click on images to know more about the Images

ময়নার মা

Author: রাধিকা রায়

ময়নার  কেবল ১৪ বছর বয়স। ১৪ বছর বয়স মানেই তখন গাভুর, এলা যাক কহে  পাতা। ময়নার একটা বহিন আছে, নাম লক্ষী। 
দুই বহিনির মধ্যে পতিদিন ঝগড়া আর মারামারি হবেই। এইড ওমহার অভ্যাসে পরিণত হৈ গিসে। মারামারি আর ছুটাবা আসে না কেহ, যতক্ষন না ময়নার মা বাড়িত  আসিবে,  ততক্ষণ লাগিয়ায়  থাকে কান্দাকান্দী। 

ময়নার বাপটা,  ছট বহিনটার জন্মাবার ৭মাস পরেই মরিয়া যায়।সেই দিন থেকেই বাপ মরা বেটি দুইটাক নিয়া ময়নার মায়ের জীবন যুদ্ধের লড়াই শুরু হয়। 

ময়নার মা টক সমাজের ভালো মানুষলা ফের বেহা করিবার  কাথা কহে, কিন্তু ময়নার মা  আর বেহা করিবেনি। বেটি দুই টাক নিয়ায় সুখের সংসার বান্ধিবে বলে জিদ ধরিল। অল্প বয়সী বিধবা হবার কারনে, ময়নার মাওক অনেক খারাপ কাথা,  বাজে গালি শুনিবা হয়।  কুনো কাথার তুয়াক্কা না করিয়া,  ময়নার মা মুড়ির ব্যবসা শুরু করে। বেটি দুইটাক  মানষী করবা হবে ভাবিয়া,  ভোর ৩ টায় উঠিয়া মুড়ি ভাজিয়া  সকাল সকাল ঘুরিয়া মুড়ি দিয়া ,হাট থেকে বাজার করিয়া আন্ধা-বাড়া করিয়া বেটি দুইটাক খিলায়। 

 2 বছর মুড়ির ব্যবসা করিয়া ময়নার মা, কুনোমতন সংসার চলে দেখিয়া,  মুড়ির সাথে ঘুগনি আর মাংসের চাট রাখিয়া হাটত  বসিয়া বিক্রি করা শুরু করে। এতে করে,  দারু খুয়া মানষীলা চাট কিনে,  কেহ ফের ঘুগনি মুড়ি খায়,  তার সাথে হাটুয়া মানুষলা ২/১ শ মুড়িও  কিনে বাড়ির  জন্য। এমন করিয়ায়,  ময়নাটা হাইস্কুল ক্লাস সেভেনত উঠিয়া যায়, আর  ছটটা ক্লাস ফোরত। 
বিধবা হয়া সংসার চালা,  কতখান যে কষ্টকর!  সেইটা একজন বিধবা ছাড়া কেহ বুঝবা পারবে নি। 
হামার সমাজত,বিধবা হবার পরে পরেই, সমাজের পচলিত ভাষা - আন্ডিমাগি,  বেশ্যা মাগী, দুই নম্বরী  মাল,  বাড় ভাতারী, এইলা শুনবায় হয়,  যখনকা পাড়ার কুনো মাগী বা মরদ যাচিয়া ঝগড়া করিবা আসে তখন। একজন বিধবার জীবনত এই ভাষালা কমন। 
ময়নার মা ত আর ইচ্ছা করিয়া বিধবা হয় নি।আর সাহায্য যখন করিবায়  পারবেন নি, তখন এমুন ভাষা কহিবারো তমহার অধিকারও নাই। 
আসলে ঝগড়া লাগে তখনেই, যখনকা ওমুকের ভাতার ট ময়নার মায়ের পিছন পিছন ঘুরে,  ছাড়ি দেওয়া পাঠার মতন। শুধু কি একটায় পাঠা?  নাহে আরো ছে, এইড পাড়ার নাহে অন্য পাড়ার।। 
সবকিছু দেখিয়াও, ময়নার মার ছাড়া দোষ কাহারো নি দেখা পায়। ঝাপিয়া আসে ঝগড়া করিবা, নিজের ভাতারের গুনগান শুনাবা -
     "তোর ভাতার ট ত অনং নাহে গে, 
এই আন্ডিমাগী ট বুঝি কিছু খিলাইসে তোর ভাতারক, 
      নাইলে কেনে এনং ঘুরে বাজী? "
পতিটা পাড়া ময়নার মায়ের সমালোচনাত নাভিয়া পরে, বিশেষ কয়েকজন ভাল মরদেই বুঝে ময়নার মায়ের দুঃখ। বাকি কুনো মাগির ঠিনা দুঃখের কাথা কহিলে,  মাগি মনে মনে কহিবে-
       "মাগি ট,  মনে মনে মধু খাচি  
আর বাহিরে বাহিরে দুঃখ দেখাচি? "

