click on images to know more about the Images

চল্লিশ বছর পর

Author: নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল

       রোগ নয় নয় রোগ নয় নয় রিংটোন অনর্গল বেজেই যাচ্ছে। তখন সবজির দোকানে বেশ কচি কচি করলা গুলি বেছে বেছে ওজন করা গামলায় রাখছে নিপু । ততক্ষনে পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে রিং কেটে গেল। ভাবল মিস কল। হ‍্যাঁ ইচ্ছে থাকলেও ফোন ধরতে না পারলেই সেটা মিস কলেই হয়ে যায় স্বাভাবিক ভাবেই । ঘুরিয়ে ফোন করল । ফোন রিসিভ হলো। লেডিজ কন্ঠে আমি প্রভাতী । কোনো ভাবেই ঠাউর হলো না। প্রভাতী কে? তবে কথা হতে থাকল। নিপুও কানা ধরা দিল না। তোমার কয় ছেলে কয় মেয়ে ? নিপু - আমার ছেলে নেই দুই মেয়ে। তোমার কয় ছেলে কয় মেয়ে ? প্রঃ আমার মেয়ে নেই দুই ছেলে ছিল। ছোটোটা এক্সিডেন্টে চলে গেছে। বড়োটার বিয়ে দিয়েছি নাতনি ফাইভবে পড়ে। সেই ডাঁড়া পারের ঘাটটা এখন কি রকম হয়েছে। সেখানে কি সেতু হয়েছে ? নিপু কোথাকার ঘাট? প্রঃ আরে সেই তেজসিংহ পুর থেকে আমাদের হেড়াম পুরের স্কুলে আসার শিয়াল মারিতে মিশে যাওয়া গুমানি নদীর ঘাট। হাটু জলের ভরসায় নেমে প্রায়ই পাজামা ভিজে যেত। তোমরা ঠাঠ্টা করতে কিগো মাছ ধরে এলা নাকি ? ঐ ঘাট দিয়ে তিন চার খানা গ্রামের সহপাঠিরা এবং বিদ‍্যালয়ের অন‍‍্যান‍্য অনেক ছাত্র/ছাত্রীরা যাওয়া আসা নিত‍্য দিন । নিপুঃ - হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ সেই ঘাটে এখন বড় সাঁকো। ঐ ঘাটের পারাপারের দুর্দশা এখন ইতিহাস। এখনকার ছেলেমেয়েদের বললে বিশ্বাসিই করবে না। বিদ‍্যালয়ের সব অন‍্যায়ের প্রতিবাদ করতো সেই জালালের সংবাদ জানো ? প্রঃ- নাতো। জালাল চাকরিও পেয়েছিল। তার সুন্দর একটা ভালোবাসার সংসারও হয়েছিল। তার দুটি মেয়েই খুব মেধাবী। তারা চাকরিও পেয়েছে। কিন্তু এসব বেশিদিন দেখার সময় পেলনা বেচারি। ভালোবাসার মানুষটি আগে নিজেও কবছর পরে নাফেরার দেশে চলে গেছে। প্রঃ- এবার আর সবের সংবাদ বলো। মোসারফ ফেরদৌসী রোসেনারা সুরেমা চাকরি পেয়েছে। ফেরদৌসীর ছেলে মস্তবড় অফিসার SDO হয়েছে। আরও অনেক সংবাদ জানাজানি হল তাতে দুঃখ পাওয়ারটা দুঃখ পেলো আনন্দ পাওয়ার টাই আনন্দ পেল প্রভাতী । যেনো এক নিঃশ্বাসে বলতে চাই নিপু আর এক নিঃশ্বাসে সব সংবাদ শুনতেও চাই প্রভাতী। নিপু কোন সংবাদটা আগে বলবে কোনটা পরে বলবে ঠিক পায়না। প্রভাতী হাঁরে সেই আশিষ। যেই আশিষ আর তুই একদিন ভাঙ্গা ইটের স্তুপে গল্প করছিলিস আর হেড