click on images to know more about the Images

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

Author: রাজু দাস

{ পথের পাশে ঘরের লাগোয়া চায়ের দোকানের সরঞ্জাম। সময় সকাল। দেওয়ালে আম্বেদকর যোগেন্দ্রনাথ মন্ডেলের ছবি ।  মঞ্চ অথবা পথনাটক  }
রাজেন - (ঘরে ঝাড়ু দিতে দিতে গান গান করবে )
মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে ঝেটিয়ে বিদেয় কর,
যতো আছে মনুবাদি খেংড়া মেরে
দল থেকে দূর কর -
মার ঝাড়ু মার -    -    -    -।
  হ্যাঁগো টোনার মা, চিনির কৌটোটা কোথায়  ?
রমা - ( নেপথ্যে ) দ্যাখো আছে কোথাও । আমি তো আর ট্যাকে গুজে রাখিনি।
রাজেন - না বলছিলাম তুমি কি দেখেছো ?
রমা  - কি করে দেখবো !  আমি তো ছোটবেলা থেকে চিনি চা খেয়ে বড় হইনি। হয়েছি আখের গুড় দিয়ে রুটি আর লংকা দিয়ে পান্তাভাত খেয়ে ।
রাজেন - (চাপা কন্ঠে ) তা ঠিকই বলেছো। লংকা না খেলে কেউ তোমার মতো কন্ঠস্বরের ডংকা বাজাতে পারতো না।
রমা - ( প্রবেশ ) কথাটা ঠিক বুঝলাম না। আবার বলতো -
রাজেন - বুঝলে না?
রমা - না বুঝিয়ে বলো ?
রাজেন - বললাম মতুয়ারা পান্তাভাত আর লংকা খায় বলেই ডংকা বাজিয়ে এমনি করে হরিবল হরিবল বলে নাচতে পারেন। ( নাচবে )
রমা - আচ্ছা দাসবাবু,  মতুয়ারা অতো জোরে শব্দ করে ডংকা কাসর বাজায় কেন গো  ?
রাজেন - অবুঝ মানুষদের জাগাতে ।  রমা, তুমি মন দিয়ে শুনলে ঠিক বুঝতে পারবে মতুয়াদের ডংকা কাসর এক সঙ্গে বলে - জাগরে জাগরে জাগ, জাগরে দলিত, জাগরে শোষিত, জাগরে জাগরে  জাগ।
রমা - আজকে কি বার মনে আছে তো?
রাজেন - আছে। আজকে রবিবার। স্কুল, অপিসের রিকশার মানথলি নেই। নাইট ডিউটিতে যাওয়া নেই।সপ্তাহে একটি মাত্র  ছুটির দিন তা কি ভুলতে পারি ?
রমা - না বলছিলাম, তোমার মাথায় তো শুধু আম্বেদকর আর আম্বেদকর। তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি আজকে কিন্তু  রেশন তুলতে হবে, কেরোসিন তেল তুলতে হবে ।
রাজেন - কিন্তু  - বাজারে যাবার আগে বাবুদের ধরতে না পারলে দলিত পত্র পত্রিকার বাকি টাকা পয়সা আর আম্বেদকর জয়ন্তীর চাদা আদায় করতে পারবো না যে । নইলে  পরে দেখা হলেই বাবুরা বলবেন - আর একটু সকালে অথবা রাতে আইলেন না ক‍্যান মন্ডলমশাই ।  আমি  এখন খুব ব‍্যস্ত । শুনেন এর পরে আর কোনদিন ঐসব দলিত পত্র পত্রিকা আর চাঁদার বিল গছাতে আসবেন না। এমনিতেই সারা বছর বারোয়ারি পুজোয় চাঁদা দিতে দিতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছি।
রমা - তুমি বললে না কেন, উচ্চবর্ণের বকাটে ছেলেরা চাদা চাইলে দিতে পারেন আর আম্বেদকর জয়ন্তীর চাদা আমি চাইলেই গড়িমশি করেন। এতো অকৃতজ্ঞ আপনি ?
