click on images to know more about the Images
আখরি গঞ্জ একটি জন বহুল গ্রাম। এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। হাটে প্রায় আশপাশের প্রত্যান্ত গ্রাম গুলি থেকে হাপ শতকের বেশি গ্রামের মানুষ। এখানেই বেচাকেনা করে তিন বা চার দিনের চাল ডাল শাক সবজি আনাজপত্র । আখরি গঞ্জের উত্তর পূর্ব দিকে একটি বিস্তীর্ন মাঠ। মাঠের শেষ প্রায় একটি প্রকান্ড ছাতিমের গাছ। এই মাঠে চাষ বাসের জন্য আসা মানষ্য কুলের অন্ন দাতাদের এবং এই মাঠ চিরে গরুর গাড়ির লিক বরাবর মেঠো রাস্তার যাওয়া আশা যাত্রীদের প্রধান রাস্তা। ভাদ্র মাসে ভাদই ধান তোলার সময় প্রায় গরুর চাকা পুতে ফেসে থাকতে দেখা যেত । যা পরবর্তীতে মহিশ দ্বারা তুলে নিয়ে যাওয়া হত । এই মাঠের পরেই পদ্মা নদীর অববাহিকার বদ্বীপ আকারে চর ভুমি। এখানে একটা গ্রাম গড়ে উঠেছে তার নাম টিকলি চর। এই গ্রামের বাসিন্দারা দু এক ঘর বামুন নাপিত গুড়হি সম্প্রদায়ের বাদে প্রায় সকলেই চাঁই জন জাতির সম্প্রদায়ের। এই টিকলি চরের মানুষের পদ্মা নদীর করাল আঘাতে ভাঙন এবং বন্যা চির সঙ্গী ছিল বলা যায়। পদ্মা নদীর ফি বছর বন্যায় বয়ে আনা পলি মাটির রেতি টিকলি চরের মাঠকে উর্বর করে তুলতো। তাই এই চর বাসির ঘরে ঘরে ভাদয় ধানের চালের এবং পদ্মা নদীর ছোটো বড়ো মাছের অভাব ছিল না। এই গ্রামের ছেলে মেয়েরা আখরি গঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করতে যেত । আখরি গঞ্জে একটি হাই স্কুলও ছিল। পড়তে যাওয়া এই দলের একটি মেয়ের নাম ছিল বাসন্তী। বাসন্তী চলনে বলনে ছিল চপলা এবং শিক্ষক মহাশয়দের একান্ত অনুগতা ছাত্রী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মহাশয় বর্ষার মরশুমে ছাত্র/ছাত্রিদের ফুল গাছের ও অন্যান্য গাছের চারা আনতে প্রায় বলতেন। সেই দিনও বলে ছিল। বাসন্তী কোন সকালেই ফুলের চারা সংগ্রহ করে রেখে তবেই পড়তে বসেছে। কিন্তু সকালে পড়ার সময় কোথায় ? বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় সাত আট কিলোমিটার। খাওয়ার সময় থাকে না তবুও মার জোরাজরিতে খুব তাড়াতাড়ি করে নাখে মুকে গুজে নেই। সঙ্গে টিফিন দিয়ে দেয় জ্যামরা ভাদয় ধানের লাল ছিড়া ভাজা। কোনো দিন চিড়া ভাজা না থাকলে কাঁচা চিড়েই নিয়ে যেত । সেটা থাকত অগত্য প্যান্টের পকেটে এক পকেট ভরা সেদ্ধ চাল। সেই দিন বাসন্তীরই কথা ছিল ফুলের চারা নিয়ে যাওয়ার । বাসন্তী সেই কথা মতই এক হাতে কয়েকটি ফুলের গোছা করে যাতে শুকিয়ে না যায় তাই চারা গুলি গোড়ার দিকে একটু শক্ত কাদা লেপটে পিঠের দলা মতো করে নিয়েছে । অন্য হাতে পরিপাটি করে সাজানো বয়ের তড়া। সেই দিন ছাতিম গাছ তলা অতিক্রম হতেই একটি প্রায় আট দশ বছরের এক তরুণ বাসন্তীর কাছে ফুলের চারা গুলি চাইল। তরুন - "তোমার ফুলের চারা গুলি দাওনা ফুলের গার্ডেন করব"। বাসন্তী হ্যাঁ দিব! আজ নৃপেন মাস্টার ফুলের চারা আনতে বলেছেন স্কুলে লাগাবে বলে। না, দিতে পারব না মাস্টার বকবে। হ্যাঁ আর দিব বলে। যেনো তরুন বালকটি মহা অপরাধ করে ফেলেছে ফুলের চারা গুলি চেয়ে। আরো অনেকের কাছে ফুলের চারা ও অন্যান্য গাছের চারা ছিল। কিন্তু বাসন্তী যেহেতু দিল না তখন অন্যদের দেওয়ার কথায় নেই। বাসন্তীই ঐ স্কুলে যাওয়া আসার