click on images to know more about the Images

ছোটদের আম্বেদকর

Author: পীযূষ গায়েন

ছোটদের আম্বেদকর

আজ তোমাদের কাছে এমন একটা মানুষের গল্প বলবো যার কথা তোমরা বড়ো হওয়ার পরে বার বার শুনবে । কিন্তু কেমন ছিল তার ছোটবেলা, তোমরা শুনলে চমকে যাবে ।
অনেকে ছোট অবস্থা থেকে অনেক বড়ো হয়েছে, কিন্তু অচ্ছুৎ দাস হয়ে জন্মে এই দাস ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করেছেন এই ভারতে । এমন এক ব্যক্তির গল্প আজ শোনাবো তোমাদের ।
আচ্ছা কার কথা বলছি তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো  । বাবাসাহেব ভীম রাও রামজী আম্বেদকর । ডাক নাম ভীম । আমরা এখানে ভীম বলেই ডাকবো ।
আচ্ছা বলো তো কে তিনি ?  যিনি আমাদের সংবিধান লিখেছিলেন  ।
আচ্ছা সংবিধান কি ?  সংবিধান হলো কোন দেশের নিয়ম কানুন । কেমন করে চলবে এই দেশ  । সংবিধান মানে সম বিধান, মানে সবার জন্য সমান নিয়ম ।
বড়োলোক, গরীব লোক, উঁচু জাত, নীচু জাত দেশের কাছে সবাই সমান । সবাই যাতে ভালো থাকতে পারে, সুস্থ থাকতে পারে, কেউ যেন অনাহারে না থাকে । 
যারা গরীব, যারা অক্ষম, যারা দুর্বল তাদের জন্য দিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা ।
সবাই যেন ঠিক মতো শিক্ষা পায়,  চিকিৎসা পায়, বিচার পায়, এই সমস্ত নিয়ম কানুন লেখা আছে সংবিধানে । সংবিধান মেনেই চাকরি পাবে, ভোট হবে । দেশ চলবে সংবিধান মেনে । এই সংবিধান লিখেছিলেন আম্বেদকর । ডাক নাম ভীম । তোমরা যখন বড়ো হবে তখন অবশ্যই সংবিধান পড়বে ।  
এখন আমরা আসি ভীমের গল্পে ।
ভীমের জন্ম ১৮৯১ সালে । এখান থেকে প্রায় ১৩০ বছর আগে । ভীমেরা ছিল চোদ্দ ভাই বোন । তার মধ্যে সাত জনই মরে যায় বেঁচে ছিল মাত্র পাঁচ জন । তার কারণ অপুষ্টি । খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্ম ভীমের ।
ভীমের বাবার নাম রামজি মালোজী  শকপাল । মায়ের নাম ভীমাবাঈ । ভীমের বাবা ছিলেন খুব উদারপন্থী, যুক্তিবাদী । কবিরের মতাদর্শে  বিশ্বাসী । বাবা প্রথমে চাকরি করতেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে । থাকতেন মধ্যপ্রদেশের মউ শহরের সেনাবাহিনীর ছাউনীতে । এখানেই ১৮৯১ সালের ১৪ই এপ্রিল ভীমের জন্ম হয় ।
ভীমের আসল বাড়ি কোথায় ছিল বলো তো ? 
মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরি জেলার ওম্বাবাদে গ্রামে । এরা ছিল মাহার জনগোষ্ঠী সমাজের । নীচু জাত বলে ছোঁয়াছুঁয়ি এড়িয়ে চলতো সবাই । কেউ এদেরকে ছুঁয়ে দিলে তাদের নাকি জাত চলে যাবে । এমনি ছিল সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থা ।
এদিকে ১৮৯৩ সালে ভীমের বাবার চাকরি থেকে অবসর নিতে হোল । আবার পাঁচ বছর বয়সে ১৮৯৬ সালে ভীমের মা মারা গেলেন । ভীমের বয়স তখন মাত্র পাঁচ । ছোট্ট ভীম মাতৃহারা হলো । মানুষ হলো পিসিমা মীরাবাঈ এর কাছে । তখন বেঁচে আছে ১৪ ভাইবোনের মধ্যে পাঁচ জন । ভীম সবার ছোট ।

 