মাস্টার পিছন দিক দিয়ে চুপিচুপি কঞ্চির জ্ঞান যষ্টি দ্বারা সাটা সাট দিয়ে ছিল । পিছন দিকে তাকিয়েই দে চ্ছুট। নিপু- তখন খুব মজা পেয়ে ছিলিস না ? প্রঃ সত‍্যি বলতে এখনো লজ্জা না তবে পিঠে লাগছে। ঐ পিঠের ছড়ির সাট যেনো আমার পিঠেও সাটাসাট লেগে যেনো পিঠটা ছিনমিনিয়ে বেঁকিয়ে গিয়েছিল। নিপু- বলো, কিগো , ঘুর্নাক্ষরেতো বুঝতে দাওনি। প্রঃ - আঃ পোড়া কপাল আমার. বলতে পারলে কি তুমি আর আমির মধ‍্যে এতো দূরত্বে থাকতো হতো। তখন বুঝতাম কিছুই কাউকে ভালো লেগে তার প্রতি মন আশক্ত হলে কি করতে হয়, কি করা ভালো, কিকি বলতে হয় সবই ছিল অজানা। তবে মন কেমন কেমন করত। তোমার দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগত। যাই হোক আজ সবই অতীত। এখনতো আর ওরকম হয়না। আর কোনো ভয়ও নেই। সময় করে একদিন এসোনা কেন। নিপু- এই বলো কিগো দাদা ধরে পিটাবে। প্রঃ নাগো ও ওরকম মোটেই নেই। মাটির মানুষ। এলে বুঝতে পারবে ওকে পেয়ে আমি মনে হয় খুব ঠকিনি। নিপু- বেশ, শুনে খুব ভালো লাগল। ও তোমাকে সুখী করতে পেরেছে বলে। আচ্ছা তাহলে অনেক কথায়, হয়ে গেল কথায় কথায়। আজকের মতো রাখি তবে । প্রঃ - আচ্ছা ভালো থেকো। একদিন আসবে কিন্তু অবশ‍্যই ; কেমন ? নিপুর ফোন রেখে মনটা কেমন যেনো হয়েগেল। স্কুলে আসার ঘাটের, টিফিন খাওয়ার, প্রভাতির আনা কুল ও কুলের খাওয়া সব কিছুই যেনো মনের ক‍্যানভাসে ভাসতে লাগল। চায়ের কাপ রাখার ঠক শব্দে যেনো ঘোর কাটল। কাপ রেখে বৌ ততোক্ষনে চৌকাট পার হয়েগেছে। চায়ের কাপটি হাতে নিয়ে এক চুমক দিয়েই রেখে দিল। চাটা খুবই গরম।

        হঠাৎই একদিন গিয়ে হাজির হল প্রভাতির বাড়ি । কিন্তু খেয়ালেই নেই যে একবার ফোন করে আসতে হতো। কোথায় আর যাবে হয়তো বাড়িতেই থাকবে। গলার আওয়াজের পরিচিত নিশ্চয় এতোদিনে মনে নেই। বাইরে একজন খোঁজ করছে শুনে হয়তো স্বামী মহারাজ বা পুত্র বধু এসে খোঁজ নেবে। তার পরে প্রভাতি এসে আইডেন্টিফাই করার পর বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি হবে। অহেতুক বাইরে দাড়িয়ে থাকার কৈফিয়ত জারি হবে। সে বুঝতেই চাইবে না যে বিনা আইডেন্টিফায়ের আগে কারো বাড়িতে প্রবেশ করলে সেটা হয় অনধিকার প্রবেশ। প্রথমে স্বপন পুরের মোড়, সেখান থেকে জয়রাম পুর, জয়পুর থেকে গাজী পাড়া মাদ্রাসার মোড় সেখানে ডাইনে গিয়ে রাধাগোবিন্দ মন্দির সেখান থেকে একটু বায়ে গিয়ে সামনে একটা চায়ের দোকান। সেখানেই জিজ্ঞাসা করে পাওয়া যাবে ঐ যে সামনে কারেন্টের পোল খাড়া