দলের দলনেত্রী বলা যায়। পরেক্ষনেই ছাতিম তলা থেকে কয়েক ধাপ এগিয়েই যেনো বাসন্তীর এই জীবনে প্রথম তার কাছে কিছু চাওয়ার পরে না দেওয়ার অনুশোচনায় মনটা ভরে গিয়ে মনের প্রফুল্লতা আসতে আসতে দূর হয়েগেল। মনে মনে ভাবতে লাগল যে, না দিলাম না দিলাম তবে ছেলেটিকে ঐরকম রূঢ় কথা না বলাই ভালো ছিল । মনে হল একবার ঘুরে যায় গিয়ে সকলেই একটি করে ফুলের ফুলের চারা দিলেইতো অনেক চারা হয়ে যেত । আমি দিলে অবশ্যই সকলেই একটি করে চারা দিত । ঘুরে গেলে আবার বাসস্তীকে অন্যান্য ছাত্র/ছাত্রিরা কিছু ভাবতে পারে আবার সকলে নাও যেতে চাইতে পারে। যদিও ভাবার বয়স কাউরো ছিল না। তখন দলটি যে ছিন্নভিন্ন হওয়ার সম্ভবনাও ছিল তাও বটে। এই ভাবে অনুশোচিত হতে হতে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ছাতিম তলা অনেকটা দূরে পড়ে গেছে। মনে মনে অন্তরে খুব আপশোষ হতে লাগল । শেষমেশ কালকে না হয় কয়েকটি ফুলের চারা দিলেই হবে মনে মনে ভেবে মনের প্রবোদ আনল। পরের দিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে কয়েকটি ফুল গাছের চারা সংগ্রহ করে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। সেই দিন খাওয়ার কোনো ভ্রুক্ষেক নেই। স্কুলে যাওয়ার সময় হওয়া মাত্রই চোখের কোনে ভেসে আছে সেই ছেলেটি। মা ধরে খাইয়ে দিল অনেক বকে ঝকে। দীর্ঘ পথের দুর্গম রাস্তা অতিক্রম করে যেতে হবে এবং আসতে হবে। সেই দিনটা সকাল থেকেই মেঘলা মেঘলা সকালেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিন্তু মেঘলা কাটেনি। তাই বেশিরভাগ সহপাঠী স্কুলে যাবে না। তাই মাত্র কয়েক জন সহপাঠী স্কুলে বেরিয়েছে। ছাতিম তলায় পৌঁছে দেখে সেই তরুণ ছেলেটি আজ নেই । ছাতিম তলাও যেন জন শূন্য । কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করেও কারো আগমন লক্ষ করা গেলনা। মনে মনে একটু আপশোষ করে চারা গুলি গাছ তলায় রেখে দিল। সেই তরু যদি আসে তবে চোখে পড়লে নিয়ে যাবে । স্কুল থেকে ফেরার সময় গাছ তলাই (7) কাওকে দেখতে পেল না । কিন্তু চারা গুলিও দেখতে পেল না। ভাবল হয়তো সেই তরুণেই নিয়ে গেছে। আবার মনে সন্দেহ থেকেও গেল যে যদি বা সেই তরুণ না নিয়ে গিয়ে অন্য কেউ নিয়েও যেতে পারে । ফুল গাছের চারা না দেওয়ার অনুশোচনা কিছুতেই মন থেকে ভুলতে পারছে না বাসন্তী। পরের দিন ভাবল আজ হয়তো পাওয়া যাবে তরুনকে। সেই জন্য সেই দিনও কিছু ফুলের চারা ও অন্যান্য সুলভে পাওয়া গাছের চারা সংগ্রহ করল। নিত্য দিনের মতই স্কুলে যাওয়ার সময়ে খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড়ল। সহ পাঠিরা বলল যে, "হ্যাগে বাসন্তী তোর মাস্টারের ফুলের চারা পরিক্ষা হওয়ার পরেও চাইছে"। বাসন্তী বলল, "নাগে না ঐ সেই যে ছাতিম তলার ছুড়াটা সেই দিন চারা চেয়ে ছিল দিতে পারিনি । আইজ যদি দেখা পায় দিয়ে দেব "। সহ পাঠিরা এক সঙ্গে বলে উঠল, "ক্যানেরে কাইল যে ঐ ছুড়াটার জইন্যে ছাতিম তলাই ফুলের চারা গেলা র্যইখ্যা গেলছিস ? বাসন্তী : রেখে গিয়েছিলাম কিন্তু সে ছুড়াটা যে নিয়েছে তা ঠিক করে বলা যায় কি করে বলত ? সে ছুড়া না নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ছুড়াটার আগেই কেউতো নিয়ে যেতে পারে। বা দেখা গেল গতকাল ছুড়াটা আসেইনি। সকলে