ভীমের স্কুল জীবন 

এবার আমরা শুনবো ভীমের পড়াশুনা কিভাবে হোল । তোমরা সবটা জানলে হাঁ হয়ে যাবে, কিভাবে ভীমের স্কুল জীবন কেটেছিল ।
তোমরা যেভাবে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে আসো, ভীম কি সেইভাবে স্কুলে আসতো ? একদমই নয় । বগলে শ্লেট, বই, বসার জন্য ছেঁড়া চট আর খড়ির পেন্সিল । পরনে শত ছিন্ন জামা ।
তোমরা যেভাবে ক্লাসে বসে আছো, ভীম কি এইভাবে ক্লাসে বসতে পারতো ? একদম না । ভীমকে আলাদা বসতে হবে ।
ক্লাসে সবার সঙ্গে বসতে পারবে না । কারো সঙ্গে খেলতে পারবে না । কোন বন্ধু থাকবে না । কারণ ভীম নীচু জাতের । ক্লাসের বাইরে বসতে হবে । মাষ্টার মশায় শ্লেট, বই, খাতা কিছু ছোঁবেন না । দূর থেকে দেখবেন । ছুলে জাত যাবে ।
জল খেতে পারবে না । জলের পাত্রে হাত লাগাতে পারবে না  স্কুলের পিওন কখন এসে দূর থেকে জল ঢেলে দেবে, হাত পেতে খেতে হবে । তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে । এইরকম অবস্থা হলে তোমাদের কেমন লাগতো ?
কারো সঙ্গে খেলতে পারবে না । কোন বন্ধু থাকবে না । এইরকম অবস্থা হলে তোমরা কি আর স্কুলে আসতে চাইতে ? তাহলে ভাবো তো ভীমের কেমন লাগতো !
শুধু তাই নয়, ভীমের স্কুলের খাতায় নাম লেখা হোল ভীমরাও রামজী আম্বাবাদেকর । শকপাল লিখলে সবাই নীচু জাতি বলে আরো ঘৃণা করবে, তাই নিজেদের গ্রামের নাম আম্বাবাদের নাম দিয়ে আম্বাবাদেকর রাখা হোল । পরে সংক্ষেপে আম্বেদকর হোল ।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ভীম আর তার দাদা  আনন্দ রাও সাতারায় প্রাথমিক স্কুলে  পড়াশোনা করতেন । বাবা তখন গোরেগাওতে কাজ করতেন ।

 

অস্পৃশ্যতা কতো ভয়ঙ্কর !

অস্পৃশ্যতা কতো ভয়ঙ্কর, তার একটা ছোট গল্প তোমাদেরকে বলি, তাহলে বুঝতে পারবে কি যন্ত্রণা ভীমকে সারাজীবন বহন করতে হয়েছে ।
একদিন ছোট ভীম, তার দাদা আনন্দ রাও আর তার এক ছোট ভাগ্নে মিলে বাবার কাছে গোরেগাওতে যাবার জন্য ঠিক করলো । তিনজনে নিজেদের যেটুকু ভালো জামা প্যন্ট ছিল, সেগুলো পরে নিল । সাতারা থেকে তিনজন একটা ট্রেনে উঠলো । সেখান থেকে গিয়ে গোরেগাও এর কাছে একটা স্টেশনে ট্রেন থেকে নামলো । কিন্তু তারপরে তিনজনকে যেতে হবে অনেক দূরে । কি করে যাবে ?
তখন কার সময় ফাকা স্টেশন । শেষে স্টেশন মাষ্টারের কাছে গেল, বলল নিজেদের সমস্যার কথা । কিন্তু যেই স্টেশন মাষ্টার জানতে পারলো যে এরা মাহার জাতির, তখণোই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল । তখন ওরা অনেক কষ্টে বেশী পয়সা দিয়ে একটা গ্রুর গাড়ির দারোয়ানকে যেতে রাজী করালো । 
মাঝ রাস্তায় সেই গাড়োয়ান যখন জানতে পারলো  যে এরা মাহার জাতির অস্পৃশ্য ঘরের ছেলেরা । সে এতো রেগে গেলো গাড়ী উল্টে দিল । তিনজন ছোট শিশুকে সজোরে মাটিতে ফেলে দিল । কারণ তার গাড়ী অপবিত্র হয়েছে, তার গ্রুগুলো অপবিত্র হয়েছে । সমাজে যদি সবাই জানতে পারে তবে তাকেও সমাজ থেকে বের করে দেবে । 
দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ও ওরা তখন তাকে শান্ত করতে পারছে না । সে ওই শিশুদেরকে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম করল । ওরা তিনজন তখন খুব কান্নাকাটি করতে লাগলো । তখন দারোয়ানের একটু দয়া হোল । সেইজন্য বেশী পয়সা নিয়ে গাড়ীতে ওদেরকে উঠতে দিল । কিন্তু সে নিজে গাড়ী চালাতে রাজি হলো না । ভীমের দাদাকে গাড়ী চালাতে হোল । গাড়োয়ান ওদের সঙ্গে গাড়ীতে ও চড়তে রাজী হলো না । তখনকার সময়ে এইরকম ছিল আজকের যারা তফশিলি তাদের উপর জাতের নামে অত্যাচার ।
শুধু তাই নয়, ছাতি ফাটা তেষ্টা নিয়ে ও পথে কোথাও এক ফোটা জল খেতে পারলো না কারণ কোথা ও জল ছোয়ার অধিকার নেই ।
অনেক কষ্টে তারা তাদের বাবার কাছে গিয়ে পৌছালো । কিন্তু সেখানে ও কারো সামনে কোন ইদারা, পুকুর, কুয়ো থেকে জল নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল । একদিন পিপাসায় কাতর হয়ে একটা জলাশয় থেকে গোপনে জলপান করে, কিন্তু পরে ধরা পড়ে গিয়ে অনেক মার খেতে হয় ।
একদিন নাপিতের কাছে চুল কাটতে গিয়ে, চুল কাটার পরে নাপিত জানতে পারে মাহার জাতির অস্পৃশ্য । তখন খুব মারধোর করে, আগে কেন বলেনি সেই কারণে । এই ছিল তখন ব্রাহ্মণদের তৈরী সমাজ ব্যবস্থা । মানুষে মানুষে এতো ভেদাভেদ !
এইরকম পরিস্থিতিতে কারো পড়াশূনা কি সম্ভব বলোতো দেখি ?

