে, দিলীপ হয় দিল্পে , তেমন শুক্লা থেকে শুক্কুলি হয়েছে! 

 

শুধু ভোট দিতে গিয়ে নিজের নাম পরিষ্কার শোনে শুক্কুলি। এমনি তে সে বাপ মায়ের অবহেলিত কন্যা সন্তান, তার উপর চির অনাদ্রিত ,শুধু

 ভোট দানের সময় ভোটকর্মীরা তালিকা ধরে তার নাম 'শুক্লা নস্কর সাঁফুই' বলে ডাকে , তার তখন মনে হয়, এত যত্ন করে তাকে ডাকে নি কেউ! তার মনের মধ্যে যত তৃষ্ণা, যত মাধুর্য, যত সৌন্দর্য, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়! কেউ না বুঝুক, ক্ষনিকের জন্য হলেও শুক্কুলির মনের মধ্যে প্রেম- মাধুরী র মতো কুসুম কলির বিকশিত হতে বাধা তো নেই! এবং এই সূত্র ধরে অল্প কয়েকটি দিন মাত্র জীবনে বেঁচে থাকার স্বাদ একটু ভিন্ন ধরনের হয় শুক্কুলির! অন্য সময়ে সে সম্পূর্ণ একা। সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। 

 

 শুক্কুলি স্বামী পরিত্যক্তা । বছর দশেক আগে গোডাবর গ্রামে সাঁফুই বাড়িতে বিয়ে হয়েছিল , কিন্তু মাসখানেক ও সে বিয়ে টেকেনি। স্বামীর কাছে লাঞ্ছিত ও বিতাড়িত হয়ে চলে এসেছিল বাপের বাড়িতে। বাবা ঝন্টু নস্কর অবশ্য সে দিনই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেম, -" কন্যা দায় থেকে উদ্ধার পেতে মে ছাবালের বে দে দিচি আবার সে দায় ঘাড়ে নিতি পারবুনি! "

 

অতএব বাপের বাড়িতে ঠাঁই মেলেনি শুক্কুলির। তবু ও স্বামীর ঘরে ফিরে যায় নি সে। এবং স্বামী রতন ও খোঁজ করেনি তার। এরপর গ্রামের জ্ঞেতিদের মধ্যস্থতায় বাপের বাড়ির বাঁশ বাগানে ঠাঁই হল শুক্কুলির। সেখানে বেড়ার ঘর তুলে নিজের সঙ্গে নিজেই বাস করতে শুরু করলো।এবং চাষের কাজ তার চলে দিন গুজরান। 

 

যদিও এত সব খবরে কোন আগ্রহ নেই সুকুমারের। 

 

সুকুমার হালদার একজন কৃষক ।তার চাষের জমি আছে বিঘে দশেক । সারাদিন জমি জায়গা দেখাশোনা করে, খেত খামারে কাজ করে, একজোড়া হালের গরু কেলে আর হাঁসার পরিচর্যা করে । তার নিজের সংসার নেই। স্ত্রী মারা গেছে কয়েক বছর হল। ছেলেপুলে নেই। ছোট দুই ভাইয়ের সংসার নিয়েই তার বড় সংসার! 

 

অবসরেও সুকুমারের অনেক কাজ । তাল -খেজুর গাছ বেয়ে রস নামায়, গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে, জাল বোনে ,ঘরের চাল ছায়, ঝেঁৎলা বোনে,,মাছ ধরে, জৈষ্ঠ আষাঢ় মাসে চাষ শুরুর আগে কেলে আর হাঁসা কে নিয়ে গ্রামান্তরে মই ছাড়া প্রতিযোগিতায় নামে । পুরস্কার জিতে আনে। আর রাতের বেলায় ঝেঁৎলার বিছানায় শুয়ে যতক্ষণ ঘুম না আসে ,সারাদিনের কাজকর্মের কথা ভাবে।

 

 

 আজকাল এই ভাবনার মধ্যে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে সুকুমারের । চাষের কাজে শুক্কুলির গ্রাম ময় সুখ্যাতিতে জ্বালা ধরে গেছে তার। কথাটার কথাটা জানিয়ে সুবলকে বলল ,-"এবার কোন দিন শুনবি,ছাগল দিয়ে দামন মাড়া হচ্ছে। আর মেয়েলোকে হাল চষতেছে।"