রাজেন - বলিতো । জানো, এইসব কারনেই বাবাসাহেব আম্বেদকর শেষ জীবনে আফসোস করে তাঁর আপ্তসহায়ক নানকচাঁদ রত্তুকে বলেছিলেন - জানো রত্তু, আমার সমাজের শিক্ষিত অর্থবান মানুষেরাই আমাকে প্রতারিত করেছে সবচেয়ে বেশি । তাই তুমি  আমার অন্তজ সমাজের সকলকে বোল,আমি সারাজীবন কঠিন  লড়াই করে   দলিত মুক্তি  আন্দোলনের যে ক্যারাভানটা  যতটা  এগিয়ে এনেছি সেটাকে যেন তারা আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পেছনের দিকে নয়। বলো রত্তু, এই কথাটা তুমি আমার দলিত ভাই বোনদের বলবে তো ? বলো ! ( রুদ্ধকন্ঠে )
রমা - এসব জানার পরেও দলিত মানুষেরা কি এতটুকু সচেতন হয়েছেন ?
রাজেন :  না হননি। বরঞ নিজের ব‍্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির জন‍্য ব্রাহ্মণ‍্যবাদিদের গোলামে পরিনত হয়েছে ।
রমা : তাহলে যারা সংরক্ষণের কোটায় লেখাপড়া শিখে চাকরি পেয়ে  ফুটানি করে,বাবুগিড়ি করে তাদের কাছে বেহায়ার মতো বইপত্র বিক্রি  করতে যাও কেন ?
রাজেন - যাই মানবিক তাগিদে এবং  গৌতম বুদ্ধ ও আম্বেদকরের চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করতে ।
রমা - এতোদিন ঐ সব আদর্শে চলে তুমি কি পেয়েছো বলতো ?
রাজেন - ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার অধ্যাপক  হতে না পারলেও সরকারি চাকরি তো একটি পেয়েছি।
রমা - হু : সরকারি চাকরি  ! ঐ শুনতেই যা ভালো লাগে অথচ করোতো নাইট ওয়াচম্যানের কাজ । খাস বাংলায় যাকে বলে রাতের প্রহরি।
রাজেন - তা সুন্দরী, এই রিকশাওয়ালা,নাইট ওয়াচম্যানকে যদি এতই অপছন্দ তাহলে এতোগুলো বছর আমার সঙ্গে না কাটিয়ে কোন প্লেনের পাইলটের সাথে উড়ে যেতে পারতে  !
রমা - না তা পারতাম না। কারন আমার  কামারশালার শ্রমিক কষ্টজীবী বাবা  যখন  ছয়টি মেয়ে ও তিনটি ছেলের দায়দায়িত্ব নিয়ে দিশেহারা  হয়ে পড়ছিলেন  । ঠিক তখন আমি  স্কুলের পড়া বন্ধ করে রেডিমেড ছায়া ব্লাউজ সেলাই করে বাবাকে সাহায্য করেছি । প্রয়োজনে কামারশালায় তিন কিলো ওজনের হাতুরি পিটিয়েছি, আগুনে পোড়া লাল টুকটুকে গরম লোহাতে । এমন একটি কামারের মেয়েকে প্লেনের পাইলট বিয়ে করতে চাইবে কেন ?                  রাজেন : - দু:খ‍্য করোনা । আমি  প্লেনের পাইলট না হলেও রিকশার পাইলট হিসেবে তোমাকে বিনাপনে বিয়ে করেছিলাম বলো ?
রমা : হ‍্যা, সেদিনটি ছিল  বাবাসাহেব আম্বেদরের শুভ জন্মদিন । রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করলে আমাকে ।
রাজেন : আচ্ছা রমা! আমার সঙ্গে বিয়ের  আগে তুমি যে নিজের বিয়ের পাত্র খুজতে গিয়েছিলে সে গল্পটা   আর একবার বলো না গো ?
রমা : ধ‍্যাত, কতবারই তো বলেছি ।
রাজেন :- না -এখন আর একবার বলো । ( আবদার )
রমা :- পাচঁ পাঁচটা পাত্রপক্ষ জানিয়েছিল আমাকে দেখতে আসবে। এই কথা শুনে বাবা মাকে বললাম - আমিই নিজে কাকিকে নিয়ে পাত্রের বাড়িতে  মিষ্টি মিঠাই খেয়ে পাত্র সহ সেই পরিবাটিকে দেখে আসবো । তাই গিয়েছিলামও । কিন্তু দারুণ মজা হয়েছিল শেষ পাত্রটিকে দেখতে গিয়ে ।
রাজেন : এই কি মজা হয়েছিল বলো না ?
