click on images to know more about the Images

চৈত্র শেল

Author: রাধিকা রায়

হ্যাঁ!  হামার মতন গরীব মানষীলা এই মাসের অপেক্ষাতেই থাকে দীর্ঘ ১১ মাস। এক বছর চৈতের শেল মিস করিলেই,  পরের বার যাতে মিস না হয়,  ঐতানে মনটক কাথা দিয়া রাখে--
“ সামনে বছর যামকেই,  যেইনং করেই হোক। ইস!  কত কিছু নিবা হলেহয়, সারাবছর একখান কাপড়ও ঠিক ঠাক জুটে না কপালত। এমুন সংসারত বেহায় দিলে মোর বাপ, এলা মাথা আছড়ায়াও কুনো লাব  নাই। "
পাড়ার জাও -  " কি গে!  গেলো নি এইবার চৈতের  শেলত?  ইস বাজি! কম দামে কত জিনিস ভেরাইসে। মোর বাজি আরোহ জিনিস কিনিবার  সখ ছিল। কি করিবো,  সখ থাকিলেই  হবে!  হাতত পাইসা কড়ি নি থাকিলে কিছুরেই নি আশা পুরন হবে। "

মাগী-মানষী কি অল্পতে আঘায়! তবে এইটা ওমহার চোখের চাওয়া, মনের চাওয়া নাহায়। গরীব ঘরের ছুন্ডী- মাগী সবায় বুঝে এই জিনিসলা। ঐজন্য নিজের কিছু সখ পুরনের  জন্য এমরা মানুষীর বাড়িত জন খাটিতেও কিছু মনে করেনি। আরহ,  জিনিসটার প্রতি আকৃষ্ট হয়া,  কিনিবার জন্যে  খাটিতেও গতরের নি কতাই করে। 
বিশেষ করে চৈতের শেলের সময়,  কিছু টাকা পাইসা জমায়া এমরা রওনা হয় শহরমুখী চৈত্র শেলের বাজারত। শেলের উপরেও শেল চাহে এমরা। -
    কত করে গে? 
মাত্র ১৫০ টাকা। 
   কম হবে নি? 
নাই। 
   ৭০ টাকা দিম দিবো? 
নাই নাই।
    আই, আরহ ফের জিনিস কিনবা হবে নাগে,        তাইলে ৮০ টাকা নেয়। 
 দিদি ১২০ টাকা দিস যা! 
      নাই নাই, অতলা নি দিবা পারিম, ৯০ টাকায় যুদি দিস তে দে,নি হলে অন্য দকানত গেনু। (চলি যাবার উপক্রম করিয়া) 
ও দিদি শুন না, ৯০ টাকা কিনাও নি ছে হামার, লস হয় যাবে তুই বুঝেচিনি। আচ্ছা তোক হয়হানেই কহোচু আর ২০ টা টাকা দিস,  যা নিয়া যা। 
          মুই আর ৫টা টাকা দিম, দিলে দে নি দিলে বাদ দে। 
হেই দিদি, জুমায় দে দিদি, জুমায় দে। 
    নি,  আর নি পারিম বেশি দিবা। 
(জিনিস নিয়া ১০০ টাকিয়া নোট দিলে, যখন ৫টাকা আর ঘুরায় না দেয়,  তখন---
        ৫টা টাকা দে না রে!
ইস দিদি!  আর কিছু চাহিস না ত। 
       নাই নাই নাই নাই নাই, বাড়িত ছুয়ালার তানে নাড়ু কিনবা হবে, আর পাইসায় নি ছে মোর ঠিনা। তুই দে ত। 
 ৫ টাকা না নিলে কি ছাড়ে? দিবায় হবে,  আর ওমরাও নিয়ায় ছাড়িবে। 