 

ভীমের উঁচু ক্লাসে ভর্তি 

এতো অতাচারের মধ্যে মাঝে মাঝে মনে হোত পালিয়ে গিয়ে কাজ করবে । বাবার জন্য ভীষণ  কষ্ট হোত । একদিন পিসীমার ব্যাগ থেকে ২ পয়সা নিয়ে পালিয়ে যাবে ঠিক ও করেছিল । কিন্তু হলো না ।
ঠিক করলো, পড়াশুনা করে এর যোগ্য জবাব দিতে হবে । পড়াশুনাতে খুব মন দিল । ভীমের বাবা দেখলো ভীমকে পড়াশুনাটা ভালো করে করাতে হবে । কারণ ভীমের পড়াশুনায় মন আছে ।
শকপাল ভীমকে নিয়ে বোম্বে চলে আসলেন ।  ভর্তি করলেন বোম্বের একটি নামী স্কুলে । তার নাম ছিল এলফিনস্টোন স্কুল ।
একটা বস্তির, একটা ঘরে থাকার ব্যবস্থা হোল । ঘরটি কেমন ছিল বলো তো ?
     সেই ঘরের এক কোণায় একটি ছাগল, একদিকে রান্নার কাঠ, ঘুঁটে ঝাপানো, কোন রকমে একদিকে একজন শুতে পারে । ভীমের বাবা দুটো পর্যন্ত জেগে থেকে ভীমকে ঘুম পাড়াতেন । তারপর দুটোর সময় ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে পড়তে বসাতেন । তারপর নিজে ঘুমাতেন । এভাবেই চলতো ভীমের পড়াশুনা ।
এই স্কুলে ও সেই একই অবস্থা । ভীম একমাত্র নিম্ন বর্ণের ছেলে  । প্রতি পদে হেনস্থা হতে হতো তাকে । কিন্তু ভীম হাল ছাড়ে নি । সে পড়াশুনা চালিয়ে গেল । একটা বিষয়  সংস্কৃত নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু বলো তো ভীম কি সংস্কৃত নিয়ে পড়তে পারলো ?
     না, পারলো না । কারণ তখন ব্রাহ্মণ ছাড়া কেউ সংস্কৃত পড়তে পারবে না । তাই ভীমকে সংস্কৃত পড়তে দেওয়া হলো না । তার বদলে ভীমকে পার্শি নিয়ে পড়তে হোল ।  একজন কায়স্থ ব্যক্তি ভীমকে প্রায়ই সহযোগিতা করতেন তার নাম  কৃষ্ণজী অর্জুন কেলুসকার ।
ভীম পার্শিতে সেরা নাম্বার পেল । অবশেষে ভীম ম্যাট্রিক পাশ করলো ১৯০৭ সালে । ম্যাট্রিক পাশ মানে জানো তো ? এখন যেমন মাধ্যমিক বা ক্লাস টেন পাশ করা ।
মাহার সমাজ ভীমকে নিয়ে গর্বিত । তাদের সমাজের একজন  ম্যাট্রিক পাশ করেছে । তারা সম্বর্ধনা দেবে ঠিক করলো । সেই সভায় সমস্ত মাহার সমাজের মানুষ আর দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত হলেন, এস কে বোলে এবং কৃষ্ণজী অর্জুন কেলুসকার ।
বলো তো কে ছিলেন এরা দুজন ? এস কে বোলে এবং কৃষ্ণজী  অর্জুন কেলুসকার  দুজনেই ছিলেন অব্রাহ্মণ এবং  সমাজ কর্মী  । জাতপাত প্রথার বিরোধী, মহামানব বুদ্ধের অনুসারী । কৃষ্ণজী অর্জুন কেলুসকার, ভীমের হাতে তুলে দিলেন একটা বই মহামানব বুদ্ধের জীবনী । 
এই বইয়ের প্রভাব ভীমের জীবনকে পরবর্তী জীবনে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করেছিল । কেলুস্কর সেদিন সবার সামনে ভীমের বাবাকে প্রশ্ন করলেন – ভীমকে আরো বেশী পড়ানোর জন্য । ভীমের বাবা শকপাল বললেন দারিদ্র্য আমার বড়ো সমস্যা কিন্তু তবু ভীমকে আমি যেভাবে পারি আরো পড়াব ।