রমা : পাত্রটিকে বাড়িতে না পেয়ে  ছুটলাম বাজারে। তার টেলারিং সপে যেতেই ছেলেটি মেসিন থেকে  ওঠে দে দৌড় - দে দৌড় ( দুজনেই হাসে  )
রাজেন :  তারপর বিয়ের কিছুদিন পরে তিনখানা ট‍্যাক্সির মালিক রমেশ চ‍্যাটার্জী তোমাকে পুনরায় বিয়ে করে পালাতে চেয়েছিল, তুমি গেলে না কেন?
রমা : পালানোর মনোবৃত্তি ছিল না বলেই পালাইনি।
তাছাড়া  আমার মা একটা কথা প্রায়ই বলতেন, সংসারে যতই  অশান্তি  অভাব অনটন আসুক না কেন নিজের চরিত্রে কখনো যেন কলংকের দাগ না লাগে ।
রাজেন -  তুমি এতোই পয়া যে তার কিছুদিন পরেই আমি  বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য সংস্থায় নাইট ওয়াচম্যানের চাকরিটা পেয়ে গেলাম। বেশ সুখেই কাটছিল আমাদের দিনগুলি । ভাবলাম এবার থেকে আর রিকশা চালাতে হবে না। কিন্তু হঠাৎ আমাদের কাছে পূর্ব বাংলা থেকে  উদ্বাস্তু হয়ে মা বাবা বোন একবস্ত্রে এসে হাজির হয়েছিল। আরো আনন্দে খুশিতে  আমাকে পুনরায় রিকশার প্যাডেলে পা রাখতে হলো। তোমাকে  বারান্দার এক পাশে চায়ের দোকান দিতে হলো ।
রমা -  জানো, এতো অভাবের মধ্যে থেকেও তোমায় নিয়ে আমার গর্ব হতো, তুমি নিজের কথা না ভেবে সমগ্র দলিত মানুষের সুখ দু:খ সমস্যার কথা ভাবো।
রাজেন : আমি একা ভাবলেতো হবেনা রমা ।
সমাজ, সরকারকেও ভাবতে হবে। তা না হলে যে দলিতমুক্তি আসবে না  !
রমা : আমি কিন্তু বিশ্বাস করি একদিন না একদিন আদ্বেদকর দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুবক যুবতীরা দলিত মুক্তি আন্দোলনে জয়ী হবেই হবে।
রাজেন : তাই যেন হয় রমা । তাই যেন হয় ।
রমা : মাঝে মাঝে তোমাকে নিয়ে  আফশোষ হয়
রাজেন - এখন আর আফশোষ করে কি হবে ? আমি জানি, আমি দিনে রিকশা চালাই এবং রাতে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করি বলে আমার আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কেউ আমাকে সম্মান করে না। ভালোবাসে না। ঘেন্না করে । কিন্তু আমি কি করবো, উদ্বাস্তু হয়ে  দারিদ্রের চাপে বেশি দূর লেখাপড়া করতে পারিনি। সেটা কি আমার দোষ ?
রমা - তোমার দোষ নয়, তা জেনে বুঝেই তো তোমার সাথে আমার বাবা মা বিয়ে দিয়েছেন ।
রাজেন : সেজন্য  তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ মহারানি।
রমা :  জানো  মাঝে মাঝে ভাবি তোমার সহকর্মীরা একই চাকরি করে দুতালা বাড়ি করে ফেলেছে আর তুমি দলিত মুক্তি আন্দোলন করে দেশ উদ্ধার করছ।
রাজেন - করছি বেশ করছি । সমাজের ঋণ শোধ করাই আমার জীবনে মূল লক্ষ। (চিৎকার করে )
রমা - এদিকে আমাদের সংসারটা যে ভেসে যাচ্ছে সে খেয়াল আছে ?
রাজেন - আছে বলেই তো নাইট ডিউটি থেকে ফিরে, রিকশা নিয়ে বেরোবার আগে এই চায়ের দোকানটা খুলি। ঝারপোছ করি। উনুনে দুধ গরমজল চাপাই।
রমা - হ্যা তুমি শুধু দোকানটাই খোল । সংসারের সমস্ত কাজের মাঝেই  সকাল বিকাল বেচাকেনা আমাকেই করতে হয় । শোন দুদিন আগে  সমীর চক্রবর্তী মশাই এসেছিলেন  দলিত বইপত্রের টাকা দিতে। উনি বলে গেছেন একসেট বাংলা আম্বেদকর রচনবলি এনে রাখতে।
রাজেন - বড় ভালো মানুষ সমীরবাবু , পথে দেখা হলেই দলিত আন্দোলনের খোঁজ খবর নেন।
রমা :  হ্যাঁ, প্রত্যেকদিন বিকেলে পার্কে পদচারনা করে ফেরার পথে আমার দোকানে বসে চা বিস্কুট খান, মেয়েদের পড়াশোনার খোঁজ খবর নেন। মেয়েরাও কখনো সখনো ওনার কাছ থেকে অংক ইংরেজীটা  শিখে নেয়।
রাজেন : হাইস্কুলে ভালো শিক্ষক হিসেবে খুব সুনাম ছিল সমীরবাবুর । পাড়ার প্রত‍্যেকের বিপদে আপদে পাশে থাকেন । এবার টাকাটা দাও তো বাজার করে নিয়ে আসি?
