click on images to know more about the Images
মায়ের একটা মহাভারত ছিলো। বড়দা পাঠ করতো। শৈশব থেকে শুনতে শুনতে আমার প্রায় মুখস্থ। যখন অন্যায় যুদ্ধে অভিমন্যু বধ শুনতাম, তখন খুব কান্না পেতো। অভিমন্যু বাচ্চা আমিও বাচ্চা, তাই হয়তো এমন হতো। তবে যখন স্বর্গের বর্ণনা শুনতাম, তখন খুশি হতাম। বড়দাকে জিজ্ঞাসা করতাম- দাদা স্বর্গ কোথায়? বড়দা বলতো- হিমালয়ের উপরে।অবুঝ শিশু মন, ওখানে যাওয়ার জন্য উদগীব হতাম।
একরাতে স্বপ্নে চলে গেছে স্বর্গে। দেখছি- কোথাও উঁচু-নিচু পাহাড়, আবার কোথাও সমতল ভূমি। সর্বত্রই পেঁজা তুলোর মতো। নরম পাকদণ্ডীতে হাঁটলে বেশ আরামের অনুভূতি হচ্ছে। গাছে-গাছে ঝুলতে দেখা যাচ্ছে- আপেল, আঙুর, ন্যাসপাতি। নর-নারীদের সদা হাসি মুখ, প্রাণ-চঞ্চল যৌবনে ভরপুর। এদের জ্বরা, বার্ধক্য বলে কিছু নেই। এমন কি, মৃত্যুও না। স্বর্গবাসীদের জীবনযাত্রায় মুগ্ধ হয়ে মনে মনে ভাবলাম- বাড়ি গিয়ে মাকে বলে এখানে এসে থাকবো।
আজ মা নেই, বড়দাও নেই। বর্তমানে আমি তিয়াত্তুরে বুড়ো। ইতিমধ্যে লে-লাদাখ সহ জম্মু-কাশ্মীর, সিকিম, দার্জিলিং ভ্রমণ করে ফেলেছি। কিন্তু কোথাও নজরে পড়লো না চারযুগ অমরওয়ালা হনুমান বিভীষণকে।
এইতো সেদিনের কথা, গিয়েছিলাম হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণে। ওখানে বিভিন্ন স্থানে, এমন কি বাসের গায়েও লেখা আছে- দেবভূমি হিমাচল। গত বছর রেডিওর খবরে শুনলাম- হিমাচল প্রদেশে মেঘভাঙা বন্যায় বহু মানুষ মারা গেছে। অবাক হলাম! জ্বরা, মৃত্যুহীন দেবভূমি হিমাচলে একি কাণ্ড! আকাশবাণীর খবর ভুল নয় তো! না। ভুল নয়। পরদিন কাগজেও দেখি সেই একই খবর।
প্রাকৃতিক ধন্ধ নিরসন করতে অন্তরের গভীরে বসাই আদালত। বিচার-বিশ্লেষণে পাই- এতোদিন যা শুনে এসেছি সবই গালগল্প। কেটে যায় মোহ। আর স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। আমার এই নিম্নভূমি সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা মাকে আঁকড়ে ধরে বলি- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
-----+-----
-