 

বটতলার সান্ধ্য আড্ডায় পাশে বসে ছিল সুবল। সে বলল ,"ঠিক বলেছিস, মেয়েলোকে চাষের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নামলি গ্রামে আমাদের মত মদ্দদের মর্যাদা বলে কিছু থাকবে নে! "

 

একটু দূরে ছিল ননী । ননী ভক্ত মানুষ। অতি সম্প্রতি কোন এক গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে গলায় হরিনামের মালা ধারণ করেছে। এদের কথাগুলো কানে যেতে বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলল, -"না না ,এসব খুব হালকা চালে নিলি হবে নে! আমার গুরু পেরায় বলে সংসারে মেয়েদের সবসোময় দইমে রাখতি হবে ,জব্দে রাখতি হবে তাতেই সংসারে শান্তি আসে। ""

 

সুবল বললো, এই জন্যি তো বলতেছি মদ্দলোক হয়ে মদ্দ লোকের কাছে হেরে গেলি তেবু মান থাকে। কিন্তু মেয়ে লোকের কাছে হারলি....ভাবতি পারো! "

 

এসব কথায় অতি উৎসাহী হয়ে সুকুমার বললো ,-"কিছু একটা কর না ভাই। ভালো রইতে পারে বলে, শুক্কুলির দেমাক আর সহ্য হচ্ছে না! "

 

 

পরে সুবল ,ননী রা চলে গেলে সুকুমার মনে মনে ভাবলো, শুক্কুলিকে কত নাকাল ও অপ্রস্তুত করে গ্রামের লোকের কাছে কত রকম ভাবে হাস্যস্পত করে তোলা যায়! 

 

আষাঢ় মাসের বেলা ।দিন যেন আর শেষ হয় না । দুপুরের পর দীর্ঘ সময় ধরে বিয়ন ভাঙ্গার কাজ শেষে সন্ধ্যার মুখে ঘরে ফিরছিল শুক্কুলি। পথে সুকুমারকে দেখল তার দিকে প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুটা দূর থেকে হাঁক দিল, -"কিছু বলবে নাকি, ও সুকুমার দা!"

 

প্রাক বর্ষার বৃষ্টি আর ভ্যাবসা রোদে গরমে, বাড়বাড়ন্ত কচি ঘাসে ভরা বাদায় হালের গরু দুটো কে চরিয়ে ঘরে ফিরছিল সুকুমার। পথে শুক্কুলির কথায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল ,-" শুক্কুলি একটা কাজ করবি ,। "

 

-"কি কাজ গো? "

 

-"আমাদের গ্রামে রোয়ার প্রতিযোগিতা হবে, তুই সেখেনে থাকবি ?"

 

-"রোয়ার প্রতিযোগিতা আবার হয় না কি?কোনদিন শুনিনি তো! "

 

-" মই ছাড়া প্রতিযোগিতা হতে পারলে রোয়ার প্রতিযোগিতা হবে না কেন।এত দিন হয় নে এবার হবে ,তুই থাকবি তো! "

 

এক গাল হেসে শুক্কুলি বলল, -"মদ্দ নোকেদের সাথে আমি প্রতিযোগিতায় নামব! নোকে হাসবে যে !"

 

সুকুমার গোমশা মুখে তাকালো শুক্কুলির দিকে। শুক্কুলির বাবার জমি জায়গা আছে অনেক, চাইলে স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েটির ব্যবস্তা কিছু একটা করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। শুক্কুলির জায়গায় অন্য কোন মেয়ে থাকলে এতদিন হয়তো অভিমানে মরেই যেত ,সে দিক থেকে শুক্কুলি দৃঢ়চেতা চাষবাসের কাজ শিখে সে এখন গ্রামের জোয়ান মদ্দদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। 

 

 

সুকুমার বলল ,-"চাষের কাজ তো তুই ভালোই শিকিচিস! আজকাল ডান দিক থেকে রুইতিচিস! "

 