বাড়িতে। এসবই মুখস্ত হয়েছে প্রভাতির ফোনে ঠিকানার বিবরণে। এ সবই একবার মনে মনে রিহারসেল হয়ে গেল আর কি। সব ঠিক ঠাক আছে। দিলাম গেটের সামনে নক করলাম বাড়িতে কে আছে ? বেরিয়ে এল এক জন ষাটোর্ধ কিন্তু বৃদ্ধ বলা যাবে না। কাকে চায় ? অনুমান করেই বললাম আপনি কি অনীল মণ্ডল ? হ‍্যাঁ আমিই অনীল মণ্ডল। আমি প্রভাতির ক্লাসমেট আপনাদের সাবেক দেশের গ্রামে থাকতে। অঃ বসে কথা হবে বাড়ির দিকে চলুন। বাড়ির ভিতরে গিয়ে একটা চাদর পাতা তক্তপোষে বসলাম। অঃ আসতে অসবিধা হয়নিতো? না না মানুষ জিজ্ঞাসা করতে করতে ঢাকা দিল্লি সবইতো যাওয়া যায়। অঃ বৌমা চা করো। আমি বললাম, প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চিনি বাদ লাল চা মানে শুধু জল আর চা। পুত্রবধু প্রায় সামনা সামনি ছিল। সে বলল একটু লবন আদা তেজপাতা দেব। আঃ হ‍্যাঁ তেজপাতা আদা চলবে লবনটা চলবে না। সবই ঠিকঠাক চলছে কিন্তু প্রভাতি কোথায় ? ও একটু সেই আগের মতো মজা করছে নাতো। কতটা আকর্ষণ আন্দাজ করার জন‍্য। আমারও সরাসরি প্রভাতির কথা খোঁজ নিতে লজ্জাবোধ হচ্ছে। কি জানি আবার প্রভাতির প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ পায়। অনীল কিছু আন্দাজ করে। মানে চোরের মন পুলিশ পুলিশ। দুর্বলতাতো আছেই। একথা সেকথার পর আর ধৈর্য্য ধরে না। শেষমেশ আর ধৈর্য্য ধরল না। বললাম প্রভাতি কি কাজে খুব ব‍্যাস্ত আছে ? অঃ ওতো বাড়ি নেই। ওর মাস্তুত দিদির শাশুড়ি মারা গেছে তারিই কাজে গেছে। আপনি ভাইরার বাড়ি যাননি ?

অঃ তেমন কোথাও আমার যেতে ভালো লাগেনা তার পরে যা গরম পড়ছে । আপনি আসার সময় ফোন করেননি কেন ? আমার আসার ফোন করে না আসার আনাড়ি কাজটা ধরা দিলাম না। মানে কানা ধরা দিলাম না। আমি বললাম আমি একটি এমার্জেন্সি কাজে এসেছি তাই ফোন করে আসেনি প্রভাতি না থাকলেও আমাকে আসতেই হত। আসলেই প্রভাতির আমার কাছে যে নম্বরটি আছে সেটি ডিস্টার্ব আছে। পুত্র বধুর ফোন থেকে ওর শাশুড়িকে ফোন লাগাল। ফোনে বলা হল যে, আপনার ক্লাসমেট বন্ধ নৃপেন মাস্টার মহাশয় এসেছেন। আমাকে মোবাইলটি ধরিয়ে দেওয়া হল। মেয়ে কিন্তু এড়ে গলার আওয়াজে মনে হল ওখানে যোগমায়া আছে। যোঃ - হারে আমার কাছে নৃপেনদা মামার বাড়ি এলেই মাঝে সাঝে আসে। নিপুদা আমরা এক সঙ্গে DELED ট্রেনিং করার সময় কতবার তোর ফোন নম্বর চেয়েছে আমি দিতে পারিনি। যোগমায়ার নামের সঙ্গে কোথায় যেন একটা বন্ধুর সঙ্গে আরেক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে দেওয়ার বিষয়ে নামের সার্থকতা আছে। নৃপেনদা তুমি এখানেই চলে এসো। ঐ আর কত রাস্তা ৩৫ কিমি হবে। নিপু- কি জানি কি করব। ভেবে না ভেবে বলে দিল দেখছি পারলে আসছি। কথাটার যাওয়ার পক্ষেই বেশি জোর ছিল। অঃ - একটু বসো আমি একটু আসছি।