 

ভীমের বিয়ে 

এই বিয়ের গল্প শুনলে তোমাদের মজা ও লাগবে আবার কষ্ট ও হবে । এরকম বিয়ে এর আগে কেউ দেখো ও নি, শোনো ও নি । 
ভীম সবে ম্যাট্রিক পাশ করেছে । ১৬ বছর মাত্র বয়স । এই বয়সে বিয়ে কি জিনিস কেউ জানে ? কিন্তু সেই বয়সেই তখনকার সময়ে বিয়ে দেওয়ার নিয়ম । 
তার নাম কি বলো তো ? বাল্যবিবাহ ।
      আর যার সঙ্গে ভীমের বিয়ে হচ্ছে তার নাম রামী পরে নাম হয় রমাবাঈ তার সেই সময় বয়স মাত্র ৯ বছর । বুঝতে পারছো তখনকার দিনে কতো কম বয়সে বিয়ে হতো ।
রমাবাঈ এর বাবার নাম ভীকু ওয়ালাস্কর, একজন দিনমজুর, কুলী ।
এইবার ভাবো বিয়ে হবে কি করে ? কোথায় বিয়ে হবে ? নিজেদের একসঙ্গে দু জনের শোওয়ার জায়গা নেই, তাদের ওই বস্তিতে বিয়ে হবে কোথায় ? 
 শেষে বিয়ের জায়গা ঠিক করা হলো বোম্বের বাইকুল্লা মাছের বাজারে  । মাথার উপরে কোন ছাদ নেই । হাট বাজার রাত্রি ১০ টা পর্যন্ত শেষ হয়ে গেল । তারপরে বাজারের এক কোনে পাত্র পক্ষ, আর এক কোণে পাত্রী পক্ষরা দখল নিল ।
তাহলে বুঝতে পারছো তো যেখানে মাছ বিক্রি হয়, সেখানে বসেছে বিয়ের আসর । পায়ের নীচে নোংরা জলের নালা । সকালে মহিলারা ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে আসবে বিক্রি করার জন্য, তার আগেই জায়গা ছেড়ে দিতে হবে ।
কোন উচ্চবর্ণের লোক, এমনকি কোন ব্রাহ্মণদের এই বিয়েতে ডাকা হয় না বা আসে না । ভোর হওয়ার আগেই বিবাহ শেষ করতে হোল ।
     এই হোল ভারত বর্ষের এক কৃতী সন্তানের  বিবাহ আসর ।

 

পরবর্তী শিক্ষা 

ভীমের বাবা কথা রাখলেন । ভীমকে এলফিনস্টোন কলেজে ভর্তি করে দিলেন । একজন অস্পৃশ্য ছাত্রের কাছে এ এক অভিনব বিষয় । সে কলেজে পড়ছে । কিন্তু ভীমের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ল । তার বড়ো কারণ অপুষ্টি ও অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া । একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল, আর এদিকে বাবার আর আর্থিক সংগতি ছিল না  ছেলেকে পড়ানোর ।
তাহলে কি ভীমের আর পড়াশুনা হবে না ? কি হবে ভীমের ? 
সেই সময় বরোদার  মহারাজা ছিলেন সয়াজী্রাও গাই কোয়াড় ।তিনি একজন শূদ্র সমাজের মানুষ ছিলেন । কেলুস্কর ভীম কে তার কাছে নিয়ে গেলেন । তিনি কিছু প্রশ্ন ভীমকে করলেন । যথাযথ উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট হলেন । মাসে ২৫ টাকা করে বৃত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন ।
ভীম নব উদ্যমে এলফিনস্টোন কলেজে আবার পড়াশুনা শুরু করলো  । একজন অধ্যাপক মুলার তাকে বই জামাকাপড় দিয়ে সাহায্য করতেন । কিন্তু বাকি সর্বত্র তাকে জাতের অত্যাচার সইতে হোত । কলেজের হোষ্টেল কিপার একজন ব্রাহ্মণ, সে কখনোই তাকে চা বা জলখাবার কিছুই দিত না ।
বুঝতে পারছো একজন ওই বয়সের  যুবকের উপর কিরকম মানসিক চাপ তৈরী হোত । ভাবো তো তোমরা হলে কি করতে ?
ভীম দাঁতে দাঁত চেপে সব অত্যাচার সহ্য করেছে । কেন বলতো ? কারণ তার আসল লক্ষ্য ছিল তার যেভাবেই হোক  শিক্ষা অর্জন করতে হবে ।
অবশেষে ভীম বি এ পাশ করলো ,১৯১২ সালে ।

