click on images to know more about the Images

অসুর সাংস্কৃতিক বাস্তব পর্যালোচনা

Author: মাধব রুইদাস

ভারতীয় সীমানায় অবস্থানরত প্রায় প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় বিভিন্ন ট্রাইব গোষ্ঠী, জাতি এবং ধর্মীয় বিভিন্নতায় বসবাস করে, স্বভাবত‌ই তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ইতিহাস আছে, তার‌ই সাথে চলে আসে তাদের জীবনযাপনের রীতিনীতি, কালচার আর‌ও অনেক কিছু। 
     দেশের বৃহৎ এক জনগোষ্ঠী সামাজিকভাবে ঘৃনার স্বীকার হয়ে এসেছে, আর এই ঘৃনা হিন্দু ধর্মের আওতায় পড়ে ধর্মীয় তত্ব অনুসরন করেই হয়ে থাকে তা  নতুন করে বলতে লাগে না।

     যদি সাংস্কৃতির কথা বলি তো হিন্দু ধর্মের মোট জনসংখ্যার প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ জন্মভিত্তিক এবং চাপিয়ে দেওয়া জাতিগত পরিচয়ের কারনে অর্থ-সামাজিকভাবে শোষিত। আর প্রাচীনকাল থেকে পৌরানিক কাহিনীর প্রভাব খুবই স্বচ্ছন্দের সাথে এ-দেশীয় জনগোষ্ঠীগুলির হিন্দুকরন করে চলছে।

     প্রসঙ্গত হিন্দু সমাজের এররূপ রাজনীতির প্রভাব ঠিক এতটাই যে একজন ওরাও ( Oraon) আদিবাসী যার জীবনযাপনের সাথে তথাকথিত হিন্দুসমাজের বিন্দুমাত্র মিল নেই তারাও এই হিন্দুয়ানি রাজনীতির কারনে বেশ কিছু পশুচারণ (শুকর, গরু আরো অন্যান্য বন্য প্রানীর পশুপালন) ধর্মীয়-সামাজিক বিড়ম্বনার সৃষ্টি করবে বলে বাধ্য হয়ে রুজিরুটির এক অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার‌ই সাথে প্রচলিত বেশ কিছু খাবার, পোষাক এবং জীবনের একাংশ রীতিনীতি হিন্দু সভ্যতার আধুনিকীকরনে বলিদান দিতে বাধ্য হচ্ছে।

        দলিত বা শুদ্র সমাজেও এর প্রভাব ভীষনভাবে লক্ষ করা যায়, যে মুচি বা ডোম সম্প্রদায়ের দুর্গাপুজোয় ঢাক না বাজালে পূজো সম্পন্ন হয় না বলে দাবী করা হয় তাদের‌ই মন্দিরের (পূজো মন্ডপের) ভেতরে প্রবেশ করার অধিকার নেই, প্রবেশ করলে নাকি মন্দির অপবিত্র হয়। সেই বৈষম্যকে ঘিরে প্রতিবছর‌ই বেশ কিছু পূজো মন্ডপে জাতিগত রেশারেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সামনে আসে।

     কোনোরকমের কোনো ঐতিহাসিক থিওরি ছাড়ায় এ কথা স্বিকার করতে কেউ দ্বিধাবোধ করবে না যে, হিন্দু সভ্যতায় নিজেদের আধুনিক করে উক্ত দুই সমাজের কোনো উন্নতি হয় নি, বরং ক্ষতিটাই হয়েছে।

    এই প্রসঙ্গে বাবাসাহেব আম্বেদকর লিখেছেন " যদি তাদের ধর্ম‌ই তোমাদের ধর্ম হয়, তাহলে তাদের অধিকার এবং তোমাদের অধিকার এক‌ই হ‌ওয়া উচিত্। কিন্তু সেটা হয় কি ? যদি না হয়ে থাকে তাহলে কোন জিনিসের উপর ভিত্তি করে তারা বলে আমাদের অবশ্য‌ই হিন্দু থাকা দরকার এইরূপ লাঞ্ছনা ও অস্বিকৃতি সহ্য করেও?

   অর্থাৎ বাস্তব দৃষ্টিতে দেখলেও সেই এক‌ই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যাবে, খুব‌ই সাধারনভাবে সেইসব জনগোষ্টি সেই ধর্ম নিজ বিচার-বিবেচনা ও আত্মসম্মান রক্ষার্থে ত্যাগ করছে, সেটাই স্বাবাভিক যে ধর্ম জন্মসূত্রে সেই ধর্মের এক বিরাট জনসংখ্যাকে ধর্মীয় রীতিনীতির আচার-‌আচরন পালন করার অধিকার দেয় না, হীনমন্যতাই ভুক্তভুগি করে সামাজিক শোষনকে দৃড় করে মুষ্টিমেয় মানুষের সুবিধার্থে পরিচালিত হয় সেই ধর্ম থেকে বেরিয়ে আসার প্রবনতা খুব সামান্য শিক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। তার‌ই প্রতিচ্ছবি হিসাবে রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে অসুর স্বরন সভা।
যেখানে তারা নিজের মতো করে নিজের আত্মসম্মান, অস্তিত্ব ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ভিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের পরিবর্তে সমাজের প্রকৃত খেটেখাওয়া মানুষ তার শোষনের তিরস্কারে অঙ্গিবদ্ধ হচ্ছে। তাদের সমাজকে ঘিরে তাদের সমাজের ইতিহাস, অস্তিত্বকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। দুঃখ, বেদনা সবকিছুকে উজার করে এক ঐক্যবদ্ধ ও শোষনবিহীন সমাজ গড়বার শপথ গ্রহন করছে। রাজনীতি থেকে সামাজিক সচেতনতায় পরবর্তি প্রজন্মকে এই শোষনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার জন্য তৈরি করছে এবং সমস্ত রকম ষড়যন্ত্রকে একনিষ্ঠ প্রতিনীধিত্ব , শিক্ষা,জল,জঙ্গল,জমির অধিকারের প্রশ্নকে আরো মুখর করে তুলছে।
একটি সাম্যবাদী সমাজ তৈরির জন্য যা ভীষনভাবে প্রয়োজন, কাউন্টার কালচার বলা যেতেই পারে যেখানে শুরু থেকেই ওই অবহেলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দাবী ছিল সামাজিক আত্মমর্যাদা ও প্রতিনীধিত্ব।