নিপু এই আসছি কথার অর্থ বাজারে কিছু টিফিন আনার জন‍্যই হবে। নিপু প্রাণপণে বাঁধা দিল। কিন্তু বাঁধা অবাঁধ‍্য হয়ে গেল। একইতো এতদিনের বন্ধ এসেছে বাড়িতে আর কিছু না খাইয়ে ---- হতেই পারেনা। আমি নিরস্ত্র হলাম। অঃ আরে ভাই থাকো না কেন কালেই ফোনে ডেকে নিচ্ছি। প্রভাতি নেই নিপুর একটুও ভালো লাগছে না এটা বলাও যায় না। নিতান্তই ইন্ডিভিযুয়‍্যাল । নিপু খুব ব‍্যাস্ততা দেখিয়ে, এক বুক হতাসা নিয়ে সঙ্গে এক আত্মীয় ছিল তাকে সঙ্গে নিয়ে সৌন্দল পুর রাজ বাড়ির প্রায় পাঁচ শত বছরের পুরনো দোল যাত্রার উদ্দেশ্য রওনা হল । ভাবল মেলায় এক চক্রর লাগিয়ে দুলাল মামার বাড়িতে দেখা করেই বেরিয়ে যাবে প্রভাতীর দিদির বাড়ির উদ্দেশ্যে। এবার দোল যাত্রার মেলা থেকে দুলাল মামার বাড়িতে এসে আটকে গেল কোনো ভাবেই বের হতে দিল না। প্রভাতীর নিকট যাওয়া হলনা । কিন্তু প্রভাতী যোগমায়া জান ছিল যে নিপু আআসবেই। পরের দিন সকালে প্রভাতীকে ফোন করলে ফোনে যোগাযোগ করতে পারল না। আসলে প্রভাতীর আগের নম্বরটি বন্ধই আছে। প্রভাতীর বাড়িতে ফোন করা হয়েছিল অন‍্য নম্বরে। নিপু মনে করেছিল আগের নম্বরটি খুলে গেছে। প্রভাতীর বাড়িতে ফোন করে যোগাযোগ করতে পারল না। হয়তো মোবাইল বন্ধ করে চার্জে দিয়েছে। অত সকাল বেলায় মোবাইলের সুয়িচ অন করাই হয়নি। নিপু সাত পাঁচ ভেবে মহিষমারী লক্ষীনারায়ন পুর উদ্দেশ্যে রওনা হল। কারণ নিপুর গতদিন মহিষমারিতে যাওয়ারই কথা ছিল সেই সেখানেই প্রভাতী থাকার সম্ভাবনা বেশি। এদিকে প্রভাতী বাড়িতে ফোন করে যোগাযোগ করতে পারল না। ঐ একই কারণে ফোনের সুয়িচ অফ। প্রভাতী ভাবল গত রাত্রি পর্যন্ত যখন আসতে পারলনা তখন হয়তো তার বাড়িতেই নিপু আছে নতুবা কোনো আত্মীয়র বাড়িতে থাকবে। নিপুর কোনো ফোন নম্বর ছিল না। কারণ বাড়ির ফোন থেকেই নিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করানো হয়েছিল বাড়ির অন‍্য একটি নম্বর থেকে। এই(ভাবেই নিপু ও প্রভাতীর সঙ্গে সেই সকালে যোগাযোগ হল না। লক্ষ্ণীনারায়ন পুর হাটের মোড় থেকে ভোর পাঁচটার সময় একটি বাস ছাড়ে। সেই বাসে প্রভাতী চড়ে বসল নিপুর সঙ্গে চল্লিশ বছর পর দেখা করার জন‍্য হাজারো মনের মধ‍্যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। য‍েন মন