বলল তাওতো ঠিক বটে। সহ পাঠি সহ পাঠিনীদের মধ্যে কেউ যেনো বলল, " এই বাসনীটার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি আর আদিখেতা আরও বেশি বেশি। কোথাকার ছুড়া জানা নাই শুনা নাই, তার জন্য যেন প্রাণ ছুটে গেল। যেনো ফুলের দিতেই হবে তার জন্য যতই যুদ্ধ করতে হয় হবে।"' কেউ যেনো বলল একেবারে দেখ আবার ছুড়ার পিছনে মন গৈল্যাছে নাকি। যাই হোক সেদিনও ছেলেটির দেখা পাওয়া গেল না। বেশি ভাবনা চিন্তা না করে গতকালের নির্দিষ্ট জায়গাই চারা গুলি রেখে দিয়ে বিদ্যালয় অভিমুখে হল। বেশি ধ্যানাই ফান্যায় করল না কারণ ইতিমধ্যেই সহপাঠী সহপাঠীনীরা ট্রোল করতে লেগে গেছে। কিন্তু বাসন্তী ভুলতেও পারে না সদ্য ফুটা পদ্মের পাপড়ি মতো ছেলেটির বদন খানা। কেন যে সেই দিন ফুলের চারা গুলি দিল না। দিন দিন ছেলেটির মুখের চাহনির কথা ভেবে ভেবে আনমনা হয়ে যায় । অতটুকু বালক কিন্তু পৃথিবীর বুকে গাছ লাগিয়ে মানুষের প্রাণবায়ুর ভান্ডার সৃষ্টির কত বড় মানব কল্যানের বাসনা। বিদ্যালয় যাওয়ার সময় ছাতিম তলা এলেই সহপাঠী সহপাঠীনীদের ট্রোল শুরু হয়ে যায়। তাই নিত্য দিন সকলের ট্রোল উপেক্ষা করেই পূর্বের দিনের সংগ্রহ করে রাখা বিভিন্ন গাছের চারা গুলি রেখে যেতে লাগল। বিদ্যালয় দিবস চলাকালীন এই রুটিন কাজটির কোনো ভাবেই বিঘ্ন ঘটল না । এই ভাবেই বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। বহু কষ্টে সংগ্রীহিত বিভিন্ন ফুলের গাছের চারা থেকে শুরু করে মহীরুহ বৃক্ষের চারা গুলিও নিত্য রেখে যেত কিন্তু চারা গুলিও সেখানে আর দেখতে পেত না। কোনো ভাবেই বালকটির নাগাল পেতনা। বাসন্তী এখন ষোড়শী। যৌবনের সমস্ত বৈশিষ্ট্যই ভরে গেছে নিপুণ নিটল দেহের গঠনখানিতে। বাসন্তী ভাবে সেই বালকটিই বা কেমন হয়েছে। সে ভাবে বালকটি আর বালক নিশ্চয়ই নেই। সে এখন মোদন মোহন। বংশী বাঁশি বাজানোই, নাজানি কতই বা পাকা হয়েছে। কত তরুনীই বা বাঁশির শুরে পাগল হচ্ছে। এই ছাতিম তলায় অন্য কি অছিলায় বা আসা যায়। যে সময়ে গাছের চারা গুলি বাঁশরিয়া কুড়িয়ে নিয়ে যায় সেই সময়টাই বা কখন। আবার ভাবে চারা গুলি সেয়িই যে নিয়ে যায় তার কিবা নিশ্চয়তা আছে। ভেবে ভেবে খুন হয়। মস্তকের মস্তিষ্কে কিছুই স্থীর করতে পারে না কোনো কোনো সময় অস্থীর হয়ে পড়ে । কি ভাবে সেই আকাঙ্খিত তরুণের দেখা মেলে। যদি দেখা হয়েই যায় কি বলেই কথা বলবে। কি কথা দিয়েই কথা শুরু করবে। আবার ভাবে দূর.., দূর ছাই আগে দেখাতো হক। সেটাই বা কিভাবে হতে পারে। মনে মনে খুব রাগ হয়। আরে আমার সঙ্গে দেখা যদি নায়েই বা করবি তবে গাছের চারা গুলি কেন মিছে মিছে কুড়িয়ে নিয়ে যাওরে বাবা। মনে মনে কতই না ভাবনার জাল বুনে। যেজালে তরুণটিকে জড়ানো যায়। কোনো ভাবনা স্থীরে পৌঁছাতে পারে না। মিছে মিছে আস্ফালন করে এই জানো খুব ফাজলানো হয়েছে না ? ধরতে পারলে খুব মার দেব জানো। বড্ড পাজি কোথাকার। একটা হাড় বজ্জাত ছেলে কোথাকার। একবার যদি দেখা পায় তবে একে একে সব চারা গাছ ফিরিয়ে নেব। দূরে আকাশের দিকে তাকায়। আস্তে আস্তে আকাশ প্রান্তের আকাশ বলয়ে চোখ পড়ে। সদ্য হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। ঝিলমিলিয়ে রোদ উঠেই রোদ মিলিয়ে গেল। পূব আকাশের আকাশ বলয়ে