ধান রোপন দক্ষ চাষীর কাজ, কঠোর পরিশ্রমেরও কাজ। প্রখর রোদ- গরমে জল কাদায় ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে হাটু ভাঁজ করে সামনে ঝুঁকে বাম উরুর ওপর ধানের চারা আটি রেখে বাঁ হাতে র কুনুই দিয়ে সামলে রাখতে হয়।এবং বাম হাতের মুঠোয় একগুচ্ছ ধানের চারা রাখতে হবে। এরপর ডান হাতে কাজ করে যেতে হবে। অর্থাৎ বাম হাতে র মুঠো থেকে বীজতলা নিয়ে জলকাদায় পুঁতে দিতে হবে। এইভাবে বীজতলা পুঁথতে পুঁথতে চলাকে রোপন কাজ বলে। এই চলা অবশ্য সামনের দিকে নয় পিছন দিকে । এবং ডান দিক থেকে রোপন কাজের শুরু হওয়ার কারণে যিনি ডানদিকে থাকেন তাকে সব থেকে বেশি দক্ষ হতে হয়।এক কথায় একজন নেতা যেমন দল পরিচালনা করেন ,ধানের বীজ তলা রোপন কাজে যিনি ডান দিকে থাকেন তাকে সবাই অনুসরণ করে চলে। এ কারণে ডানদিকের রোপনকারীকে বাকিরা সম্ভ্রমের চোখে দেখে। 

 

সুকুমার একটু থেমে আবার জানতে চাইল ,-"কিরে প্রতিযোগিতায় আসবি তো?"

 

 নীরবতা ভেঙে উদাসীন গলায় শুক্কুলি বললো ,-"দেখি চিন্তা ভাবনা করে !"

 

সেদিন ভোররাতে ঘুম ভেঙ্গে শুক্কুলি বসে আছে তার কুঁড়েঘরে। বাঁশ বাগানে হাজারো ঝিঁঝি পোকার ঐকতান । তার মধ্যে আছে শিয়ালের দাপাদাপি । এ সব অবশ্য শুক্কুলির গা সোওয়া ।

 

  এই কিছুদিন আগে পাড়ার ছোঁড়ারা এসেছিল তাকে ভূতের ভয় দেখাতে। প্রতিদিনের মতো শুক্কুলিও সেদিন রাঁধতে বসেছিল সাঁঝবেলাতে ।তপ্ত তেলে মাছের পিসটাকে খুন্তি দিয়ে নিপুন হাতে সবেমাত্র উল্টে দিয়েছিল, অমনি কোথা থেকে একটা হাত তার সামনে চলে এসেছিল,সঙ্গে নাকি সুরে কথা ,-"এঁই এঁকটা মাঁছ দিঁবি ?"

 

তৎক্ষণাৎ "এই নে" বলে সেই পাতা হাতের উপর শুক্কুলি চেপে ধরেছিল গরম তেলে ডোবানো নুন ,লংকা-হলুদ গুঁড়ো মেশানো লোহার খুন্তি খানা। তাতেই ভূত বাবাজির ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! এদিকে মজা দেখতে আসা ভূতের সঙ্গীরাও সব পগারপাড় !শেষে শুক্কুলিকেই এগিয়ে আসতে হয়েছিল ভূতকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।

 

 আঁধার রাতে একলা ঘরে বসে শুক্কুলি চেয়ে থাকে বাঁশ বাগানের প্রান্তে এক গৃহস্থ ঘরের দিকে। যেখানে থেকে মৃদু আলো দেখা যাচ্ছে। 

 

বাড়িটি শুক্কুলির বাপের ঘর। বাঁশবন থেকে তার দূরত্ব কতটুকু ,মেরে কেটে দুই আড়াই মিনিটের হাঁটা পথ হবে !তবুও অনেক দূর,যেখানে সে হয়তো কোনদিনই পৌঁছাতে পারবে না!শুক্কুলি শুনেছে তার ছোট ভাজের ফুটফুটে এক খোকা হয়েছে!সে এখন আঁতুড়ঘরে ।এ আলো নিশ্চয়ই ঐ ঘরের হবে!

 

সময়টা কত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল ! নিঃশ্বাস ফেললো শুক্কুলি।আজন্ম কাল যে বাড়িটি ছিল তার নিশ্চিন্ত আশ্রয়স্থল , যেখানে তার চির পরিচিত,নিকট আপনজনেরা থাকে সেখান থেকে শুক্কুলি এখন অনেক দূরে!এখন সেখানে তার প্রবেশ এখন নিষেধ! ছোটবেলায় যে বাঁশবনের দিকে তাকাতে ভয় পেত ,সেখানে এখন তার আশ্রয় স্থল !