এত এত অপবাদ,  সব সহ্য করিয়া নেয় ময়নার মা। কিন্তু বড় বেটির উপর যাতে এর আচও না পরে,  ময়নার বেহার জন্য জোগাড় শুরু করে ময়নার মা। ২৭ বছরের একজন সুপাত্রের সঙ্গে বেহাও দিয়া দেয়, শ্বশুরের দেওয়া ৩বিঘা জমি বন্ধক রাখিয়া। 
      আরহ একটা বঝা!  লক্ষী। 
সংসারত এলা দুই মায় বেটি। লক্ষীও হাইস্কুলত ভর্তি হয়া পড়াশুনা করেচে। ঘুগনি,  মুড়ি, চাটের ব্যবসার সাথে সাথে মুড়িয়া নাড়ুও বেচিবা শুরু করে ময়নার মা। বেটি বড় হচে,  মাথার বঝা ট আরহ ভারি হয়া  আসেচে। হাজার হোক ছট বেটি! ভেলিখান পহড়াবার সখ ময়নার মায়ের। না হলেও উচ্চমাধ্যমিক পাশ। 
লক্ষী এক চান্সে নাইন পাশ করিল,  তার সাথে মাওটাকো সাতাবা ধরিল। কাথা শুনেনা, কাম করে না, গরু ছাগল যেইঠিনায় বান্ধাল থাকে,  সেইন্যা থেকে আর নড়ায় না। এইবার পশ্ন,  তাইলে লক্ষী করে কি?? 
ক্লাস টেন মানেই প্রাইভেটের ঢিপি,স্কুল যাও, প্রাইভেট যাও,  সময় কুন্যা?? 
ময়নার মা কি জানে পড়াশুনার ব্যপার!! 
 
লক্ষীর  মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হবার কিছুদিন পরে পরেই ইচ্ছা না থাকিলেও একটা দারুখোর মাতালের  সাথে বেহার কাথা বার্তা শুরু করে।কিন্তু, লক্ষীর "নাই" কহাতে জোড় করে আর আগাবা পারেনি ময়নার মা। 
দিনে দিনে ময়নার মা ট্যানশনত চাট,  ঘুগনির ব্যবসা বাদ দেয়,  খালি মুড়ি আর মুড়িয়া নাড়ু নিয়া যায় হাটত। মাথা ব্যথা জ্বর আসিলেও তাক মুড়ি ভাজিবা হয়। আসলে নিজের বেটি দুইটার জন্য ময়নার মা জীবনটাক দাওত লাগায় দিসে।  
ভোর সাড়ে ৩ টায় উঠিয়া, কুপা হাতত ধরিয়া, খলাত ভাজা মুড়ি আর ফুটিবা চাহে না ময়নার মায়ের হাতত। জোড়ে জোড়ে দুঃখের গান ময়নার মায়ের গালাত শুনিয়া শুনিয়া, চখুর জলত  ভিজিয়া ওমরাও ড্যাম হয় গিসে। 
ময়নার মা এক দুই কাপ দারু খাইলে নাকি শরীল  ভাল থাকে,সাথত বিড়ি কেহ দিলে সেইটাও খায়া ফেলায়। আর বাড়িত নাতি জামাই বেটি আসিলে সৈতেনি পায়, জামাইক কি খিলা যায়। 
 জামাইক কহে,  "লক্ষীর বেহা লাগাবা হবে,  বড় দেখনা পলাশ! "
জামাই কহে -"হ্যাঁ মা"
লক্ষী যখন দ্বাদশ শ্রেণীত উঠিল, ময়নার মা তখন মুড়ির ব্যবসা বাদ দিয়া শুরু করিল ভাজা-পড়ার দকান। কালাই বড়া, চপ, দিলখোশ ,পাপর এইসবের। একটা হাবলাত গোটা দকানটয় মাথাত করিয়া  হাটত নিগায়  ময়নার মা। কে সাহায্য করিবে তাক!  সিক বসা মাটির চুলহা, নিহাই, জারনি, দকানের যাবতীয় জিনিস ঐ হাবলাত। মাথাত হাবলা আর একখান হাতত বেগ। 
লক্ষীর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা আটায় আসিলে, মাঝে মাঝেই ময়নার মায়ের শরীল খারাপ হয়। গ্যাসের টেবলেট আর মাথার বিশের  টেবলেট খায়া খায়য়া ময়নার মা দকান চালায়। 