রাম ধনু জ্বল জ্বল করছে। সাত রং যেনো বাসন্তীর গায়ের জামায় লেগেছে। কি উজ্জল সেই রং গুলি। ফ্রক জামার প্রান্তের দুই দিক ধরে দুই হাতে প্রসারিত করে একবার দেখে নেয়। যেনো আজ রাম ধনুর রংএ কিভাবেই না রঙ্গিয়েছে, পরিধানের পরিধেয়টি। হাজার হাজার যোজন দূরের আকাশের রাম ধনুর সাত রং ধরা দিয়েছে নিজের পরিধানে কিন্ত ধরা দিতেই চাই না নিকটেই কোথাও থাকা স্বপ্নের জাল বোনা তরুণটিই। বড়ই আক্ষেপ হয় মনে প্রাণে। তবুও চঞ্চলা মনে দোলা লাগে প্রাণে। তুমি কি ধরা সত্যই দেবে না আমার স্বপ্নের মনের গহনে। আবার ভাবে মিছে অপবাদ দিচ্ছি কেন ঐ একদিন মাত্র দেখা আমাদের ফুসফুসের রক্ষা কর্তা বৃক্ষপ্রেমী তরুণ নিষ্পাপ বালকটিকে। ভাবনা ভিন্ন দিকে দিকে যেতে যায়। আচ্ছা এতো চারা গাছ কোথায় কোন বাগানে লাগিয়েছে । সেটা নিশ্চয় তার মনের বাগান প্রাণের বাগিচা। সেতো অনেক বড় হবে। তাহলে তার মনটাওতো খুব বড় আর প্রসারিত হবে। ফুলের চারা গুলি এতোদিন নিশ্চয় খুব বড় হয়েছে। তাতে থরে থরে পুষ্প মঞ্জরি কেমন ভাবে থরে থরে সাজানো আছে। কাঁঠালি চাপা কনক চাপা শিউলী বকুল বেল ফুলের গন্ধে যেনো বাগিচা মৌ মৌ করছে। আকাশবানি দেবদারু গাছ গুলি এতো দিন নিশ্চয় আকাশ ছুয়ে ফেলেছে। পেয়ারা গাছে কতই না পিয়ারা থরে থরে টুকটুকে পিয়ারায় সেজে উঠেছে। কাঠবিড়ালি বুলবুলিতে খুব মজা করে খাচ্ছে। এই জানো, ওগুলি আমার গাছ খাচ্ছে খাক একদম ওদের তাড়াবে না বিরক্তও করবে না । পূব আকাশে তাকিয়ে দেখে রাম ধনুটা কখন কখন মিলিয়ে গেছে। আর পারে না ভাবতে। ধপ করে বসে পড়ে। ঠিক করে আজ জিতবাহান কাল সাত রকম শাক তুলার দিন। এবারের শাক তুলতে ছাতিম তলার মাঠের দিকে যাবে। সারাদিনময় শাক তুলার অছিলায় মন প্রাণ হরণ করা তরুণের খোঁজে সারা সূর্য সময় তল্লাশ করে বেড়াবে।
মধ্যাহ্ন অতিক্রান্ত হয়। তরুণের আগমন নেই। কেবল মাত্র দূর প্রান্তের কোনো এক দূর স্থান থেকে ক্ষিণ রাখালিয়া বাঁশির শুর মধ্যাহ্নের কোলাহল মুক্ত পাখির কূজন ভেদ করে আকাশ বাতাস মুখরিত করে বাসন্তীর অশান্ত মনের চঞ্চল মনের কর্ণে কর্ণগোচর হয়। সে এক মন প্রাণ পাগল করা পাগলপরা বংশীর শুর। ঠাওর করতে পারে না ঠিক কোন দিক থেকে আসছে পাগল পরা মাঠ ঘাট অরণ্য গহন বনাঞ্চল দিগন্ত ভেদ করে আসা শুরটি। চারিদিকে কান পেতে ধীর স্থীর মনে প্রাণে খেয়াল করতে থাকে। মনে হল ঐ পূব দিকের দিগন্ত প্রান্তের জনহীন নির্জন অল্প কয়েক বছরে গাছ পালা গড়ে উঠা ওপার বাংলার প্রান্তে পদ্মার অচিন চরের দিক থেকে সুমধুর বংশীর ক্ষীণ শুরটি ভাবে ভাসা ভাসা হয়ে ক্ষীণ ভাবে ভেসে আসছে। এই চরে কেউ যায়না বলেই জনশ্রুতিতে শুনেছে। এই চর মৃত্যু পুরী কঙ্কাল পুরী নরক স্থান । ঐ চরে যাওয়ার আগে বেশ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃর্ণ বালুকা চিকস্থি তৃণহীন ভূমি। এখানে নাকি এপার বাংলা ওপার বাংলার ডাকাতদের আনাগুনা। যারা নাকি ডাকাতিতে বাঁধা দেয় চুরি ছিন্তাই লুটপাটে বাঁধা দেয় ধন অর্থ সোনাদানা টাকা পয়সা দিতে এবং কঞ্জুসগিরী করে তাদের আর রক্ষা থাকে না। এই চরের জঙ্গলে তাদের ভবলীলা শেষ করে কুকুর শেয়াল দিয়ে খাইয়ে দেয় । নাকি এই দস্যু ডাকাতরা দয়ামায়াহীন নির্দয় হৃদয়হীন পিশাচের ন্যায়। এই চরে দিন দুপুরেও কোনো বীর