 

শুক্কুলির বাপের বাড়ির অধিকার তার বাবা নিজেই কেড়ে নিয়েছেন। স্বামীর ঘর করেনি শুক্কুলি এই অপরাধে তাকে ত্যাগ করেছেন।এবং ভাইরাও বাবার পথ অনুসরণ করেছে।

 

 নিঃশ্বাস ফেলল শুক্কুলি ।কত তাড়াতাড়ি সব ভুলে যেতে পারে সবাই !

 

আর স্বামীর ঘর ?

 

শুক্কুলি তখন নব যুবতী, সদ্য ফুটে ওঠা ফুল । স্বামীর ঘরে যাওয়ার আগে ভেবেছিল, সেখানে প্রতিদিন চাঁদ উঠবে, কোকিল গান গাইবে ,মৌমাছি গুনগুন নিয়ে যাবে। তা নয়, অদ্ভুত এক শীতলতা! বাসর রাতেই লেগেছিল খটকা! মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শেষ না হতেই তাকে নামতে হয়েছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায়! স্বামীরই ঘনিষ্ট বন্ধু সবাই তাকে ডাকে খাঁদা ।শুক্কুলিও কোনোভাবে সহ্য করতে পারত না তাকে। স্বামীকে নিয়ে তার সাথে চলল দড়ি টানাটানি !মাঝখানে থেকে খাঁদাই জিতে নিল তার স্বামীকে! পরাজিত শুক্কুলি এরপর বিতাড়িত হলো স্বামীর ঘর থেকে। 

 

 গ্রামের জ্ঞাতি ভাজেরা আজও বুঝিয়ে বলে, যা শুক্কুলি যা, শৌরবাড়ি ফিরে যা, কি আর করবি! তোর ভাতার আজও বে করেনে!"  

 

শুক্কুলিও তাদের বোঝাতে পারেনি, খাঁদাকে নিয়ে খুব সুখেই আছে তার বর!

 

* * *

 

আজ শ্রাবণের ভরা মুরসুমে ধলের বাদায় হবে ধান রোপন প্রতিযোগিতা । তাই, দর্শনার্থী গ্রামের মানুষ সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়েছে পাকা রাস্তার উপর,যেখান থেকে খুব সহজে দেখা যাবে । এবং ভীড়ের এই সুযোগ নিয়ে কয়েক জন গ্রামবাসী ঘুগনি, চপ - ফুলুরির দোকান ও দিয়ে বসেছে। 

 

 ভরা বর্ষার জল থই থই বাদায় প্রতিযোগী।সবাই নেমেছে ধুতিতে মালকোছা বেঁধে।একা মেয়ে মানুষ শুক্কুলি নেমেছে শাড়িতে গাছ কোমর বেঁধে। 

 

প্রতিযোগিতায় সুবল হয়েছে পরিচালক । তার নির্দেশে শুরু হল প্রতিযোগিতা। টপাটপ বীজ তলা রোপন শুরু করে প্রতিযোগিরা। 

 

সুবলের তীক্ষ্ণ নজর সমস্ত প্রতিযোগীর দিকেই । 

 

ধানের বীজ তলা রোপন খুব সহজ কাজ নয়। এর নিয়ম আছে। ভালো ফসল পেতে উর্বর মাটি, পর্যাপ্ত জলের পাশাপাশি একজন দক্ষ কৃষকের পরিশ্রমের অবদানও কম নয়, জলকাদায় এলোমেলো ইচ্ছেমতো বীজ তলার রোপন করা যায় না, সারিবদ্ধ নির্দিষ্ট সম দূরত্ব হওয়া চাই। এবং সেই দূরত্ব মাপার কোন ফিতে কৃষকের কাছে থাকে না । কোন কোন প্রতিযোগী তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বীজ তলা ভালো করে পোঁতে হয়নি। জলের উপরে বীজতলার গোড়া শুদ্ধ ভেসে উঠেছে। 

 

শুক্কুলি চলেছে তার স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে ,অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দ্রুতগতিতে বীজ তলা রোপন করতে করতে এগিয়ে চলেছে। 

 