এক চৈত্র শেলত,  গ্রামের একটা মফসল পাড়া থেকে দুই মায় বেটি শহরত যায় শেলের কাপড় কিনিবার তানে। জানকির বেটির দূর্গার বয়স হবে ঐ ১২ কি ১৩ বছর। এক বেটা আর এক বেটির মা জানকি। বর চাষা,  নিজের আড়াই বিঘা জমি নিজেই আবাদ করে। আর হাক-ডাক পাইলে হাল বয়হা বেড়ায় মানুষের, কামের খোঁজ পাইলেও করে। ছুয়া-পুয়া-বউ নিয়া সুখের সংসার। অভাব অনটন লাগিয়া থাকিলেও, ছুয়া দুইটার হাসি খুশি মুখ দেখিয়ায় কাটায় দেয় ওমরা ওমার জীবন। 
            সেই গ্রামত একটা শিশুশিক্ষা ইস্কুল ছাড়া, আটাপাশি কুনো বড় ইস্কুল নাই। তার জন্যে দূর্গার পড়াশুনা প্রাইমারী অবধিই।  দূর্গার ভাই অনেক ছট, অ-আ, ক-খ, যতংনা দুর্গা শিখিসে ততংনায় ভাইওক শিখাতেই আর ভাইয়ের সাথে,  পাড়ার সমবয়সী ছট বড়লার সাথে খেলিতে খেলিতেই  দূর্গার বড় হয় উঠা। 
            চৈত মাস পরিলেই জানকির সখ হয় শেলত যাবার। এইবার অনেকলা টাকা জমাইসে জানকি,  অন্যের বাড়িত কাম করিয়া ,জন দিয়া। কম করেও ২০০০ টাকা! খালি চৈতের শেলত যাবার তানে। বেটি বড় হচে,  মা হিসাবে বেটির সাজুগুজু, পোষাক আষাকের লক্ষ্য রাখিবায় নাগে। নাইলে বরপক্ষ পসন করিবেই বা কি দেখিয়া? 
  দূর্গার বাবার সাথে বাজার যাবার  কথা কহে জানকি ---
     তমহার  কি কাজ ছে কুনো কালিকা! 
কেনে দূর্গার মা? 
     নাই! কহেচু কালিকা অল্প চৈতের শেলত যাবা চাহেচি সবায় মিলিয়া। 
  নাই রে, এই কয়েকটা দিন আর হবে নি। পাঁচ দিন পরে হলে হবে নি? সাতারুর কামখান তিন জন মিলিয়া করিবার তানে আগেই টাকা নিসি। টাকা পাইসালাও খরচ  হয়ে গিসে,  এলা কামখান না করে দিলে সাতারু দা কি ভাবিবে। এমনিতেই অসহায় মানুষ। এক কাম কোর,  মাইটক নিয়া তুই চলি যাইস,  বাবুটক মুই নিয়া যাম মোর সথে। একবার ত তোক নিগাইসনু,  মনে ছে না? 
          মনে ছে নি তে ফের!  আচ্ছা ঠিক ছে। 

জানকি আর দূর্গা পরের দিন সকাল সকাল বাহার হয় যায় চৈত্র শেলত কাপড় কিনিবা। মেলায় কাপড়-চুপড় কিনিসে দুই মায় বেটি। ২০০০ টাকা কি এইন্যা!!!!বাপ-বেটা, মা-বেটি সবার তানেই কিনিসে। 
    দূর্গা-- " মা,,,  ভাইওক জামা আর প্যান্ট ড পিন্ধিলে দারুন মানাবে না! আর যখুন শুনবে, এইড মোর পছন্দ, তখনকা কত আনন্দ পাবে হয় না! "
জানকি তখন দূর্গার বাপের কথা ভাবিতে থাকে--
"কত বছর কাটিয়া গেল,  মানুষটাক একখান বস্ত্রওনি কিনিয়া দিবা পারু। জামা কাপড়ের কুনো হুদিশ নাই লোকটর। একখান গামছা আর একটা গেঞ্জিতেই কাটাবা হৈল। মানুষটার সব স্বপ্ন হামারলাক নিয়া, নিজের বলতে কিছুই রাখে নি। ছেচায়, মুই খুবেই ভাগ্যবতী, এমুন বর মোর ভাগ্যত জুটিয়া। 
আজিকা ত খুশি হবায় হবে,  এই যে একখান ধুতি, একটা জামা আর সাথত একখান গামছা নিনু। এতেই মুই মানুষটার মুখত মুখভরা হাসি দেখা পাম। এর থেকে আনন্দের আর কি ছে জীবনত! " 