শিহরিত হয়ে চলে গেল কল্পনার সাগরে। নিপু চল্লিশ বছর পর দেখতেই বা কেমন হয়েছে। দেখা হওয়া মাত্র কি কথা দিয়েই বা কথা বলা শুরু করবে। চল্লিশ বছর আগে কত গল্পই না হত কত ইয়ার্কির মাধ‍্যমে। সে সব কথার কোনোটার মুন্ডু মাথাও হয়তো থাকতো না। একে অপরকে কথায় হারানোর জন‍্য কত রকম কিউরিটি করে কথা হত কখনো সহপাঠীদের দলের মধ‍্যে কখনো দুজনের মধ‍্যে। স্কুল জীবনের হাজারো স্মৃতিরমতে ভিড় করে এক সঙ্গে মনে হাজির হতে লাগল। গ্রামের রাস্তা পিচ রোড ধরে চলেছে বাস। রাস্তায় ঢেউ খেলানো বাঁকের অভাব নেই। যেনো ডাইভারের একটা পরিক্ষা হচ্ছে কত খারাপ রাস্তা দিয়ে কত ভালো গাড়ি চালানো যায় । এদিকে গাড়ি কেমন চলছে তাতে প্রভাতীর কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। তার মনের গহনে এখন অতীত স্মৃতির ঢেউ উথলে পড়েছে শ্রাবনের অঝোর বৃষ্টির ধারার মত অঝর ধারাই ভেসে চলেছে। সমভাবেই নিপু মনের এক আকাশ স্মৃতির বন‍্যা নিয়ে স্মৃতি চারনা করতে করতে প্রভাতীর উদ্দেশ্যে লক্ষ্ণীনারায়ন পুরের দিকে । কিন্তু হায়রে আজ নিয়তির খেলাই তাদের গমন পরস্পরের বিপরীতে। এ যেনো শ্রাবনের উথলে পড়া ভরা নদীর গমনের অভিমুখ পরস্পরের বিপরীতে। নিপু মটর সাইকেলে আসছিল একটু আগেই এসে পড়ল। খোজ খবর নিয়ে দেখল প্রভাতী চলে গেছে। ঐ বাড়িতেই ছিল এক পিস্তাতো বোন যোগমায়া । যোগমায়ার তাদের ব‍্যাপারে একটু কিউরিসিটি ছিলই। সেও একই বিদ‍্যালয়েই পড়ত। কিন্তু সে ছিল জুনিয়ার। সে কেবল মাত্র চারাচুর বাদাম বারোভাজার স্বাদ পেতো মাঝে মধ‍্যে। যোগমায়ার পস্তানির অভিনয়ের মধ‍্যে দিয়ে হা হুতাস করে আপসোস মাখা কথা দিয়ে কৌতুকের খোঁচায় খোঁচায় মজা নিল খুব। এদিকে নিপুর মনের গহনে জ্বলছে ব‍্যর্থতার দাবানল। চন্দনা প্রভাতীর বাড়িতে ফোন করে জানলো, "আপনার ফোন করা (16) নম্বরটি বর্তমানে নিপু এবার ভুল করল না বাড়ির অপর নম্বরটি। নিপুও কয়েক বার ফোন করল ঐ একই কথা। কিছুটা লজ্জায় পড়েই বেরিয়ে যাচ্ছিল এক লালচা খেয়েই। মুহূর্তে যোগমায়া বলে উঠল, "এখন তাহলে কোথায় দিদির দেখা নাপেয়ে হতাসায় ভুগছেন নাকি ?" নিঃ ,"আরে চল্লিশ বছর ধরে কি তোমার দিদির পিছনে পড়েছিলাম নাকি?" যোঃ-- "তা না "। হয়তো ঠিক উত্তরটা জানা থাকলেও দিল না। নিপু- 'স্কুল আছে, মামার বাড়ি দেখা করেই চলে যাব, তোমার দিদির সঙ্গে এবারের মত আর দেখা হলনা। ডুমুরের ফুল হয়েই থাকুক।" কিন্তু স্কুল ছিল ছিলো না। আকাঙ্ক্ষা আগ্রহ আবেগ যাতে ধরা না পড়ে তার একটা অভিনয় দেখিয়ে