 

ভীমের জীবনে বড়ো আঘাত 

বি এ তো পাশ হলো, বলো তো এখন ভীম কি করবে ?
 ভীমকে বরোদার রাজা  চাকরির জন্য নির্বাচিত করলেন । ভীম বরোদা রাজ্যে কোন অফিসের কাজে যোগ দিলেন না । ভীম সেনাবাহিনীতে লেফটেনান্ট পদে যোগ দিলেন ।
বলতে পারবে কেন ভীম অফিসের কাজে যোগ না দিয়ে সেনাবাহিনীর কাজে যোগ দিলেন ?  কারণ ভীম বুঝে গিয়েছিল অফিসে সে যতো বড়ো পদে কিম্বা যতো ভালো কাজ ক্রুক না কেন কেউ তাকে মানবে না, নীচু জাত বলে হেয় করবে । কিন্তু সেনাবাহিনিতে সে রকম করতে পারবে না । সবাইকে শৃংখলা মেনে চলতে হয় ।
সেই মতো ১৯১৩ সালের জানুয়ারী মাসে বরোদার কাজে যোগ দিলেন ।
কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ভীমকে বোম্বে ফিরতে হোল পিতা মৃত্যু শয্যায় । ১৯১৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী পিতা ছেড়ে গেলেন আম্বেদকরকে । একজন অস্পৃশ্য সমাজের মানুষ ভীমের বাবা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন নিজের ছোট সন্তানটিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে ।
ভীমের আর্তনাদ, বুকের মধ্যে হাহাকার, তার জীবনের সর্বাধিক শোকের দিন ছিল এই দিনটি । তার পিতাকে হারানোর এই দিনটি  ।
তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছো কি কঠিন পরীক্ষা ছিল, কি কষ্টকর সময় ছিল এই সময়টি ভীমের জীবনে ।

 

উচ্চশিক্ষা 

জ্ঞানপিপাসূ ভীম । ভীমকে এখন আমরা এবার থেকে আম্বেদকর বলবো । জ্ঞান লাভের ইচ্ছা আছে কিন্তু সামর্থ্য নেই । কি করবে এখন আম্বেদকর ?
একটা সুযোগ এসে গেল । বরোদার মহারাজা তিনি ছিলেন একজন অনগ্রসর সমাজের মানুষ । তিনি কয়েকজনকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠাতে চান । কিন্তু শর্ত হচ্ছে বিদেশ থেকে ফিরে এসে অন্ততঃ দশ বছর তার রাজ্যে চাকরি করতে হবে ।
আম্বেদকর এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না । ১৯১৩ সালের ৪ঠা জুন বরোদা রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি প্ত্রে শ্বাক্ষর হোল ।
এবার আম্বেদকরের গন্তব্য কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ।
কোথায় বলতো এই কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ? আমেরিকাতে ।
ভারতবর্ষের প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম  একজন ব্যক্তি  আম্বেদকর, যিনি শিক্ষার জন্য আমেরিকাতে গেলেন ।
আম্বেদকরের কাছে এ এক নূতন জগত । এ এক খোলা হাওয়া, উন্মুক্ত পরিবেশ । জাতপাতের দুর্গন্ধ এখানে একেবারে নেই । স্বদেশে যে অস্পৃশ্য, অচ্ছুৎ বিদেশে সে সবার কাছে সমানভাবেই  গ্রহণযোগ্য, এখানে সে স্বাধীন ।
স্বদেশে যে অস্পৃশ্য, অচ্ছুৎ শুধু তাই নয় এতো বছরের শিক্ষা জীবনে একজন ও বন্ধু গড়ে ওঠেনি, এখানে এসেই সে কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে গেলেন এক বন্ধুকে নেভাল ভাতেনা, সারা জীবন তার সেই বন্ধুত্ব বজায় ছিল । সুখে দুঃখে  বন্ধুত্বের হাত সরিয়ে নেয়নি কখনো ।
আর পেলেন প্রফেসর সেলিগম্যান কে, যিনি তার বাড়ির লাইব্রেরি এই ছাত্রের জন্য সব সময় উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন ।
আম্বেদকরের জ্ঞান পিপাসা অদম্য । দিনের আঠারো ঘণ্টা পড়াশুনা । দু বছরের মধ্যে এমএ ডিগ্রী পেয়ে গেলেন । সালটি ছিল ১৯১৫ । লিখে ফেললেন দারুণ দারুণ গবেষণাপ্ত্র । বিভিন্ন সেমিনারে তার সেই গবেষণা প্ত্র পাঠ করে শোনানো হয় । আম্বেদকর সম্মান পেতে শুরু করলেন ।
আম্বেদকর এখানে ও থামতে রাজি নন । আরো পড়তে চান ।
 ১৯১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে আম্বেদকরের আরো একটি গবেষণা প্ত্র দিয়ে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়ে গেলেন । এতো কম সময়ে ডক্টরেট এ এক ইতিহাস ।
আম্বেদকর এখানে ও থামতে রাজি নন । আরো পড়তে চান । এবার গন্তব্যস্থল লন্ডন । সময় কম । আর্থিক সংগতি কম । যে কোন সময় বৃত্তির টাকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে । তাই একবেলা খেয়ে, একবেলার পয়সা জমিয়ে বই কেনা, পড়াশুনা ।
বুঝতে পারছো কি অদম্য ইচ্ছার জোর !
লন্ডনের স্কুল অফ ইকোনমিক্সে অর্থনীতি, আর গ্রেস ইনে আইন, একসঙ্গে পড়তে চান । পড়ার নিয়ম নেই । কিন্তু আম্বেদকর নাছোড় বান্দা ।
সবটাই তিনি করে দেখিয়ে দিয়েছেন ।
এ লড়াই এতোটা ছোট ছিল না । মাঝে তাঁর বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তিনি ফিরে আসতে বাধ্য হন । পরে আবার লন্ডনে গিয়ে তিনি তাঁর পড়াশুনা শেষ করেন ।
 স্বদেশের মানুষেরা বারবার বাধা দিয়েছে, কিন্তু তিনি সব লড়াই জিতে দেখিয়ে দিয়েছেন ।
তোমরা যখন বড়ো হবে, আরো জানতে ইচ্ছা করবে,ওনার সম্বন্ধে পড়বে, তখন সব জানতে পারবে ।