সুবলের মনে পড়ল প্রতিযোগিতা আসল উদ্দেশ্যের কথা ।সরস ভঙ্গিতে শুক্কুলির উদ্দেশ্যে হাঁক দিল ,-"ও দি ,তোর কাপড় চোপড় সব ঠিক করে নে।"

 

 কজের ঝোঁকে মগ্ন শুক্কুলি অপ্রস্তুতের মধ্যে পড়ে থমকে গেল। লজ্জা পেয়ে ,রোপণ কাজ বন্ধ রেখে,তাড়াতাড়ি.করে পরনের শাড়ি টেনেটুনে ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। 

 

 

 প্রতিযোগিতার শেষে পুরস্কার উঠলো সুকুমারের হাতে।পুরস্কার স্বরূপ পিতলের জগ হাতে সুকুমারকে নিয়ে ননী,ফনী, গুপিদের প্রবল উল্লাসে জয়ধ্বনি শুরু হল। এরমধ্যে হঠাৎ শুক্কুলির চোখ গেল সুবলের দিকে ।তার ঠোটের কোণে বিদ্রুপের হাসি দেখে কেন জানিনা খাঁদার মুখের সঙ্গে মিল খুঁজে পেলে শুক্কুলি। যা দেখে তার চোখ দুটি হিংস্র স্বাপদের মতো জ্বলে উঠলো। 

 

* * *

 

পড়ন্ত বেলায় ভরা কলসি কাঁখে নির্জন বাঁশবনের পথ ধরে ঘরে ফিরছিল শুক্কুলি। এমনি প্রতিদিনই সে ফেরে। আজ হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হল তাকে !বুকটাও কেমন ধক করে উঠলো । 

 

সামনে পথ আগলে স্থির মূর্তির মতো সুকুমার দাঁড়িয়ে ! 

 

তার হাতে একখানা পিতলের জগ,যে টা সে ধান রোপণ প্রতিযোগিতা থেকে পেয়েছিল।  

 

 আলো-আঁধারিতে সুকুমারের মুখখানা আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগছে! 

 

মুহূর্তের জড়তা কাটিয়ে তীব্র কণ্ঠে শুক্কুলি জিজ্ঞাসা করল, -"পথের মধ্যি, এমন করে দিঁইড়ে আছিস কেন ? "

 

 স্থির মূর্তি মৃদু কন্ঠে ডাকল "শুক্লা! "

 

চমকে উঠলো শুক্লা।

 

 সুকুমারের মুখের দিকে চেয়ে মনে হল ,এত যত্ন করে কেউ তাকে ডাকেনি কোনদিন। 

 

সুকুমার আবার বলল ,-"এ জগখানা তুমি রাখো শুক্লা। এটা তোমার। "

 

যেন সম্বিত ফিরল শুক্লার বলল ,-'কেন! "

 

সুকুমার বলল, -"কারণ তুমি জিতেছো শুক্লা!আমি নই। "

 

শুক্লা আরো অবাক হয়েগেল।

 

সুকুমার ধীরে ধীরে বলল ,-"মনে করে দেখো, আমরা তলা রুইছিলাম ,সুবল হঠাৎ চিৎকার করে বললে উঠল, ও দি তোর কাপড়-চোপড় সব ঠিক করে নে। তুমি তখন রোয়া বন্ধ করে কাপড় ঠিক করতে লাগলে। আর আমি এই সুযোগে তোমার। চেয়ে এগিয়ে।গেলাম। "

 

এবার সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল শুক্লার ।

 

   দীপ্ত কন্ঠে বলল ,-" তবে এমন কেন করলে?"

 

 সুকুমার বলল, -' মেয়ে লোকেদের সম্মান দিতি আমরা কোনদিন শিখিনি!আমাদের কেউ শিকোয় নি। তাই তোমার সুনাম সহ্য হচ্ছিল না । "

 

রাগে দুঃখে অভিমানে শুক্লা বলল,-"তবে এখন কেন? "

 

সুকুমার বলল ,-"ক্ষমা করে দাও, এবার থেকে সম্মান দিয়ে চলবো! "বলতে বলতে সুকুমার শুক্লার মুখের দিকে চেয়ে দেখলো কাজল কালো দুচোখ থেকে জলের ধারা নেমেছে! 

 

                  সমাপ্ত

তারিখ- 

২৬ জুন, ২০২৩