এত এত জিনিস কিনিয়া, হাত ভর্তি দুই মায় বেটির। বাজারের কাছারি ঘরাত বসিয়া, মা বেটি মিলিয়া ঝাল মুড়ি কিনিয়া খায়। খাইতে খাইতে মা বেটিক দেখিয়া আর বেটি মাওক দেখিয়া মুচকি মুচকি হাসে। বাজার ভিরের কেচামেচি, কাছারিত গল্পগুজবের কেচামেচি থাকিলেও মা বেটির মনের আনন্দের মনোভাব হাসিমুখতেই ফুটিয়া উঠে। 
বেটার তানে নাড়ু কিনবা কহে, জানকি বেটিক বার বার করে কহা যায়, --" এইঠিনাতে একদম নোড়বো নি বেটি।কেহ যুদি কিছু খাবা বা কিছু নিবা কহে তুই নিবোনি।  মুই এলায় আসিম, তোর আর বাবুর তানে নাড়ু নিয়া। "

কিন্তু কিছু শৈতান মস্তান লোক যে জানকি আর ওর বেটিক নিশানা লাগায় রাখিসে, ঐড কি আর কেহ জানে? নাকি জানকিয়েই জানিবা পাইসে! পিছন পিছন ধাওয়া করিয়া কাছারি পর্যন্ত চলি আসে ঐ শৈতান দুইটা। মা নাই দেখিয়া,  ভাল মানুষ সাজিয়া দূর্গার পাশত বসে আর কহে--
  " কুন্যা বাড়ি গে মাই তোর? "
কিছু কহিবা যাবে দূর্গা, এমুন সময় পকেটত থেকে একখান রুমাল বাহির করিয়া দূর্গার মুখত রাখে। পাশত থাকা একটা লোক জিজ্ঞাসা করিলে কহে--
   " মাইটর শরীল খারাপ ত,  বমি বমি বলে নাগেচে। "
       কাছারি ঘরার সমস্ত ভির ঠেলিয়া বমি করিবে বমি করিবে কহিয়া ,পাশ কাটিয়া কিডনাপ করে নেয় দূর্গাক। 

এইদিক বেহুসী দূর্গার মা,  ছুয়ার নাড়ু কিনিয়া টিনিয়া, বাতরুম টাতরুম করিয়া কাছারিত আসে। আসিয়া দেখে,  জিনিস পত্র সবেই ছে,  কিন্তু ছুয়া মোর নাই। ছুয়া মোর কুন্যা গেল!!!! ভয় আর কান্দিম কান্দিম গালায় কহে-
    হাই কপাল !ছুয়া মোর  কুন্যা? মোর দূর্গা! 
তমরা কেহ দেখিসেন গে! মোর বেটিক?  এইন্যায় বসিয়া ছিলো এই জিনিসলার ঠিনা। এখুনেই ছিলো। 
চিহার কাটিয়া কান্দিয়া কান্দিয়া, কাছারির পতিকটা লোকক পুছে,, 
 মোর বেটিক কি তমরা দেখিসেন দাদা!
ওওয় দিদি মোর বেটিক কি তমরা দেখিসেন!
১২/১৩ বছরের,   গতরত নাল জামা পিন্ধা ,
   ঠ্যাংওত কালো চপ্পল। 
শাড়িও খুলিয়া যায় জানকির,  মাথার খোপা খুলিয়া গেলেও লক্ষ্য নাই ঐদিক। একটায় লক্ষ্য -- "মোর বেটি"
ও দাদা, আমার বেটিটাকে দেখিসেন দাদা ?নাল জামা দাদা,  ১২/১৩ বছর বয়স। 
ও কাকা, 
ও মসি, 
ও দাদু, 
ও দিদি মোর বেটিক দেখিসেন  তমরা,,  মোর বেটিক। মোর দূর্গাক?  নাল জামা,  ১২/১৩ বছরের ছট মোর বেটিক!

সবারে কাছত " নাই " কাথা শুনিয়া,  পাগলিনী জানকি, 
   হুকরিয়া ডুকরিয়া কান্দে আর  মাথা আছড়ায়  কহে---
" মোর বেটি,,,, 
ওগে মা,,,,,,, ! মুই কি কাম করিনু বেটি! 
 মোর আদরের বেটিক মুই হারায় ফালানু! 
   হায় ভগবান! 
মোর কি সর্বনাশ করিলো তুই ভগবান! 
কেনে করিলো ভগবান! 
 কুন পাপের সাজা নিলো ভগবান!
      মোর ছুয়াক মোর কলাত ফিরায় দে ভগবান!
   মোক মোর ছুয়া ফিরায় দে!  আ হা হা হা.... "

(চৈত্র শেলের চৈত মাস আর ফিরিয়া আসিল না জানকির)