 

নূতন লড়াই- চাকরি

ইতিমধ্যে তিনি বহু সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছিলেন । ভারতের জাতপাতের যন্ত্রণা তাঁর কাছে ছিল পীড়া দায়ক, এই ব্যবস্থার সমাপ্তি তাঁর একটা বড়ো লক্ষ্য । সে নিয়ে তাঁর অনেক লেখালেখি চলতে থাকে ।
এখন লন্ডন থেকে ফিরে এসে আম্বেদকরের কি করণীয় তোমাদের মনে আছে ? চুক্তিমতো বরোদা রাজ্যে কাজে যোগ দিতে হবে । বরোদার মহারাজা তাকে খুব উচ্চ পদে নিযুক্ত করেছেন । সচিব পদে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে । এরপরে তাকে অর্থমন্ত্রী করার ইচ্ছা । আদেশ দিয়েছেন স্টেশন থেকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে আসতে হবে । আম্বেদকর এখন এ দেশের গর্ব ।
তোমরা নিশ্চয় ভাবছো আম্বেদকরের সম্বর্ধনা কেমন হোল  !
কিন্তু  মজার গল্প কি জান ? সারা রাজ্যের লোক জেনে গেছে এক অস্পৃশ্য মাহার উঁচু পদ নিয়ে বরোদা শহরে আসছে । সঙ্গে ছিল আম্বেদকরের দাদা ।  অভ্যর্থনা তো দূরের কথা হোটেল বা ছাত্রাবাসে কোথাও তাদের থাকার জায়গা পর্যন্ত হোল না । মহারাজা আদেশ দেওয়ার পরে ও কেউ অস্পৃশ্য সমাজের  এই উচ্চ শিক্ষিত মানুষটিকে সম্মান দেওয়া তো দূরের কথা থাকার জায়গাটুকু দিতেও রাজী হোল না  । ব্রাহ্মণদের তৈরী এই জাত ব্যবস্থা কতো গভীর ষড়যন্ত্রের শিকল, এটা এখন বুঝতে পারছো ?
আম্বেদকর বাধ্য হোল পরিচয় গোপন রেখে এক পার্শী সরাই খানায় আশ্রয় নিতে । আম্বেদকর এতো বড়ো পদে যোগ দিলেন ঠিকই, কিন্তু কেউই তাঁর ঘরে ঢুকতেন না ।  পিওন পর্যন্ত দূর থেকে টেবিলে ফাইল ছুড়ে দিত । এতো ভয়ঙ্কর সামাজিক অত্যাচার, আম্বেদকরকে দিনের পর দিন সইতে হোল ।
কি বুঝতে পারছো বরোদার মহারাজা কি তাকে বাঁচাতে পারলেন ?  না ।
এর চূড়ান্ত পরিণতি পার্শীরা যেদিন জানতে পারলো আম্বেদকর আসলে এক অস্পৃশ্য মাহার, তারা লাঠিসোঠা নিয়ে আম্বেদকরকে ঘর থেকে বের করে দিল ।
বুঝতে পারলেন শিক্ষা পান্ডিত্য যতোই থাক, বিদেশে তিনি যতোই সম্মানিত হোন না কেন, এ দেশে এই জাত ব্যাবস্থা এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ ! অসহায় ক্রোধ নিয়ে বরোদাকে বিদায় জানালেন আম্বেদকর ।
শিক্ষা, মানবিকতা এমনকি শাসক ও ক্ষুদ্র হয়ে গেল এই অমানবিক সামাজিক ব্যবস্থা এই জাত বৈষম্যের কাছে । সেদিন এই জাত বৈষম্য জিতে গেল । আম্বেদকর মানুষের ন্যূনতম সম্মানটুকু ও পেলেন না ।

