click on images to know more about the Images
‘সাহিত্য বলতে সাধারণত গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রভৃতিকে বোঝায়। সাহিত্যের মাধ্যমে সাহিত্য সাধক মানব সমাজের বিচিত্র ঘটনাকে জীবন্ত করে পাঠক পাঠিকার সামনে তুলে ধরেন। এর ফলে পাঠক-পাঠিকার সামনে উন্মোচিত হয় মানব মনের বিচিত্র অনুভব, যা তাকে ভীষণ ভাবে আলোড়িত করে। বিশাল দেশ ভারতে রয়েছে প্রায় এক শত চল্লিশ কোটি মানুষ। আমরা জানি ভারতের সব মানুষ সম মর্যাদা সম্পন্ন নয়। এদেশে রয়েছে চতুর্বর্ণ প্রথা। যে প্রথার সব থেকে উপরে রয়েছে ব্রাহ্মণ তারপর ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য। এই তিনটি বর্ণ উচ্চবর্ণ বলে সমাজে পরিচিত। সবশেষে রয়েছে শূদ্র। এই শূদ্ররাই একদা অনার্য নামে পরিচিত ছিল। এরাই ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অর্থাৎ এরাই ভারতের বহুজন। অথচ দুঃখের বিষয় সংখ্যায় বহু হওয়া সত্ত্বেও এরা মাত্র পনেরো শতাংশ উচ্চবর্ণের দ্বারাশাসিত, শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, লজ্জিত, অত্যাচারিত। ইংরেজ এ দেশ থেকে চলে যাবার পরও এদের অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। ভারতের সংবিধানের জনক বাবা সাহেব ডঃ বি.আর. আম্বেদকরের কল্যাণে শূদ্র শ্রেণীর অল্প কিছু মানুষ শিক্ষিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এই সমাজের তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। তাই আজ ভীষণ প্রয়োজন শূদ্র সমাজ তথা ভারতের বহুজন সমাজের অনুন্নয়নের কারণগুলি চিহ্নিত করা। এই চিহ্নিত করণের একটা পদক্ষেপ হতে পারে বহুজন সাহিত্য নিয়ে গবেষণা ও চর্চা করা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে বহুজন সাহিত্য’নাম করণের পেছনে কী কারণ রয়েছে। এই প্রশ্নের একটা উত্তর দেওয়া আবশ্যক।‘বহুজন’দের জীবনযুদ্ধ, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, অবমাননা, হতাশা প্রভৃতি যদি কোনও ‘বহুজন’ শিল্পীর রচনায় গভীর দরদের সঙ্গে স্থান পায়, তবে সেই সাহিত্যকে ‘বহুজন’ সাহিত্য নামে চিহ্নিত করাই বাঞ্ছনীয়। যে বহুজনদের কথা তথা কথিত উচ্চ বর্ণের সাহিত্যিকদের লেখায় উল্লেখ যোগ্য ভাবে ফুটে ওঠেনি। আসলে কোন জনগোষ্ঠীর জীবন সংগ্রামের কথা কেবল সেই জনগোষ্ঠীর মানুষই সবচেয়ে ভালো ভাবে অনুভব করতে পারে। দূর থেকে দেখে কোন শিল্পীর পক্ষে প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। লিখতে শেখা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর সাহিত্য রচিত হয়েছে। একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু ‘বহুজন’ দ্বারা রচিত ‘বহুজন’দের সমস্যা সম্পর্কিত সাহিত্য প্রয়োজনের তুলনায় এখনও ভীষণ কম পরিলক্ষিত হয়। এর একটা অন্যতম কারণ বহুজন সমাজের নিজস্ব সম্পাদিত পত্র-পত্রিকার অপ্রতুলতা। যতটুকু পত্র-পত্রিকা এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, তা বহুজন সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছতে পারেনি নানা কারণে। তাই ইন্টারনেট -এর এই যুগে শোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে বহুজন সাহিত্যকে প্রচার করাই সবচেয়ে যুক্তি যুক্ত মনে হয়। জ্যোতিরাওফুলে রচিত “গোলামগিরি’থেকে বহুজন সাহিত্যের যেসূচনা, তা আজ এক বিশাল পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। আম্বেদকর রচনাবলী দ্বারা ভীষণ ভাবে প্রভাবিত হয়ে মারাঠি ভাষায় রচিত বহুজন সাহিত্য বেশ সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষায় হরিচাঁদ – গুরুচাঁদ চরিত রচনার মধ্য দিয়ে বহুজন সাহিত্যের যে পথ চলা, তা আজও অক্লান্ত ভাবে অগ্রসরমান। বহুজন সাহিত্যের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে এবং নতুন লেখক -লেখিকাদের উৎসাহিত করতেই ‘বহুজন সাহিত্য’ নামক ওয়েভসাইটের জন্ম। আসুন আমরা সবাই মিলে একে সাফল্য মন্ডিত করি।