কিন্তু একদিন, 
     শরীলের বিশ,  মাথার বিশ,  পেটের বিশ এতটায় বাড়িয়া গেল যে,  সেজা খানত তে উঠবায়  পারে না। ময়নার মায়ের ভসুর দেওর আসিয়া দেখে যে,  তাড়াতাড়ি হাসপাতাল নিগাবা হবে। তাড়াতাড়ি পাশের একটা হাসপাতালত নিগাইলে ডাক্তার টান্সার করে বড় হাসপাতালত। কিন্তু ময়নার মায়ের টাকা পাইসা নাই বলিয়া ভসুর দেওর কেহ আগাবা পারেনি। মাহাত -ফকিরক দেখায় দেখায় ময়নার মায়ের অসুখ আরহ বারিয়া  যায়।
অবশেষত সবায় মিলিয়া  বড় হাসপাতালত নিগাইলে, রিপোর্ট আসে পাকস্থলীর পচন,  সাথে ক্যানসার। খরচত কুনো লাব নাই। 

কিন্তু ময়নার মায়ের আর্তনাদ শুনিয়া, সেইদিন সবায় কান্দিস ল, যখন অনুরোধ করে কহে ময়নার মা--" মোক তহমরা বাঁচাও  গে, "
ভরুরক, দেওরক, জাওলাক কহে,  " মোক তহমরা বাঁচাও "
কিন্তু কে কহিবে ওক্, যে আর বাঁচিবার কুনো আশা নাই। 
সেইদিন নুংড়া গালি দেওয়া মাগি মরদলাও কান্দিসলো। 
একটা মানুষ দিনে রাতে ধুয়া খায়য়া,  ভাজা পড়া খায়া  সংসার ট টিকায় রাখিবা  পারে! যার ফল তাক কম বয়সে পাবা হয়। 
ময়নার মায়ের সেইদিন যায় যায় ভাব, সবায় মুখত তুলসী জল ঢালিয়া ,হাউমাউ করে কান্দিয়া ফালায়। আর ময়নার মায়ের গুনগান করে। সেইদিন ময়নার মায়ের ভাগ্য হয়, তার সুনাম আর চাতুরীর কথা শুনিবার। কিন্তুক,  ততক্ষনে আর সময় নাই বাঁচিয়া থাকিয়া ,সেই সেই মানষীলাক আগলায় ধরিয়া কান্দিবার। সময় শেষ হয়া আসিসে  ময়নার  মায়ের। 
বার বার ময়নার মা ছট বেটির হাত তুলে দেচে বংশের হাতত আর গঙ্গায় গঙ্গায় কহচে,  ছট বেটিক পার করিবার। 
সেইদিন সবায় সবার মতন জাগিয়া থাকিয়া অপেক্ষা করিসলো, কখুন জীবটো যায়! কেহ কেহ কহেচে -" জীবটো নাগিয়ায় থাকিল ছট বেটির উপর,  কত আশা করিল ছট বেটির বেহার তানে, 
 হায়রে কপাল! "
তখন রাতি 12 টা,  সবায় ঘুমের আলসিত। তখন--
তখন ময়নার মা,  বেটির দেওয়া নয়া শাড়িখান বাহির করে, কুনমতন সামলিয়া উঠিয়া,  ঘরের তালাখানেল বাঁশের সথে শাড়িখান বান্ধিয়া ফাঁস বেনায়, ছট বেটির ঘুমাবার দেহা দেখিয়া ,কান্দিয়া কান্দিয়া নিজের বেটির দেওয়া শাড়িখানক ধরিয়ায়  ফাঁসত গলা ঢুকাল। জীবনের সব আশা,  সব মায়া ত্যাগ করিল। 
       সেই একরাতেই,  সমাজের হাতত থেকে ময়নার মা  মুক্তি পায়।

বি:দ্র:  সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনাখান তুলি ধরিনু মোর নিজের  জ্যাঠাইর ।মোর জ্যাঠাই খুব ভালো মনের ছিল। আজি একজন বিদ্রোহী নারীক হারাইসে হামার এইঠিকার  সমাজ। 
   তাক এক নামত সবায় চিনে - "ময়নার মা" বুলি।