রমা - ও টাকা আমি মুদি দোকানে দিয়ে  দিয়েছি। অনেক টাকা বাকি ছিল। বড্ড তাগাদা করছিল।
রাজেন - তাগাদা করেছে বলে  টাকাটা  দিয়ে দিলে ?
রমা - দিয়েছি বেশ করেছি । তুমি যে প্রত্যেক মাসে মায়না থেকে দু একশো টাকার বইপত্র কিনে বিক্রির নাম করে লোকেদের বিনে পয়সায় বিলোচ্ছো, দলিত মিটিংয়ের জন্য চাঁদা দিচ্ছো তখন নিজের ধার দেনার কথা মনে থাকে না !
রাজন - না থাকে না। তোমাকে বারণ করছি আর কোনদিন বই বিক্রির টাকায় হাত দেবে না।
রমা : কেন হাত দেব না, বিয়ের পর থেকে আজ পযর্ন্ত  কতটুকু সুখ শাস্তি দিয়েছ আমাকে। ছোটবেলা বেলা থেকে আজ পযর্ন্ত শুধু অভাব আর অভাবই দেখছি ।
রাজেন : তোমার অভাব মেটানোর জন্য আমি অসৎ পথে রোজগার করতে পারবো না।
রমা : আমাদের তিন তিনটি মেয়েকে কোনদিন ভালো জামা প্যান্ট কিনে দিয়েছো। ভালো স্কুলে পড়াতে পেরেছো ?
রাজেন - না পারিনি। সে জন্য আমার এতটুকু লজ্জা নেই কারন আমি জানি আমার চাইতে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ভারতে  অনেক বেশি। যাদের একবেলাও ভাত জোটে না। সেখানে আমরা তো দুবেলা রেশনের চাল আটা খেয়ে বেঁচে আছি না কি !
রমা - কথায় কথায় শুধু ঞ্জানের বুলি। ক'দিন যাবৎ মেজমেয়েটা জ্বরে বিছানায় পড়ে আছে, সে খেয়াল আছে ! আমার হয়েছে যত জ্বালা।  চৌধুরী গিন্নির কাছে পঞ্চাশ টাকা ধার চেয়েও পেলাম না।
দুপুরে কি যে রান্না হবে তারও ঠিক নেই।
রাজেন - কই এসব কথা আমাকে আগে বলোনি তো?
রমা - বললে কি এমন লাভ হতো !  তুমি তো দলিত মুক্তির জোয়াল কাধে নিয়ে এক্ষুণি চাষ করতে বেরুবে ।
রাজেন - ঠিক আছে, আমি এক্ষুণি ডাক্তার শ্যামল বালার কাছ থেকে বাকিতে ঔষধ এবং পাড়ার কারো কাছ থেকে কিছু টাকা  ধার করে বাজার নিয়ে আসছি ( যাবার উদ্দোগ )
রমা - দেবে না, কেউ তোমাকে আর টাকা ধার দেবে না। তোমাকে দেখলেই সবাই ভয়ে পালায়। তারা ভাবে এই বুঝি আবার দলিত পত্র পত্রিকা গছাবে। কেন যে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যাও বুঝি না।
রাজেন - তোমার আর বুঝে কাজ নেই। তুমি আমার বইয়ের ব্যাগ আর আম্বেদকরের ছবিটা দাও। ঐযে গো, যেটা বিশ্বাসবাবুর জন্য কিনে এনেছি।
রমা - দিনরাত কেবল আম্বেদকর আর আম্বেদকর। আম্বেদকর কি তোমার বাবা?
