click on images to know more about the Images

শিক্ষা ও হরিগুরুচাঁদ

Author: মৌসমি টিকাদার

শিক্ষা হচ্ছে  জাতির  মেরুদন্ড ।
আর শিক্ষাহীন  সমাজ  ডানাকাটা  পাখির  অঙ্গ ।
শিক্ষা হল  সর্বশক্তির মূল  অস্ত্র। 
যার  দ্বারা আর্যরা  ভারতে ঢুকে  কেড়ে নিল  সর্বস্ব।
ছিনিয়ে নিল  শিক্ষার  অধিকার। 
মানসিক  গোলাম বানিয়ে  রাখাই  যার  ধার ।
দিল  নাকো  সম্পত্তির অধিকার। 
করিল  মোদের  পতিতের  আকার  ।
হটিয়ে  দিল অস্ত্র ধারণ করার  অধিকার। 
পর্যায়ক্রমে   বার  বার  পরাজিত  হলাম  আবার  ।
শিক্ষা হল  অমোঘ  শক্তি।
যা শেখাবে  দিতে  যুক্তি ।
শিক্ষাশক্তি  দিয়ে  তারা  করিল  বিভিন্ন  গ্রন্থাদি রচনা  ।
অজ্ঞানতার  অন্ধকূপে  ঠেকিয়ে  দিল মোদের  মাথাখানা ।
যে গোলামি  এখনো  অব্যাহত। 
পালন করে  চলছি  মোরা  প্রতিনিয়ত। 

এই  থেকে মুক্তি  পেতে  বহু মহামানব  করেছেন  সংগ্রাম। 
তার  মধ্যে উল্লেখযোগ্য  জ্যোতিরাও  ফুলের  নাম। 
বোধগম্য হল তার  অবিদ্যাই  অনর্থের  কারণ ।
তাই  তিনি  সাবিত্রীবাঈ ফুলেকে  দিয়ে  শুরু করলেন  নারী  শিক্ষা আন্দোলন  ।
আর  একজন  ছিলেন  পন্ডিত  বাবাসাহেব  আম্বেদকর   ।
"শিক্ষিত  হও, সংগঠিত হও, সংঘর্ষ   কর"-এই শ্লোগান  যার ।
এই  সময়  বাংলার  মহামানব  হরিচাঁদ ঠাকুরও  এতে  ব্রতী  হন ।
শোষণ,   শৃঙখল , দাসত্ব  থেকে  জনগণকে  মুক্ত  করাই  তার  প্রাণপণ। 
তিনিই  প্রথম  শুরু  করলেন পতিত  উদ্ধার  আন্দোলন। 
সত্য,  প্রেম , পবিত্রতা দান  করিলেন  ।
জাতি, ধর্ম  ,বর্ণ  নির্বিশেষে  দিলেন  সাম্যের  বাতাবরণ। 
তার পুত্র  গুরুচাঁদ  ঠাকুরের  নেতৃত্বে শুরু হয় শিক্ষা  আন্দোলন। 
সেই  শতকে  স্কুল তো দূরের কথা
অন্ত্যশ্রেনীরা   স্কুলের  দরজা  দেখলেও হতো পাপ  ।
সাধারণের  জলাশয়ের  জলপানের  যাদের  ছিল  না  অধিকার  
তাদের  কাছে  শিক্ষা  বিষয়টা  গভীর  অন্ধকার  ।
গুরুচাঁদ ঠাকুর জানতেন  শিক্ষা ছাড়া  জাতির   গতি  নাই। 
প্রকৃত  সত্যের  উপলব্ধিতে  শিক্ষা আগে  চাই। 
আর যদি  না করা  যায়  সত্যের  অনুসন্ধান। 
গড়ে  তোলা  যাবে  নাকো অত্যাচার  দমনের  আন্দোলন। 
তাই  তিনি  ১৮৮০ সালে করিলেন স্বগৃহে   পাঠশালা স্থাপন  ।
পিছিয়ে  পড়া  মানুষের  এই  প্রথম  শ্রিক্ষা প্রতিষ্ঠান  ।
দূর- দূরান্ত   হতে  আসত  শিক্ষার্থীগণ। 
যা ছিল  রাজর্ষি গুরুচাঁদের অবদান। 
গুরুচাঁদের মহান  বাণী----"ছেলেমেয়ে দিতে শিক্ষা 
         প্রয়োজনে  করিবে  ভিক্ষা।"
"বিদ্যা ছাড়া  কথা  নাই,  বিদ্যা কর সার 
বিদ্যা ধর্ম,  বিদ্যা কর্ম, অন্যসব ছাড়"।
 এইরকম  শত শত  জাগরণী  বাণী  আছে তার। 