পুরুষ পালুয়ানও যাওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারে এমন দুঃসাধ্য কার! কিছু ভাবার অবকাশ নেই যেনো শুধুই মন টানে প্রাণ টানে হৃদয় টানে অচিন চরের দিকে শুধুই বংশীর সুমধুর পাগলপরা শুরের টানে। এসবের কথায় কিছুই মনে হয় না। অজান্তেই পদ যেনো টলতে থাকে চোরা অচিন চরের টানে। যেনো বাসন্তী আজ দুর্জয় দুর্বার দুরন্ত অসীম বলে বলিয়ান দুর্বারিনী । খাওয়া নেই তবুও খিদে নেই জল পান নেই তবুও তৃষ্ণা নেই, নেই শরীরের অলশতা। আছে শুধুই পাগলপরা বংশী ধ্বনির টান মাত্র। শুধুই যেনো চলতে থাকে আর চলতে থাকে বংশী ধ্বনির টানে। গায়ে যেনো অসীম বল। মধ্যাহ্নের তীব্র দাবদাহের প্রবল সূর্য্য প্রতাপে জ্বলন্ত বালুকা ভূমি তাতে চাল ফেললে মুড়ি হয়ে যাবে।পায়ের পাতা যেন পুড়ে ছায় হয়ে যায়। তবুও কিছু মনে হয়না চলে আর চলে। বালুকা চিকস্থি ভূমি অতিক্রম করে অচিন চরের মৃত্যু পুরীর বনভূমির প্রান্তে উপস্থিত হয়। বংশীর ধ্বনি যেনো সামান্য হলেও জোরালো শব্দ কর্ণগোচর হয়। বাসন্তী নিশ্চিত হয় বংশী ধ্বনির উৎস এই অভিশপ্ত চরেই। জঙ্গলে প্রবেশের পূর্বেই একবার গা ছমছম করে উঠে। তার মধ্যেই আবার ভাবে এই বংশীবাদক যদি সেই বালক তরুণ না হয় তবে কি হবে! একটু আতঙ্ক আসে মনে। মনে হল ফিরে যায়। কিন্তু এতো কাছে এসে ফিরে যাব। ক্রমশ বংশী ধ্বনিও যেনো নিকটে আসতে চলেছে। ন যযৌ ন তস্থৌ কি করবে ভেবে পায়না কুলকিনারা। একবার মেয়েদের ভরা যৌবনিই হল সর্বশ্রেষ্ঠ শত্রু। এটাই হয়তো সর্বনাশের মূল হতে পারে। যেনো বাসন্তী এই মুহূর্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। একবার মনে হল সাহু
ডাকাত যদি এখানে থাকে তবে ভয় নেই। কারণ জনশ্রুতি যাদের বিয়ের বস্কক মেয়ে পণের জন্য বিয়ে দিতে পারে না তাদের জন্য নাকি ডাকাতি করে পণের অর্থ সোনাদানা সংগ্রহ করে কন্যাদায় গ্রস্থ পিতাদের দিয়ে থাকে। আমার কাছে কোন অর্থ কড়ি নেই যে আমাকে খুন করবে। থাকতে গলার চেন আর দুল। এগুলি না চাওয়ার আগেই দিয়ে দেব। আর যদি সাহু ডাকাত থাকে তবে আমার কোন ভয় থাকবে না। যে কন্যাদায় গ্রস্থকে ডাকাতি করা অর্থ দিয়ে সাহায্য করে বিবাহ যোগ্য কন্যাদের উদ্ধার করে তার দ্বারা আমার ক্ষতির আশা না করতেই পারি। এই ভাবে সাত পাঁচ ভেবে সাহু ডাকাতের উপর সাহসের ভর করে অচিন চর বন ভূমির অজানা অভ্যান্তরে প্রবেশের পথ খুঁজতে লাগল। প্রবেশের জন্য কোনো পথের হদিস বা কোনো মানুষের আসা যাওয়ার পদ চিহ্নমাত্র চক্ষুগোচর হল না। অনেক ঘোরাঘুরি করে একটি স্রোতা বেয়ে এসেছে বনের মধ্য থেকে। তাতেও ছোটো ছোটো ফণিমনষা গাছসহ কাঁটা গাছ পালা জঙ্গলে ভর্তি। কিন্তু অন্যান্য জায়গার থেকে এই স্রোতার নিচ স্থল বেয়ে কাঁটা গাছ ও বড় গাছের ঘনত্ব কম। বাসন্তী এক অজানা শক্তি আর অনেক সাহসের উপর ভর করে কাঁটা গাছের জঙ্গল ও ভ্যাট ঢোলকলমি গাছ ভেদ করে এই গভীর গহনে অতি কষ্টে সৃষ্টে প্রবেশ করে চলতে থাকে। হাত পা ক্ষত বিক্ষত হয়ে ছিড়ে ক্ষত বেয়ে রক্ত পড়ত থাকে । পায়ের পাতায় কাটা বিধে, তুলতে গিয়ে ফিনকি দিয়ে রুহ ছুটে। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যায়। তবুও চলে নীবিড় অরণ্য জয় করতে করতে। বংশী ধ্বনিও ক্রমশ নিকটে আসতে থাকে মনে হয়। কিছু দূরে একটি কাঁটা গাছের ডাল পাতা দিয়ে ঘেরা বেড়া দেখতে পায়। নিকটে গিয়ে প্রবেশ দ্বার খুঁজে কিন্তু হদিস পায় পায়না। মনে হয় এটা অনেক বিশাল জায়গা নিয়ে ঘেরা দ্বার খুজতে খুঁজতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। ভাবে যেভাবে কাঁটা গাছের জঙ্গল ফেড়ে এখানে এসেছে সেই তুলনায় এই বেড়া ফেড়ে ভিতরে প্রবেশ দুঃসাধ্যের কিছু নেই। বেড়ার একটু দুর্বল জায়গা দেখে বেড়া ফেড়ে ভিতরে প্রবেশ করল। যেনো অনধিকার প্রবেশ করল। মনে হল অনধিকার বাগানের ভিতর প্রবেশ করার অপরাধে বাগানের মালিক চুলের ঝুটি ধরল বলে। হৈ হৈ করে কাউকে আসতে দেখলো না। একটু ভেতরে যেতেই একি আশ্চর্য হয়ে গেল। একি দেখছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কয়েক বছর ধরে দিনের পর দিন যে ফুলের চারা গুলি ছাতিম তলায় রেখে যেত সেই ফুলের গাছ গুলি সারি বদ্ধভাবে দক্ষ হস্তে নিপুনতার সঙ্গে সযত্নে ফুলের গাছ গুলি তৈরী করা হয়েছে। কোনো গাছে একটিও শুকনো ডাল পাতা নেই। এগিয়ে যায়। সারি সারি রং বেরংএর ফুল গাছ। গাছে গাছে থরে থরে ফুল সাজানো। টুনটুনি পাখিগুলি ফুলের ডালপালায় বসে বসে লেজ খেলিয়ে চিক চিক করে ফুলের পোকামাকড় গুলি খেয়ে সাফ করছে। কুশমে কুশমে ভ্রমরদের আবাধে আনাগোনা। যেনো ভ্রমর মৌমাছির নয়নাভিরাম ফুলের পসরায় মেলা বসেছে। কি যেনো কি মনে করে বাসন্তী এখন নির্ভয়া। ফুলে ফুলে কলিতে কলিতে হস্ত রেখে চলতে থাকে । গুচ্ছে গুচ্ছে দলে দলে থোকায় থোকায় থরে থরে কুশম গুচ্ছের প্রষ্ফুটিত ফুলে হাত রেখে চলতে থাকে। সদ্য শুকিয়ে যাওয়া ফুল গুলি ঝরঝর করে পড়তে থাকে । এ এক নয়নাভিরাম মনরম দৃষ্টি নন্দিত অকল্পনীয় দৃশ্য। চোখকে যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে নিশ্চিত রূপে। ইস,,,হঠাৎ ছ্যাত করে তর্জনী আঙ্গুলের ডগায় বিষম যন্ত্রনা। অনধিকারের ফুল ছোওয়ার অপরাধের যন্ত্রণা নাকি। না, দেখে, নরম হাতের ডগায় মৌমাছি ছ্যাত করে হূল বিনেছে। এ ফুল বাগিচার নন্দন কাননের মালিক বুঝি ভ্রমর আর মৌমাছিরা। ওরা বুঝেছে হয়তো ছিলাম ভালো এ কোন অনধিকারিনী আমাদের অবাদ পুষ্প ক্ষেত্রে প্রবেশ করে করেই বিরক্ত করছে। মৌমাছিটি আত্ম রক্ষার জন্য আঙ্গুলে হূল ফুটিয়ে উড়ে পালাতে পারিনি। বাসন্তী মৌমাছিটি হাতে নিয়ে বলে এই তোরায় এই পুষ্প কাননের পাহারাদার ? তোদের মালি কোথায় ? ভয়ে পালিয়ে গিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে লুকিয়ে লুকিয়ে আড়ালে আড়ালে কোথায় বুঝি। এই তোরা জানিস অপার পুষ্প শোভিত নন্দন কাননের প্রত্যেকটি ফুল গাছের চারা আমারই দেওয়া। এগিয়ে যায় মহানান্দে পুলকিত হৃদয়ে উচ্ছসিত মনে উৎফুল্ল্য প্রানে। আরও আরও আশ্চর্য আবিষ্কারের টানে। কাননটি তিন ভাগ বিভক্ত। একটি সারি পুষ্প রাজির ক্ষেত্র তার পর বিভিন্ন রং বেরং এর নয়ন জুড়ানো পাতাবাহার আর বিভিন্ন মশলা জাতীয় বনষ্পতি বৃক্ষ রাজির ক্ষেত্র তার পর বড় বড় জানা অজানা চেনা অচেনা বৃহৎ প্রকান্ড বৃক্ষশ্রেনির বৃক্ষরাজির বৃক্ষপতিদের ক্ষেত্র। এরা কেউ কেউ আকাশ ছুয়ে মেঘের সঙ্গে খেলা করছে। বাসন্তী দেখতে থাকে পুলকিত হৃদয়ে ঘুরে ঘুরে এই নয়নাভিরাম যেনো কল্পিত স্বর্গের স্বর্গরাজ ইন্দ্রের নন্দন কানন আর অনুস্মরণ করতে থাকে বংশীর