 

আম্বেদকরের  আসল লড়াই

এইবার শুরু হোল আম্বেদকরের আসল লড়াই । ভারতবর্ষের পিছিয়ে রাখা মানুষদের জন্য লড়াই । এদেশের অব্রাহ্মণরা সামাজিক ভাবে, সাংস্কৃতিক ভাবে, রাজনৈতিক ভাবে শোষিত এবং শাসিত হচ্ছে উচ্চবর্ণের দ্বারা ।
নিম্নবর্ণের মানুষকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হতো না । একবার কালারাম মন্দিরে ঢুকতে গিয়ে আম্বেদকরের মাথা ফাটিয়ে দিল । তারপর থেকে আম্বেদকর বললেন মন্দিরে ঢুকে আমাদের কোন লাভ নেই । ওখানে ব্রাহ্মণদের লাভের ব্যবস্থা করা আছে ।
এরপর আম্বেদকরের চৌদার জল আন্দোলন । ব্রিটিশ সরকার বলা সত্তেও জল ছুতে দেওয়া হতো না । হাজার হাজার মানূষ নিয়ে পুকুর থেকে জল নেওয়ার আন্দোলন করেন ।
আম্বেদকর শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করলেন ।
গান্ধীর সঙ্গে ও আম্বেদকরের খুব বিতর্ক হোত । আম্বেদকরের বক্তব্য ছিল গান্ধীর লড়াই উচ্চবর্ণের স্বাধীনতার জন্য । প্রতিটা প্ত্রিকা উচ্চবর্ণের, তাই তারা আম্বেদকরকে ছোট করে দেখাতো, আম্বেদকরকে গালি দিতো ।  
     লন্ডনের রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স থেকে ব্রিটিশদের থেকে আম্বেদকর পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্য অধিকার আদায় করে আনলেন । সেই অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য গান্ধী অনশন শুরু করলেন ১৯৩০ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর আম্বেদকরের  বিরুদ্ধে । পিছিয়ে রাখা সমাজের মানুষের ঘর বাড়ী পোড়াতে শুরু করলো উচ্চবর্ণের মানুষেরা । আম্বেদকর বাধ্য হলেন ১৯৩০ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর গান্ধীর সঙ্গে চুক্তি করতে । এই কুখ্যাত চুক্তি – পুণা চুক্তি নামে খ্যাত ।
মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথ মন্ডল আম্বেদকরকে বাংলা থেকে জিতিয়ে নিয়ে গেলেন সংসদে । ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হোল ব্রিটিশদের হাত থেকে । 
আম্বেদকরের মতো শিক্ষিত মানুষ তখন সংসদে একজন ও নেই । তাই সংবিধান তৈরীর দায়িত্ব তাকে দেওয়া হোল । তিনি হলেন ভারতের প্রথম আইন মন্ত্রী । সংসদে ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হোল, আর ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারী এ দেশে চালু হোল ।  আম্বেদকর মেয়েদের সমান অধিকারের জন্য পার্লামেন্টে বিল আনতে চাইলেন । পার্লামেন্টের ব্রাহ্মণ সাংসদরা রাজী হচ্ছিলেন না ।
     ব্রাহ্মণরা কখনো মেয়েদের সমান অধিকার দিতে রাজী নয় । যেমন এখনো তোমরা দেখবে উপনয়নের সময় পৈতে পুরুষ ব্রাহ্মণরা পরে । মেয়েদের উপনয়ন হয় না, পূজাও করতে পারে না মেয়েরা ।
তখন আম্বেদকর ১৯৫১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ।
আম্বেদকর বুঝিয়ে দিলেন, এ দেশ গৌতম বুদ্ধের, স্ম্রাট অশোকের । যেখানে সব মানুষই সমান । তাই অশোক স্তম্ভ হোল জাতীয় প্রতীক ।
আম্বেদকর বুঝেছিলেন এ দেশ গৌতম বুদ্ধের, স্ম্রাট অশোকের । ১৯৫৬ সালের ১৪ই অক্টোবর নাগপুরে ৫ লাখ মানুষকে নিয়ে সাম্যের দর্শন, সদ্ধম্মে ফিরলেন । বৌদ্ধ দর্শন গ্রহণ করলেন ।