পুনরায় ১৮৮০ সালে , নভেম্বর  মাসে
পাঠশালা  বানালেন  চৌধুরী বাড়িতে  এসে।
এর  উদ্বোধন গুরুচাঁদ  নিজেই  করিলেন। 
হৃদয় জুড়ানো,  প্রজ্জ্বলিত,  চেতনাবর্ধক  বক্তব্য  রাখিলেন ।
বলিলেন-----"বিদ্যা বিনা সব  বৃথা দেখো মন  ভেবে
বিদ্যা পেলে  ধন ,মান সবকিছু  পাবে। "
"বারে  বারে  বলি  তাই  স্বজাতিগণ
শেখ বিদ্যা,  রাখ  বিদ্যা  করে  প্রাণপণ।"
গুরুচাঁদের উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্দৃষ্টি  জাগানো।
শিক্ষার  রংমশালকে  দিক-দিগন্তে পাঠানো।
 ১৮৮১  সালে  হল  জাতীয়  জাগরণী  সভার আয়োজন  ।
গুরুচাঁদ ঠাকুর হলেন  তাতে  সভাপতি নির্বাচন  ।
এছাড়াও  ছিলেন  বিভিন্ন  জ্ঞানীগুণীজন  ।
তার মধ্যে  দ্বারিক  মন্ডল  একজন ।
কহিলেন  তিনি  কুসংস্কার  কর  সবে  হানি। 
বিদ্যাশিক্ষা  সর্বপেক্ষা  দামী।
শিক্ষার আলো  ঘরে  ঘরে  পৌঁছতে হন  ব্রতী।
ইহাই  জগতের শ্রুতি।
যদি কর বিদ্যার  সাধনা ।
বুদ্ধি, শক্তি ,চিত্তশুদ্ধির হবে  উন্মাদনা।
অন্তরের  অন্ধকার  দূরে  সরাও  ।
জ্ঞানী ও  বাস্তববাদী  হও ।
যদি করতে  পারো  বিদ্যা অর্জন। 
ঘৃণা  করার  সাহস  পাবেনা  কেউ  কখনো ।
কেটে  যাবে  সমস্ত  দুঃখ।
জীবনে  নেমে  আসবে  শান্তি ও সুখ ।
এর  জন্য  করতে  হবে  স্কুল  প্রতিষ্ঠান। 
তবেই  হবে সব সমস্যার  সমাধান। 
কাঁধে কাঁধ  মিলিয়ে  ঝাঁপিয়ে  পড়ো  শিক্ষা আন্দোলনে।
তবেই  উঠবে  তোমরা  আপন  শক্তিতে  জ্বলে ।
স্কুলের জন্য  গুরুচাঁদ করিলেন জমিদান।
১৯০৮  সালে  ওড়াকান্দিতে হল  হাইস্কুল  গঠন।
জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে  ছিল  প্রবেশাধিকার ।
 এইভাবে  গুরুচাঁদ  করলেন অন্ত্যজশ্রেণীর  নিস্তার। 
লাট  সাহেবের  হাত  ধরে করলেন  চাকরির  ব্যবস্থা।
এইভাবে  তানার  শিক্ষা আন্দোলনের সর্বপূর্ণতা ।
গুরুচাঁদ  সর্বমোট  বিদ্যালয়  করেছিলেন ১৮১২ খানা।
যার  প্রধান  লক্ষ্য  সর্বহারা  জাতিকে  শিক্ষার  আলোয়  আনা ।