সুমধুর ধ্বনি। এক সময় দেখতে পায় কাননের মাঝামাঝি পুষ্প কানন ও পাতা বাহারের বৃক্ষ শ্রেণির সংযোগ স্থলে এক সুদৃশ্য অট্টালিকা নাহলেও ছোট্টর উপর গোছানো সাজানো বিলাশ বহুল সোভিত বাগান বাড়ি বললে অতুক্তি হয় না। এগিয়ে যায় বাড়িটির দিকে। বাড়ির কোনো দিকে কোনো প্রাচীর নেই। বাড়িটির চারিদিকে আঙ্গিনা সহ সমস্ত জায়গা ভরে বিভিন্ন রকম সুদৃশ্য টব ভর্তি রং বেরংএর প্রষ্ফুটিত ফুলে ফুলে শোভিত। আঙ্গিনার অদূরেই কাঁঠালি চাপা আর রজনী গন্ধা ফুলের সুগন্ধে বাতাস মাতুয়ারা হয়ে মৌ মৌ করছে। আর একটু এগিয়ে যায়। অনেক গুলি কক্ষ বিশিষ্ট এই অট্টালিকার দালানটি । বারান্দায় উঠে দেখে, সমস্ত কক্ষের অবারিত দ্বার মুক্ত বাতায়ন। কোন কক্ষে প্রবেশ করবে ভেবে পায় না। সম্মুখের মূল কক্ষে প্রবেশ করার আগেই দরজা থেকেই মুখ বাড়িয়ে দেখে জন প্রাণিহীন শূন্য কক্ষ। আস্তে আস্তে ধীর ধীরে ঘরে এক পা দু পা করে ঘরে প্রবেশ করে। ঘরটির কোনায় কোনায় সুগন্ধ যুক্ত বায়ু কক্ষময় কুলকুল (27) করে খেলা করছে । কক্ষের চারি দেওয়াল দেওয়ালে দৃষ্টি নন্দিত সুসজ্জিত বিভিন্ন রংএ রঞ্জিত মনরম পরিবেশিত বাহারি ছবি । চারি দেওয়ালের মধ্যে, একটি দেওয়ালে চঞ্চল উদ্দত মহাবেগে চলন্ত সামনের জোড়া পা উত্থিত কতক গুলি ঘোড়ার ছবি শক্তি প্রদর্শন করছে। আর এক দেওয়ালে ঘোড়ায় সোওয়ার উন্নত শিরে নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের দিল্লি চল এর ছবি। আরেক দেওয়ালে বাবা সাহেব আম্বেদকর স্বাধীন ভারতের সংবিধান লিখছেন মনযোগ সহকারে এরকম একটি ছবি। আরেক দেওলালে আদিবাশি মেয়েদের বিভিন্ন ফুলে সজ্জিত মাথায় ময়ূরের পালক দেওয়া নিত্যরত অতি উজ্জল রঙিন বসন পরিহিত ছৌ নাচের ছবি। কক্ষের সিলিং বিভিন্ন রঙের হরেক রঙের লতাপাতার ছবি দ্বারা সুসজ্জিত। আর অতি সুন্দর শোভিত বিভিন্ন রকম কারুকার্য অতিসূক্ষ নিপুন হস্তে তৈরী বিকিরণ বিচ্ছুরিত নবাব বা রাজ বাড়ির মত শোভিত। একটি বেদেশি ঝাড়বাতি সিলিংএর মাঝ বরাবর নিজে মহিমান্বিত হয়ে ঝুলছে। মেঝের তল প্রবাল পাথরের উপর হরেক কারুকার্যের ছবি দেওয়া হরেক রঙে রঞ্জিত হর্মতল। এক কথায় সব মিলে যেনো মনে হয় রূপ কথার এক স্বপ্ন পুরি। অন্যান্য কক্ষ গুলি কোনোটি পাঠাগার কোনোটি বিভিন্ন মণীসীদের বাঁধানো থরে থরে ছবি দিয়ে সাজানো ড্রয়িং রুম। কোনোটি রান্না ঘর কোনোটি ধা চকচকে সুদৃশ্য ডাইনিং চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজানো ডাইনিং হল। পাশেই একটি ঘরে বিভিন্ন শরীর চর্চার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বেশ ছিমছাম করে সাজানো আছে। দ্বিতলে যাওয়া হল না। আশ্চর্যিত বিস্ময়ে ভাবে সবিই আছে কিন্তু মানুষ কোথায় ? নেই ঘরের মালিক মালকিং নেই কোনো এই সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো ঘরের দেখভালের কোনো কর্মচারি বা আগলদার। সূর্য্য ডুবু একটু পরেই গোধূলি। হঠাৎ থমকে গেল শ্যামের বাঁশি।