রাজেন - ( চিৎকার করে ) হ্যাঁ আমার বাবা । তিনি শুধু আমার বাবা নন, তিনি সকল দলিতজনের বাবা
রমা - এতোদিন কিছু মানুষকে মদ গাজার নেশায় উন্মাদ হতে দেখেছি কিন্তু আম্বেদকরের নামে উন্মাদ হতে একমাত্র তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে  আমি দেখিনি। এক্ষুণি  তোমার বাবাকে আমি আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলবো- ( ছবিটাকে ছুড়ে ফেলার জন্য হাতে নিয়ে উচু করে  )
রাজেন - না রমা না , ( ছবিটা রমার হাত থেকে কেড়ে নেয় ) অমন কথা তুমি আর কোনদিন মুখেও এনো না ।  ওগো তুমি আমাকে দু'ঘা মারো বকো, গালমন্দ করো তাও আমি সহ্য করবো কিন্তু আমার  বাবা সাহেব আম্বেদকরকে তুমি অপমান করো না।
রমা - অপমান  করেছি বেশ করেছি । ঐ ফটোর আম্বেদকর আমার স্বামীকে পাগল করেছে । আমার সংসারটাকে তছনছ করে দিয়েছে। ওঁকে আমি ঘেন্না করি (কাঁদে)
রাজেন - কি বললি ! সারা পৃথিবীর লোক যাকে জ্ঞানবান হিসাবে  সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে সেই দলিত জনক আম্বেদকরকে তুই ঘেন্না করিস ?
রমা - হ্যাঁ হ্যাঁ ঘেন্না করি। ঘেন্না করি ঘেন্না করি ।
রাজেন - চুপ কর বলছি নইলে এক থাপ্পড়ে তোর মুন্ডু আমি ঘুরিয়ে দেব বলে দিলাম।
রমা - মারো আমাকে মারো, তবু আমি বলবো আম্বেদকর আমার শত্রু, আমার সতিন -
রাজেন -  তবে রে । ( মারার জন্য ডান হাত ওপরে তুলতেই রমা পাগলের মতো হেসে ওঠে। রাজেন মন্ডলের হাত থেমে যায়  )
রমা - হা: হা: ( হাসি) ঐ দেখো বাবাসাহেব আম্বেদকর তোমার মতো নারীদ্রোহীকে দেখে হাসছেন। আর ভাবছেন তোমার মতো মানুষের জন্যেই কি উনি নারী মুক্তির কথা লিখেছিলেন ? হিন্দুকোড বিল পাশ করাতে পারেন নি বলে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ?  কি হলো একথা শোনার পরে তোমার   হাত থেমে গেল কেন! মারো মারো আমাকে !
রাজেন - ওগো তুমি  চুপ করো , তোমাকে মারতে চেয়ে আমি ভুল করেছি ।
রমা - তোমাদের মতো পুরুষের যত হম্বিতম্বি, গায়ের জোর সব নারীর ওপর। ছি : ছি: এতো বছর  আম্বেদকর - যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের আদর্শে চলেও তুমি  নিজেকে শোধন করতে পারলে না ? ছি: ছি:
রাজেন : রমা - রমা - বললাম তো আমি ভুলে করেছি
রমা :  চুপ করো । আর একটি  কথা শোন, দলিত বইপত্র শুধু তুমিই পড়ো না, আমিও পড়ি ।  আমি চায়ের দোকানে বসে দলিত পত্র পত্রিকা বিক্রি করি । এমন কি আমাদের মেয়েরাও তাদের বন্ধুদের কাছে আম্মেদকরের দর্শণ প্রচার করে ।
রাজেন - রমা! তুমি মনে মনে বাবাসাহেবকে এতোটা শ্রদ্ধা করো তা আমি বুঝতেই পারিনি । তুমি  আমাকে ক্ষমা কর। আমি আর কোনদিন তোমাকে মারতে চাইবো না। বকবো না । এবার একটু হাসো।
রমা -  ( হেসে এবং ফটোটাকে নিয়ে নিজের কপালে ঠেকিয়ে  ) তাহলে এই  আম্বেদকরের ছবিকে ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করো - সমস্ত নারীকে সম্মান করবে?
রাজেন - এই ছবিতে স্পর্শ করে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আর কোনদিন কোন নারীকে অসম্মান করবো না। ( দুজনেই হেসে ওঠে )
রমা - এবার একসঙ্গে বলো - জয় দলিতজনক বাবাসাহেব আম্বেদকরের জয়। জয় ভারতের জয়। আপনারাও সমবেত কন্ঠে বলুন - জয় ভীম- জয় ভারত। জ য় ভী ম - জ য় ভা র ত
( দুজনের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উপরে ওঠে )
=    =     =    =      =     =     = = =