বাবাসাহেব কেন বলতো বৌদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করলেন ? কারণ বাবাসাহেব না জেনে, না বুঝে, না দেখে কোনকিছু মানতেন না । সিদ্ধার্থ গৌতম যিনি বুদ্ধ হয়েছিলেন, তিনি ও না দেখে, না জেনে, না বুঝে কোন কিছু গ্রহণ করতেন না ।
বৌদ্ধ মানে কি ? বৌদ্ধ মানে জ্ঞান বা শিক্ষা । আর বুদ্ধ মানে যিনি জ্ঞানী ।  আর ধম্ম মানে কি জানো ? ধম্ম মানে নৈতিক শিক্ষা ।  বুদ্ধের আগে আরো সাতাশ জন বুদ্ধ ছিলেন ।
প্রাচীন ভারত ছিল শ্রমণ সংস্কৃতির পীঠস্থান । শ্রমণ বা বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ছিলেন সমাজের শিক্ষক । এ দেশে ছিল বড়ো বড়ো বিশ্ববিদ্যালয় । যেমন নালন্দা, তক্ষশীলা, বিক্রমশীলা, ওদন্তপুরী, মোঘলমারী, রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহার । বিদেশ থেকে ছাত্ররা পড়তে আসতো এখানে । শ্রমণ শিক্ষকরা পড়াতেন এখানে ।
 বাবাসাহেব তাই গ্রহণ করলেন ত্রিশরণ, উচ্চারণ করলেন পঞ্চশীল । আচ্ছা, ত্রিশরণ কি ? এটা কি কোন মন্ত্র ? না একদমই তা নয় । ত্রিশরণ হল প্রতিজ্ঞা ।
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, মানে- আমি জ্ঞানের শরণ নেবো ।
ধম্মং শরণং গচ্ছামি, মানে – আমি নৈতিক শিক্ষা মেনে চলবো ।
সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি, মানে – আমি ও আমরা সমাজে সংঘবদ্ধ থাকবো ।
আর পঞ্চশীল মানে কি ? এটাও পাঁচটি প্রতিজ্ঞা ।
অন্যের না দেওয়া জিনিস কখনোই গ্রহণ করবো না ।
মিথ্যা কথা বলবো না ।
অযথা কোন প্রাণীকে মারবো না ।
অন্যের কোন ক্ষতিকারক কাজ কখনোই করবো না ।
নেশা, মদ্যপান ইত্যাদি কখনোই কোন খারাপ জিনিস খাব না ।
ভাবো তো সবাই যদি এই নীতিগুলো মেনে চলতো তাহলে সমাজে কি এতো সমস্যা, লড়াই, ঝগড়া হতো ? 
তোমরা কি জানো একজন চীন থেকে একজন চৈনিক পরিব্রাজক এই বৌদ্ধ ভারতে এসেছিল । সেই চৈনিক পরিব্রাজকের নাম ছিল হিউয়েন সাঙ ।  তখন এদেশে মুসলমানরা আসে নি, ব্রিটিশরা আসে নি । তখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এ দেশে । তিনি বলেছিলেন “নালন্দার ৭০০ বছরের ইতিহাসে একজন ছাত্র ও পাওয়া যায় নি, যে অপরাধ করেছে” । 
তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছো কেমন ছিল তখন শিক্ষা ব্যবস্থা ? আর কেন বাবাসাহেব বৌদ্ধ ধম্ম গ্রহণ করেছিলেন ?
১৯৫৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর আম্বেদকরের মহাপরিনির্বান ঘটল । আম্বেদকরের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরী হয় সারা দেশে । সবাই তখন বলতে থাকে আম্বেদকরের মৃত্যু এক ষড়যন্ত্র ।  প্রধানমন্ত্রী নেহেরু তখন বাধ্য হয় এক সদস্যের সাক্সেনা কমিটি গড়তে । কিন্তু আজো দেশের মানুষ সেই রিপোর্ট দেখতে পারে নি ।
 আমরা হারালাম সাম্যের মহানায়ক, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের মুক্তিদূত, মানবতাবাদের প্রতীক, আধুনিক ভারতের বুদ্ধকে । সারা ভারতের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানায় “জয় ভীম” বলে ।
এইভাবে একটা যুগের সমাপ্তি ঘটল ।

 

ছোটদের আম্বেদকর
                                        পীযূষ গায়েন