click on images to know more about the Images
এতদেরি তো করে না লোকটা।তাহলে আজ কেন এখনো ফিরছে না! কাজ হলেই সোজা বাড়িতে চলে আসে। বন্ধু-বান্ধব, আড্ডা, মদ কোনো কিছুরই তো তেমন নেশা নেই। যেটুকু বন্ধু – বান্ধব, আড্ডা ওই কাজের মাঝে অবসরেই। আর নেশার জিনিস তো কোনোদিন ছুয়েও দেখেনি। তবে আজ কেন ! আর ভাবতে পারলো না জানকী। শুধু কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগলো। আজকাল তার প্রায় এরকম হয়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষন। যেটুকু আবছা আলো জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল তাও রাত্রি এসে মুছে দিয়েছে। ঘরে আর বাইরে করতে করতে মনটা তার আরো উৎকণ্ঠায় ভরে উঠছিল। ঘর বলতে তো ওই একটুখানি ঝুপড়ি। হটাৎ জানকীর সকালের কথা মনে পড়লো। কী উৎসাহ লোকটার! যাওয়ার সময় বারবার বলে গেল আজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। এদিকে সে যেন সব কিছু রান্না করে জোগাড় করে রাখে। কাজ থেকে ফেরার পথে দুটো কেক নিয়ে আসবে। আজ তাদের দুই ছেলের প্রথম জন্মদিন। ঘড়ির কাটা একমনে তার নিজের কাজ করে যাচ্ছে। ছেলে দুটোও ঘুমে ঢুলছে। সারাদিন খেলে বেড়াই তাই সন্ধ্যা লাগলেই আর জেগে থাকতে পারে না। আজকে তবু অনেকক্ষন জেগে ছিল কিন্তু তারপর আর পারেনি। জানকী একবার পাশের ঝুপরিতে স্বামীর খোঁজ নিতে গেলে রতন বাউরি বলল “একসাথেই তো কাজ থেকে বেরিয়েছিলাম। তারপর কী একটা কাজের নাম করে অন্যদিকে চলে গেল। আমিও চলে আসলাম। চিন্তা করো না বৌদি। ঠিক চলে আসবে।“ নিজের ঝুপড়ীতে ফিরে এসে একবার ভাবলো টিভিতে খবর চালায়। কিন্তু পরক্ষণেই কী একটা ভয় গলার কাছে দলা হয়ে আসলো। আজকাল টিভিতে সেই একই খবর আর ভালো লাগেনা। দেখলেই নিজেদের কেমন অপরাধী মনে হয়। এইসব ভাবতে ভাবতে জানকী টিভিটা চালিয়ে দেয়। চ্যানেল পাল্টে খবরের কাছে আসতেই সে থামের মত স্থানু হয়ে যায়। সঞ্চালক যেন উত্তেজনা ধরে রাখতে পারছে না। সে বারবার বলে উঠছে “আরও একবার শহরের বুকে দলিত হত্যা। মিছিলে যোগ না দেওয়ার অপরাধে একদল লোক পিটিয়ে মারলো নিচু জাতের যুবককে।“ তারপর খবরের চ্যানেলে ভিডিও দেখানো শুরু করতেই জানকী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। চারপাশে ঘিরে ধরেছে লোকটাকে। সকলের হাতে লাঠি, তরোয়াল আর কপালে গেরুয়া ফেটটি। লোকটার মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে। লোকগুলো যতবার হুংকার দিয়ে উঠছে ততই সে ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছে। এক সময় একটা লোক তাকে সেই অমোঘ বাণীটি উচ্চারণ করতে বলল, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দটা বেরিয়ে আসার আগেই গলার স্বর বন্ধ হয়ে গেল।
রাত্রি গভীর। চাঁদের আলো ঝুপড়ী গুলোকে আরও মায়াবী করে তুলেছে। একটা ঝুপড়ী থেকে বিলাপের সঙ্গে সঙ্গে কতগুলো কথা তখনও ভেসে আসছে “ বাপ সখ করে নাম রেখেছিল রামচন্দ্র বাউড়ি। বাঁচাতে পারলো কোনো রাম! সেই তো মরলি।“ যমজ ভাই লব আর কুশ অনেকক্ষন উঠে গেছে। মায়ের কান্না শুনে তারাও কান্না জুড়ে দিয়েছে। পাশের ঝুপড়ির বয়স্ক বুড়ি বারবার সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে “ বেটি ভগবানের উপর ভরসা রাখ সব ঠিক হয়ে যাবে। উপরওয়ালা সব কিছুর হিসাব রাখছেন।“