বেরিয়ে গেল সেই ডুমুর ফুলের উদ্দেশ্য। যেন পুরনো প্রেম আসক্তি আকাঙ্ক্ষা ভর করে বসেছে। না প্রভাতীর সঙ্গে দেখা করতেই হবে। না করলেই নেই। দুজনেরই ভরা সংসার। কেন এতো আজ একটা আশক্তি বহু জজন বেড়ে গেল নিপু কিছুই ভেবে পায়না। আশক্তি আকাঙ্ক্ষা মনকে আস্টেপিস্টে গ্রাস করল। মনে পড়ল বাংলাদেশের জন প্রিয় গায়িকা মমতাজের গানের কলি:-

 " যার প্রেমে যার মন মইযাছেরে সখী-- 

    তারে কি আর ভুলা যায় 

আশি বছর পরেও তারে একদিন মনে চায়।" 

এই গানের সার্থকতা মর্মে মর্মে উপলব্ধি হল। যাই হোক দিধাদন্দ ঝেড়ে ফেলে মন স্থীর করল প্রভাতীর সঙ্গে আজেই দেখা করতেই হবে । সাগর পাড়া করিমপুর মেন রোডে পকেট রাস্তা উঠেছে । উঠতেইসডান দিকের কোনে কয়েকটি দোকানে মেন রোডের টার্নিং পয়েন্টকে আড়াল করে রেখেছে। ঠিক তেমনেই মেন রোড বেয়ে জলঙ্গী থেকে সাগর পাড়া আসার সময় গাড়ির ডাইভারও বাম দিকের পকেট রাস্তায় উঠে আসা কাউকে স্বাভাবিক ভাবেই দেখতে পাচ্ছে না। তা ছাড়া গ্রামের ট্রাকটর চালক ওতো ঠিক ঠাক গাড়ি চালানোর নিয়ম কানন জানেও না, জানলেও ইয়ং বয়স গাড়ি চালনোর নিয়ম কাননের ধারও ধারে না । এখনো সকালের ঘোর কাটিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিড় জমেনি। নিপু মেন রোডে উঠা মাত্র মেন রোডের ডান দিক দিয়ে মাটি ভর্তি ট্রাকটর কিছু না বোঝার আগেই মুহূর্তের মধ‍্যেই নিপুকে পিসে দিয়ে চলে গেল। মোড়ের চায়ের দোকানে কয়েকটি লোক সকালের প্রথম করা চায়ের কাপে সবে চুমক দিয়ে তুফান তুলেছে । কাপ ফেলে গিয়ে দেখে প্রায় সব শেষ। শুধু মাত্র খুব ক্ষীণ প্রাণের স্পন্দন আছে মাত্র। ছিটকে পড়া মোবাইল থেকে সেই দিনের ফোনের প্রথম কল লিষ্টের নম্বরে ফোন করা হলে ফোন ধরে প্রভাতী। ততক্ষণে কেবল মাত্র ফোনের সুয়িচ অন হয়েছে। সুয়িচ অন মাত্র রিংটা বেজে উঠে। তৎক্ষণাত শশব‍্যস্ত হয়ে কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল হাসপাতালে। গিয়ে দেখে নিপুর প্রায় নিথর গোটা দেহটা জমাট বাধা রক্তে ভিজা ব‍্যানডেজে জড়ানো। প্রভাতী মাথাটা ধরে মুখটি নিজের দিকে ঘুরিয়ে অনর্গল ডাকতে লাগল, " নিপু আমি এসেগেছি কথা বলো । " নিপু প্রায় অসাড় দেহের সমস্ত প্রাণ শক্তি সঞ্চয় করে একবার কি যেন বলতে গিয়ে ব‍্যর্থ হয়ে পুনরায় প্রাণ উজাড় করা শক্তি দিয়ে অনেক কষ্টে কয়েক বারের চেষ্টায় বলল শুধু , " চল্লিশ বছর পরে" বলেই প্রাভতীর হাতটি শক্ত করে ধরে রাখা নিপুর হাতটি মুহুর্তে শিথিল অসাড় হয়ে গেল।