শ্যামের বাঁশির শুর আর ভেসে আসছে না। সারি সারি বৃক্ষ রাজের ছায়া তলে প্রায় সন্ধ্যা লেগে গেছে। বাসন্তী কি করবে এখন, ভেবে কুল পায়না। সন্ধ্যার আগে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যাবে। সন্ধার আগে বাড়ি যেতেই হবে। প্রতিদিনের ফুলের ও বিভিন্ন গাছের চারা দেওয়া গাছের লক্ষণে মনে মনে নিশ্চিত হয় যে সেই তরুণ বালকটি নিশ্চয় এখানেই আছে। কিন্তু ধরা দিতেই চায় না কেন ? প্রথম দিনের চারা না দেওয়াই যদি এতো রাগ হয় তবে পরের দিনের পর দিনের চারা গুলি কেনই বা এখানে সারি সারি করে লাগিয়েছে কেন ? লাগাতে লজ্জা করেনি! যত সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই বাসন্তীর রাগে খোবে রাগে অনুরাগে মানে অভিমানে যেন মন অসহিষ্ণুতায় পরিণত হচ্ছে। কেউ আছেন বলে কি চিৎকার করবে ? না কি মাথা কুটবে ? স্থীর কিছু ভেবে পায় না। শেষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ভাবল। এবার প্রবেশ দ্বার একটি খুঁজে পেয়েছে কিন্তু দ্বার বাইরে থেকে বন্ধ । এবার সেই বেড়া ভাঙা রাস্তার খোঁজে যাওয়ার জন্য পা বাড়ল। হঠাৎ যেনো নিরবতা ভেঙ্গে ভিতর থেকেই কে যেনো বলল, "গেট কাছে দাড়াও।" বাসন্তী থমকে থমকে দাঁড়াই । ভাবল হয়তো দ্বার পহরি আছে। না কাছে আসতেই মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝে গেল সেই আকাঙ্খিত বালক। কিন্তু সে এখন বালক নেই। সে এখন যুবক। যুঃ "কেন চলে যাচ্ছ এতো কাছে এসে "। বাঃ " যে দশ বছর ধরে মনের কথা ভাবের কথা বুঝে নাই তার কথা কি করে ভাববো"। যুঃ " তোমার ইচ্ছাইতো এখানে প্রতিফলিত হয়েছে । এসমস্ত গাছের চারাই তোমারই দেওয়া। এ বাগিচা আমি তৈরী করলেও ফুল বাগিচা বৃক্ষ রাজি সবই তোমারই যে " বাঃ " ছাই..., মন প্রাণ হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে গেলে, এসবের কি মূল্য থাকে "। যুঃ " তোমার হাতের ছোয়া প্রতিটি চারা গাছ যখন পরিবেশ পেয়েছে তখন পরিবেশও তোমাকে নিশ্চয় প্রতিদান দেবে " বইকি । বাঃ ছাই, এ আমার পোড়া কপাল। " তখন প্রায় গোধূলি অতিক্রম করে সন্ধা নেমে আসছে সন্ধ্যা প্রায়। বাঃ " আসামী যখন পেয়েছি প্রতিদানের সে বিচার কাল হবে, সে বিচারের অপেক্ষায় থাকো। বিচারে হয়তো কত শত বার কান ধরে উঠ বোস করতে পারো "। হঠাৎ আকাশ জুড়ে মেঘ আর আকাশকে হাজার ভাবে ভাগ করে চিরে চিরে বিদ্যুৎ চমকানি আলোর ঝলকানিতে আকাশ ভেঙে পড়ছে যেনো । মুহুর মুহু কড়কড় চড়চড় বিকট শব্দের ত্রাসে প্রাণ উড়ে যাচ্ছে যেনো । যুঃ " তাই হবে গতিক বড় ভালো নয় তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আশি, বাকি কথা রাস্তায় যেতে যেতে হবে "। বাসন্তীর বুকে আকাশ ভরা গ্রহ তারা নক্ষেত্র সম কথা বাঁধ ভাঙা জলের মত রাশি রাশি কথা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে কিন্তু সময় সংকীর্ণ। অঝর বর্ষণ সহ বজ্রের ক্ষেপনাস্ত্রের লাগাতার আঘাতে আঘাতে আকাশ বাতাস কাপানো বিকট শব্দে ওষ্ঠাগত প্রাণ। যুবক তার কাঁধে দক্ষিণ হস্ত দিয়ে বাসন্তীকে জোড়িয়ে ধরে পথ চলতে থাকে। যেতে যেতে কথা হয়। নির্ভীত নির্ভিক পিতা- ছত্রধরপ্রতাপ চাঁই। ভদ্রাসন ওপার বাংলার চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে। পিতা একটি প্রখর আর দুর্ধর্ষ শক্তিশালী ডাকাত দলের সর্দার । এলাকার বাংলার কোনো বধূ ও যুবতীর প্রতি সাহেব ও জমিদারের ললুপ ও কুদৃষ্টি পড়লে তার নিশ্চিত মৃত্যু দন্ড হতো ঘন অন্ধকারে তারোয়ালের ওমঘ আঘাতে। ডাকাতি করা অর্থের সিংঘভাগ খরচ হত গরীব পিতার কন্যাদায়ে ও বন্যা খরায় ফসল ক্ষতিগ